গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়ে রাজনীতি করছে জামায়াতে ইসলামী। এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তারা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এই লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক বলেই মনে করছে তারা। ইসলামি আদর্শ, নীতি, চিন্তা-চেতনার ধারক ও এগুলো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে জামায়াতে ইসলামী কাজ শুরু করে। ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশেই তারা সংগঠন করে ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। সফল হয়নি কোথাও। ভারতবর্ষ থেকে তারা বিতাড়িত হয়। এমনকি পাকিস্তানেও জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম আযমকে বাংলাদেশ আসার ও জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে সংগঠিত হয়ে তাদের নীতি-আদর্শ বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সক্রিয় সহযোগী ছিল তারা। স্বাধীনতার পূর্বলগ্নে অধ্যাপক গোলাম আযম সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ করে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রম চালান। সেই গোলাম আযম ও তার রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ১৯৮৬ সালে নির্বাচনী সমঝোতা করেছিলেন শেখ হাসিনা। ইতিহাসের নির্মমতায় এখন সেই শেখ হাসিনাকেই জামায়াতের সহযোগিতা প্রত্যাশা করতে হচ্ছে। রাজনীতির কঠিন হিসাব-নিকাশে পারদর্শী জামায়াত শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলার বিপক্ষে নয়। ভবিষ্যতে শেখ হাসিনার নির্বিঘ্ন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও নিরাপদ অবস্থানে বাধা হবে না জামায়াত। বিনিময়ে তারা ভারতের সঙ্গে আস্থাশীল সম্পর্ক গড়তে শেখ হাসিনার সক্রিয় সহযোগিতা চায়। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক বা পরে নির্বাচিত সরকার কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণার ক্ষেত্রে ভারত সরকার যাতে প্রতিবন্ধক না হয়, তার নিশ্চয়তা চায় তারা। ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবেই পাকিস্তান ও জামায়াতের বিরোধী। কূটনৈতিক শিষ্টাচারে সম্পর্ক না থাকলেও তারা এই দুই শক্তির পক্ষে নয়। যখন যে দলই রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকুক, এই নীতি থেকে বিচ্যুত হয় না কেউ।
শেখ হাসিনার বিদায়ের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় যে পরিবর্তন এসেছে, তার সুযোগে জামায়াতে ইসলামী তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য, উদ্দেশ্য পূরণে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণাসহ সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে তারা। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তার সম্ভাব্য ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দিকও গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো বিভিন্ন কারণে বিভক্ত হলেও এ প্রশ্নে অনেক কাছাকাছি, অভিন্ন অবস্থানেও চলে আসতে পারে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় রাজনীতিতে বিশ্বাসী। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিএনপির এই রাজনীতির ভক্ত, অনুরক্ত। কিন্তু তারাও ইসলামের নামে ধর্মান্ধতা, ধর্ম নিয়ে রাজনীতির পক্ষে নন। উদার গণতান্ত্রিক মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিএনপি দলগতভাবে এবং এর নেতাকর্মীরা উগ্র ধর্মীয়, জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনার ধারক নন। তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পক্ষে থাকবেন না বলেই জামায়াত নেতাদের বৃহত্তর অংশই মনে করেন। বিশেষ করে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণাকে দেশের মানুষ মেনে নেওয়ার পর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণার বিপক্ষে তারা অবস্থান নেবেন বলেই মনে করেন অনেকে। ইসলামি দলগুলোর মধ্যেও এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। এ বিষয়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে জামায়াত। এ ব্যাপারে ইসলামি দলগুলোর সবাই একমত হলেও কৌশলগত এবং নানা দিক নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। এ কারণে কিছু সময়ও নেওয়া হতে পারে। নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামি দলগুলোর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের বিষয়ই সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।