দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও হল সংসদসমূহের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন হবে আগামী বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে। কোনো ছাত্রসংগঠন এতে অংশ নিতে পারবে না। কোনো ছাত্রসংগঠনের ব্যানারেও কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না। একে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রথম ধাপ বলে মনে করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদসমূহের নির্বাচন হবে নির্দলীয়ভাবে। কোনো প্রার্থী কোনো ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দল ও সেই দলের নেতা-নেত্রী এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত কোনো ব্যক্তিত্বের নাম কোনোভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ তা করলে তার প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। এ দাবিতে প্রার্থী ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে বৈরী ভূমিকা পালন করলে তার ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এক থেকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কার করা যাবে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী ছাত্রত্ব বাতিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ রাজনীতিমুক্ত করার জন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। পরবর্তী ধাপে সকল সরকারি-বেসরকারি মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা হবে। এ নির্বাচনও হবে অভিন্ন প্রক্রিয়ায়- অরাজনৈতিকভাবে। স্কুল পর্যায়ে নির্বাচনের বিদ্যমান ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে রহিত করা হবে। কলেজ পর্যায়েও সর্বাধিক পাঁচ বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। তারপর এ ব্যবস্থা রহিত করা হবে।
জানা যায়, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ রাজনীতিমুক্ত করার পরিকল্পনা থেকেই নির্দলীয় ও যেকোনোভাবে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখা হচ্ছে। জাতীয় কোনো রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক নেতার ছবি ও নাম ব্যবহার করা যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতার নামে স্লোগানও নিষিদ্ধ। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নির্বাচনী কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। কোনো জাতীয় রাজনৈতিক দল, আঞ্চলিক ও স্থানীয় কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী, সংগঠকও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারবেন না। উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ যেই শিক্ষার্থী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন, তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিমুক্ত রাখার দাবি বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেই সরকারের কাছে করা হয়েছে। বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল নভেম্বরের গোড়ার দিকে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ দাবি করে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত রাখতে চায়। ঢাকা শহরের সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সর্বাত্মকভাবে অংশ নেন। তাদের অনেকে প্রাণ হারান, আহত হন।
পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাগত, আবাসন ও খাবার ব্যবস্থা, খাবারের মান, যাতায়াত, লাইব্রেরি, পুস্তক ও প্রাসঙ্গিক সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন। প্রতি মাসে তারা সাধারণ শিক্ষার্থী, হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিটিং করবেন। সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করা এবং সেসবের কতটা সুরাহা হয়েছে, কেন হয়নি, কীভাবে দ্রুত করা হয় প্রভৃতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা, মতবিনিময় করবেন। তাতে শিক্ষক প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে কোনো মিছিল, সভা-সমাবেশ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে যোগ দিতে পারবেন না। কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধানও থাকছে।
                           
                           
                            
                       
     
  
 


 ঠিকানা রিপোর্ট
 ঠিকানা রিপোর্ট  
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                
