মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সফলভবে সম্পন্ন হয়েছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (ইলেক্ট) ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জে.ডি. ভ্যান্স (ইলেক্ট)। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমালা হ্যারিসকে পরাজিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্বের চোখ ছিল। ফলাফল নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাশিয়া, ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ৫ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষে ৬ নভেম্বরের শুরুতে ভোররাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার জয়ী হওয়ার ভাষণ দেন। সেখানে তিনি মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে স্বপরিবারে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এই সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি ভ্যান্স এর স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্পের সাথে মেলানিয়া ট্রাম্প ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিতি ছিলেন। ট্রাম্প তাদের প্রশংসা করেন। ট্রাম্প ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার ভক্ত, সমর্থকরা ও ভোটারদের অনেকেই ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের ফলাফল দুই রকম। একটি হলো স্ব স্ব স্টেটের ভোটারদের দেয়া ভোট যাকে পপুলার ভোট বলা হয়। এই পপুলার ভোট হলেও এই ভোট দিয়ে ভোটের ফলাফল নির্ধারিত হয় না। ভোটের ফলাফল নির্ধারিত হয় যে যে স্টেটে যে প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পান সেই ভোটের প্রেক্ষিতে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের মাধ্যমে। এই ভোটের ফলাফলও একটু ভিন্ন। যেমন যে প্রার্থী একজন স্টেটের বেশি ভোট পাবেন ও তার পুপলার ভোট বেশি হবে, সেই পপুলার ভোটের উপর ভিত্তি করেই ওই সেস্টের ইলেকট্ররোল কলেজের ভোট ওই প্রার্থীই পাবেন। আর আনুষ্ঠানিকভাবে অফিসিয়ালী পুপলার ভোটের ফলাফল ঘোষণার মধ্য দিয়েই মোটামুটি নিশ্চিত হয় কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
৫ নভেম্বর নির্বাচনের পর পরই ফলাফল ঘোষণা হতে থাকে। এবার সুইং স্টেটের ফলাফল ঘোষণার জন্য এবার বেশি সময় লাগেনি। এই কারণে ৬ নভেম্বরের দিনের শুরুতেই ফলাফল নির্ধারিত হবে যেক বিজয়ী এমন প্রায় সব স্টেটের ফলাফল ঘোষণা হয়। নির্বাচনের কয়েকদিন পরই বোঝা যায় কোন দলের প্রার্থী অ্যাবসেন্টি ব্যালটের ভোটসহ কোন স্টেটে বেশি ভোট পেয়েছেন।
ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের জন্য নিয়ম রয়েছে। সেই অনুযায়ী ভোট দিয়ে থাকেন ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটাররা। এই ভোট দেওয়ার জন্য দিন নির্ধারিত রয়েছে ১৭ ডিসেম্বর। ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪ তারিখ ইলেক্টোরাল কলেজ তাদের অফিসিয়াল ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান করবে। তারা ভোট দিবেন। জানুয়ারী ৬, ২০২৫: কংগ্রেস ইলেকট্রোরাল নির্বাচনী ভোট গণনা এবং সার্টিফাই করার জন্য মিলিত হবেন। তখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের ফল দেয়ার জন্য তারা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।
ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের পর জানুয়ারী ২০, ২০২৫ এ নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (ইলেক্ট) ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স ( ইলেক্ট)এর অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ও শপথ নিবেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ওইদিন শপথ গ্রহণ করবেন দুপুরে। এরমধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অভিষেক অনুষ্ঠান হওয়ার পাশাপাশি শপথের পর নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ২০ জানুয়ারি প্রথমে ভাইস প্রেসডিন্টের শপথ হয় এরপর প্রেসিডেন্টর শপথ হয়। তবে কোন বছর যদি ২০ জানুয়ারি রোববার হয় তাহলে ২১ জানুয়ারি অভিষেক অন্ষ্ঠুান অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি সোমবার।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীরা কোন কোন স্টেটে জয়ী হচ্ছে এটা আগেভাগেই বোঝা যায়। বিভিন্ন স্টেট নিশ্চিত থাকে কোন কোন স্টেটে কোন পার্টি জয়ী হবে। তবে কিছু স্টেট রয়েছে যেখানে ইন্ডিপেন্টে ভোটার বেশি। এগুলো ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট। ভোটের ক্ষেত্রে এবার যে সব স্টেটগুলো সুইং স্টেট হিসাবে ভূমিকা রেখেছে এরমধ্যে ছিল অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, উত্তর ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন। মূলত এই সব সেস্টের ভোটাররাই নির্ধারণ করেছে কে হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট। কারণ সুইং স্টেটের ইলেক্ট্রলার ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এদিকে ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৫ নভেম্বর, ২০২৪ স্টেট এবং ফেডারেল সাধারণ নির্বাচনের বিভিন্ন পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসহ। এই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সিনেট ও হাউজসব কিছুইতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছে। চলতি বছরের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য অনলাইনে বা ডাকযোগে আবেদন করার শেষ দিন ছিল ২৬ অক্টোবর। অনেক ভোটাররাই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যারা ভোট দিতে পারবেন না, তারা ডাকযোগে ব্যালট পেপাড় পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। বোর্ড অব ইলেকশন থেকে তাদের জন্য ব্যালট পাঠানো হয়। ভোটারের কাউন্টি বোর্ড অফ ইলেকশনে ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করার শেষ দিন ছিল ৪ নভেম্বর, ২০২৪। এই জন্য বলা হয়, আপনার ব্যালটটি মেইলে পাঠাতে হয়েছে এটি ৫ নভেম্বর, ২০২৪। ভোটারের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ভোটারদের এটি নিশ্চিত করতে হবে যে তারা এর পরে একটি পোস্টমার্ক পায় তা নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়। যারা ৫ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখ রাত ৯ টার মধ্যে নিজ নিজ কাউন্টি বোর্ড অফ ইলেকশন অফিসে আপনার ব্যালট ড্রপ করার জন্য সময় ছিল।
এদিকে সাধারণ নির্বাচনের আগাম ভোট শুরু হয় ২৬ অক্টোবর । ২৬ অক্টোবর থেকে আর্লিভোট শুরু হয়ে ৩ নভেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত চলে। আরো বলা হয়, আপনার কাউন্টির একটি প্রাথমিক ভোটদানের পোল সাইটে আপনার ব্যালটটি জমা দিতে হবে। এই বারের নির্বাচনে ভোটাররা অনেকেই আগাম ভোট দিয়েছেন। আগাম ভোট দেওয়ার সুবিধা থাকার কারণে অনেকেই চিন্তা করেছেন আগাম ভোট দিবেন। যাতে করে ঝামেলা না হয়। এবং যথাযথভাবে ভোট দিতে পারেন। সেই সাথে এটাও হয়েছে যে অনেক ভোটার যারা ৫ নভেম্বর ভোট দিয়েছেন তারা কেউ অফিসের কাজ শুরুর আগে ভোট দিয়েছেন। কেউ দিয়েছেন লাঞ্চের ফাঁেক। আবার কেউ দিয়েছেন অফিস থেকে দুই ঘন্টা ছুটি নিয়ে। সকাল ছয়টা থেকে রাত নটা পর্যন্ত ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে অনেকেই কাজ শেষ ভোট দিয়েছেন। নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল। ভোটাররা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। এদিকে অনেকেই ভিড় এড়াতে ২ ও ৩ নভেম্বর শনিবার ও রোববার ভোট দিয়েছেন। বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেকেই এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও প্রার্থী কমালা হ্যারিসকেও অনেকেই ভোট দিয়েছেন। বাংলাদেশী ভোটাররা আরো বিপুল সংখ্যক ভোট দিতে গেলে বাংলাদেশেীদের প্রভাব আরো বাড়তো। এই বছর নির্বাচনে উল্লেখ্যযোগ্য ভোটার ভোট দেন। জেনারেশন জি নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তরুন -তরুনীরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেন।
শপথ গ্রহণের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট, সেনেটর ও রিপ্রেজেন্টেটিভরা শপথ পড়বেন এই বলে যে, (The vice-president-elect is sworn in first and repeats the same oath of office, in use since 1884, as senators, representatives:)
"I do solemnly swear (or affirm) that I will support and defend the Constitution of the United States against all enemies, foreign and domestic; that I will bear true faith and allegiance to the same; that I take this obligation freely, without aû mental reservation or purpose of evasion; and that I will well and faithfully discharge the duties of the office on which I am about to enter: So help me God."
kc_ MÖn‡Yi mgq †cÖwm‡W›U kc_ co‡eb GB e‡j †h, (Around noon, the president-elect recites the following oath in accordance with Article II, Section I of the U.S. Constitution:)
"I do solemnly swear (or affirm) that I will faithfully execute the Office of President of the United States, and will to the best of my ability, preserve, protect and defend the Constitution of the United States."
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও তিনি সাথে সাথে হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন না। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়ম ও রীত অনুযায়ীশপথ নিবেন। তাদের অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে। অভিষেক হলো একটি রাজনৈতিক কর্মসূচী। এই অভিষেকের দিনেই তারা শপথ নিবেন। আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট এরপর প্রেসিডেন্ট শপথ নিবেন। অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেন এবং তারা এরপর স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনস্থ আইনসভা ক্যাপিটল ভবনের প্রাঙ্গনে এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ব্যাপক কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে। ততদিন পর্যন্ত নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের অভিষেক ও শপথ গ্রহণ হবে না ততদিন তাদেরকে প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট বলা হয়।
প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এবার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট এর দায়িত্ব নিবেন নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর অভিষেক হবে সেই সাথে সেখানে নতুন প্রেসিডেন্টর ও ভাইস প্রেসিডেন্টের এই অনুষ্ঠান উদযাপন এর আগে অনুষ্ঠানে সেখানে তারা বক্তৃতাও করবেন। সেখান থেকেই নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজে যাবেন। হোয়াইট হাউজ থেকেই আগামী চার বছর অফিস করবেন ও সেখানেই বাস করবেন।
ঠিকানা/এসআর