বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বাবদ পাওনা ৮৪ কোটি ডলারের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ কোটি ডলার দ্রুত দিতে বলেছে ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি গ্রুপ। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য অবিলম্বে এই অর্থ পরিশোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানানো হয়েছে।
আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধে ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেয় ভারতের আদানি পাওয়ার। এরপরই বাংলাদেশ সরকার আদানি পাওয়ারকে ৮০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বকেয়া পরিশোধের কাজ শুরু করেছে।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে আদানির পাওনা প্রায় ৯০ কোটি ডলার। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বকেয়া ৮৪ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, বাংলাদেশ গতমাসে ৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে। চলতি মাসে আরও ১৭ কোটি ডলার পরিশোধের জন্য একটি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে।
কোম্পানির সূত্র অনুসারে, অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা সংগ্রহের জন্য আদানির অবিলম্বে অর্থের প্রয়োজন। গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্পটি অতি জটিল। এর জন্য কয়লা ভারতে পাওয়া যায় না। আদানিকে অস্ট্রেলিয়া বা ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করতে হবে।
আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের করা বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। গত জুলাই থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার বাড়তি দাম ধরে বিদ্যুৎ বিল করছে আদানি। বকেয়া বিল পরিশোধে বাংলাদেশকে চাপও দিচ্ছে। এরইমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে অর্ধেকের নিচে নামিয়েছে তারা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘একতরফা’ চুক্তির সুযোগ নিচ্ছে আদানি।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগেই কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। কয়লার চড়া দাম দিতে অস্বীকৃতি জানায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
এরপর দাম কমাতে রাজি হয় আদানি। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম দামে কয়লা সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও দেয় তারা। তবে এক বছর পর এখন আবার ২২ শতাংশ বাড়তি দাম চাইছে আদানি।
বাড়তি দাম নিয়ে বিরোধ ও বকেয়া পরিশোধের তাগিদের মধ্যে সবশেষ গত ২৮ অক্টোবর পিডিবিকে চিঠি দেয় আদানি। এতে বলা হয়, পিডিবি যাতে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়, তাহলে ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে আদানি। কারণ, আদানি চলতি মূলধনের সংকটে রয়েছে।
পিডিবি বলছে, বিদ্যুৎ আমদানিতে আদানির নামে ঋণপত্র (এলসি) খোলার কথা ছিল ৩০ অক্টোবরের মধ্যে। এই ঋণপত্র খোলার কথা ছিল কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে; কিন্তু সেটা হয়নি। পিডিবি আরও সময় চেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় আদানি।
এর মধ্যেই টাইমস অব ইন্ডিয়া রোববার খবর দেয়, বকেয়া নিষ্পত্তির সুরাহা না হলে আদানি পাওয়ার আগামী ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।
ঠিকানা/এএস