তিন মাসের মাথায় আবারও নীরবে ঢাকা সফরে এসেছেন চীনের এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত দেং শি জুন। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, রবিবার দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকায় এসেছেন তিনি। ৩১ জুলাই (সোমবার) দিনভর ব্যস্ত কর্মসূচিতে কাটিয়েছেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে করেছেন আলাদা আলাদা বৈঠক। এর আগে গত এপ্রিলে অনেকটা নিঃশব্দে ঢাকা ঘুরে যান চীনের এই বিশেষ দূত।
সূত্র বলছে, বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ছাড়াও রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সম-সাময়িক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সোমবার প্রথমে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক করেন চীনা দূত। এর পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, উভয় বৈঠকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা যে জরুরি, সেটা এবারের আলোচনায় মেনে নিয়েছেন চীনের এই বিশেষ দূত।
দেং শি জুনের কাছে ঢাকার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাগড়ার বিষয়টিও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আলোচনায় স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনে জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের আস্থায় নেওয়া ছাড়া একজনকেও ফেরৎ পাঠানো সম্ভব নয়। আর রোহিঙ্গাদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মিয়ানমারকে অবশ্যই রাখাইনে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলেও আলোচনায় উল্লেখ করা হয়।
ঢাকার পক্ষ থেকে চীনা দূতকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, বিলম্ব হলেও প্রত্যাবাসন হতেই হবে। বছরের পর বছর প্রত্যাবাসনের জন্য অপেক্ষায় থাকা যাবে না।
প্রসঙ্গত, গত ছয় বছরের মধ্যে এবারই প্রথম সরেজমিন রাখাইন ঘুরে দেখার সুযোগ পান রোহিঙ্গারা। শুরুতে রাখাইন সফরকারী দলটি প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হলেও পরে তারা বেঁকে বসে। তাছাড়া পশ্চিমারাও চীনের উদ্যোগে প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে থমকে যায় প্রত্যাবাসন।
জানা গেছে, ঢাকা সফরের আগে চীনের বিশেষ দূত দেং শি জুন মিয়ানমার সফর করেছেন। সেখানে তিনি সেনাশাসক জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। ওই আলোচনায় মিয়ানমারের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের সহযোগিতার পাশাপাশি রাখাইনের শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। মিয়ানমারের সরকারি সূত্র মতে, গত শুক্রবার চীনা দূত দেং শি জুন মিয়ানমার সফরকালে দেশটির আন্তর্জাতিক সহায়তামন্ত্রী কো কো হ্লাইংয়ের সঙ্গেও দেখা করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমারের মন্ত্রীকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রাখাইনের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে ফেরানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তার আহ্বান জানান।
ঠিকানা/এসআর