৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিপার উদ্যোগে আয়োজিত চারদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হয় ২৭ জুলাই। শেষ হয় ৩০ জুলাই। বিপার ৩০ বছর পূর্তি উৎসব উদযাপন করা হয় ‘চিয়ার্স টু বিপা’স থার্টি
ইয়ার্স’ শিরোনামে। সংগঠনটির সুদীর্ঘদিনের পথচলায় যারা সঙ্গে ছিলেন, পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন তারা উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ ৩০ বছরে বিপা থেকে অনেক শিক্ষার্থী গান, নাচ, আবৃত্তি, বাদ্যযন্ত্র বাজানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। বিপার এই আয়োজনে তাদেরসহ সবাইকে অংশগ্রহণ করার জন্য বিপার তিন কন্যা ও তিনজন গুণী শিল্পীর পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের অনেকেই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

২৭ জুলাই বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি আওলাদ হোসেন খান ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এ সময় ওড়ানো হয় বেলুন।
বিপার ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান উপলক্ষে নিউইয়র্কের শিল্পীরা ছাড়াও বাংলাদেশ ও অন্যান্য স্টেট থেকে কয়েকজন আমন্ত্রিত অতিথি যোগ দেন। সেই তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশ থেকে তিনজন আর প্রবাস থেকে দুজনসহ মোট পাঁচজন শিল্পী। বিপার শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল বিশেষ পর্ব। প্রবাসের শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আসা আরজিন কামাল ও তার দল এবং বিরশা চট্টোপাধ্যায়ের ব্যান্ড কোয়াট্রেট।
জ্যামাইকার পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে অনুষ্ঠানে ছিল নানা পর্ব ও বর্ণিল আয়োজন। বিপার নান্দনিক আয়োজন অনুষ্ঠানে আগত দর্শকদের মুগ্ধ করে।

২৭ জুলাই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে ছিল নারী, ট্রান্সজেন্ডার, নন-বাইনারি শিল্পীদের সমন্বয়ে গঠন করা ব্যান্ডের ফোগাঅ্যাজুল এনওয়াইসির সংগীত পরিবেশনা। ‘বিপা এবং আপনি’ নামের পর্বে ছিল বিশিষ্ট ব্যক্তিদ্বয়ের কথামালা। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা সাতটায়।
২৮ জুলাই সন্ধ্যা আটটায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে ছিল শিশু উৎসব। বিপার শিল্পীরা এতে অংশ নেন। সাবেক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে লিগ্যাসি প্যারেড, ফেস পেইন্টিং পর্ব ছিল। ছিল কটন ক্যান্ডি, ফেস পেন্টিং পর্বও।
২৯ জুলাই তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল পাঁচটায়। এদিন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য ‘তাসের দেশ’ মঞ্চস্থ হয়। এতে কোরিওগ্রাফি, পোশাক পরিকল্পনা ও ডিজাইন করেন বিপার পরিচালক এ্যানি ফেরদৌস, সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সেলিমা আশরাফ, সংগীত আয়োজন ও রেকর্ডিংয়ে ছিলেন নাদিম আহমেদ। তাসের দেশের মাস্ক নির্মাণ করেন জিল রাইনিয়ান। নাটকটি দেখতে টিকিট মূল্য ছিল ১০ ডলার। নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর অনুষ্ঠিত হয় গানের অনুষ্ঠান। এই পর্বে ছিল আরজিন অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের পরিবেশনা। সংগীতাষ্ঠান ছিল সবার জন্য ফ্রি। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অতিথি যোগ দেন। ওইদিন সন্ধ্যায় দেশ বন্দনার গান ছিল। বিপার অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ দিন পর্যন্ত ছিল ক্রাফট এবং আর্টস প্রদর্শনী। সেখানে ছিল বিভিন্ন পণ্যের খাবারের স্টল। ৩০ জুলাই বিপার ৩০ বছরের অনুষ্ঠানের শেষ দিনে বিকেল পাঁচটায় ফুল, কুঁড়ি এবং আমরা নামে সংগীত পরিবেশন করা হয়। গানের পর ছিল কত্থক ও ভরত নাট্যম ধ্রুপদি ছন্দ। সন্ধ্যা আটটায় ছিল ‘লেটস টক’ নামের নৃতানুষ্ঠান। এরপর ছিল বিরশা চ্যাটার্জি কোয়ার্টেটের পরিবেশনা। ৩০ জুলাইয়ের প্রথম পর্বের দুটি অনুষ্ঠানের টিকিট মূল্য ১০ ডলার হলেও অন্য কোনো পর্বের টিকিট মূল্য ছিল না।
অনুষ্ঠানে সহায়তা করে এনওয়াইসি কালচারাল অ্যাফেয়ার্স। উল্লেখ্য, বিপা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় এনওয়াইসি কালচারাল অ্যাফেয়ার্স তাদেরকে গত বছর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য অনুদান দিচ্ছে ও সহায়তা করে আসছে।
বিপার পরিচালক এ্যানি ফেরদৌস বলেন, হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৩০ বছর পার করেছে বিপা। পহেলা বৈশাখ আমাদের বছর পূর্তি হয়। সেই হিসাবে ২০২৩ সালের এপ্রিলে ৩০ বছর পূর্তি করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের জন্য কাজ করার। শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা করার। আমরা দিনের পর দিন তা করে আসছি। আমরা চেষ্টা করেছি এখানে জন্ম নেওয়া ও ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আসা সন্তানদের সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে। সেটি আমরা সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছি। কারণ এখানে যারা থাকেন, তাদের কেবল ইংরেজি শিখলে হবে না, পাশাপাশি বাংলা ভাষাও জানতে হবে। দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানতে হবে। এখানে যারা লেখাপড়া করে, তাদেরকে লেখাপড়ার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস করতে হয়। আমরা আশা করছি, অতীত ও বর্তমানের মতো আগামী দিনেও প্রবাসী অভিভাবক ও নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা আমাদের সঙ্গে থাকবেন।


ঠিকানা রিপোর্ট


