মাসিক চক্র প্রাকৃতিক ও অপরিহার্য প্রক্রিয়া যা নারীর দেহকে গর্ভ ধারণের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। প্রজননের জন্য মাসিক অপরিহার্য। তবে অনেক নারীর ক্ষেত্রে মাসিক চলাকালীন ত্বকে নানান সমস্যা দেখা দেয়।
প্রধানত হরমোনের তারতম্যের বিভিন্ন পর্যায়ের কারণে এরকম হয়ে থাকে। সঠিক যত্ন নিলে ত্বকের সমস্যার সমাধান করা যায়।
এই বিষয়ে ভারতীয় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ‘কস্মেটোলজিস্ট অ্যান্ড হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন’ ডা. উর্বি পাঞ্চাল বলেন, “মাসিক চক্রের বিভিন্ন ধাপ ত্বকে বিভিন্ন রকম প্রভাব রাখে।”
“মাসিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে হরমোনের তারতম্য ঘটে যা ত্বকে নানান রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই নারীদের এই বিষয়ে ধারণা থাকা প্রয়োজন”- হেল্থশটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
মাসিক চক্রের চারটি পর্যায় ত্বকের ওপর প্রভাব রাখে।
মাসিক সাধারণত তিন থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়।
ডা পাঞ্চাল বলেন, “এই সময়ে হরমোনের মাত্রা বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন তুলনামুলক কম থাকে, যা ‘একনি ব্রেকআউট’য়ের সম্ভাবনা বাড়ায়। ফলে ব্রণ, ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস দেখা দেয়।”
অনেক নারীর ক্ষেত্রে এই সময় ত্বক সংবেদনশীল হয়ে যার এবং জ্বলুনি ও লালচেভাব দেখা দেয়।
মাসিকের পরে ফলিকিউলার ধাপ হল, যখন ডিম্বোস্ফোটন শুরু হয়। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে ত্বক উন্নত ও উজ্জ্বল দেখায়। এই অবস্থায় মাসিক শেষ হওয়ার পর থেকে পরবর্তি ডিম্বোস্ফোটন পর্যন্ত চলে।
এই সময়ে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে ও ‘ওভারিয়ান ফলিকল’ পরিপক্কতা লাভ করে। এই সময়ে ত্বকে শুষ্কতার সমস্যা, মলিনতা ও নির্জীবভাব দেখা দেয়।
ত্বকের যত্নে: এই সময়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও সুস্থতা রক্ষায় আর্দ্রতা নিশ্চিত করতে হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ও সেরাম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে মৃদু এক্সফলিয়েশন করা জরুরি।
ডা. পাঞ্চাল বলেন, “মাসিক চক্রের মধ্যবর্তী ধাপ হল ডিম্বোস্ফোটন। এই সময়ে গর্ভাশয়ে ডিম পরিপক্ক হয়। আর দ্রুত হরমোন ঘনীভূত হয়। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে এবং প্রজেস্টেরন নিস্ক্রিয় থাকে। ফলে ত্বকে তৈলাক্ততা বাড়ে যা ব্রণ সৃষ্টি করে।”
ত্বকের যত্নে: এই সময়ে ত্বকের তৈলাক্ততার সমস্যা কমাতে তেল শোষণকারী শিট বা ব্লটিং পেপার ব্যবহার করা যায়। হালকা, তেল মুক্ত ময়েশ্চারাইজার ও মেইকআপ লোমকূপ আবদ্ধ হওয়া এড়াতে সহায়তা করে।
এই পর্যায়ে ডিম্বোস্ফোটন ঘটে ও পরবর্তী মাসিক চক্রের শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে হয়। লুটিল পর্যায়ে নিষিক্ত না হলে হরমোণের মাত্রা দ্রুত ওঠা নামা করে। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা হ্রাস ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি ব্রেকআউট, নিস্তেজ হয়ে পড়া ও সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
সিবাম উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে লোমকূপ আবদ্ধ হয়ে ব্রণ দেখা দেয় ও সংবেদনশীলতা বাড়ে। ।
ত্বকের যত্নে: এই সময়ে ত্বক ভালো মতো পরিষ্কার করে নিতে হবে যেন অতিরিক্ত তেল ও দূষণ হ্রাস পায়। গ্রিন টি বা নায়াসিনামাইড সমৃদ্ধ প্রসাধনীর ব্যবহারে প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
প্রতিটা নারীর শারীরিক গঠন আলাদা এবং সমস্যাও ভিন্ন হয়। তাই নিজেদের মাসিক চক্র ও ত্বক সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
ত্বকে খুব বেশি জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি।
ঠিকানা/এসআর