বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটের প্রচার ও প্রসার বাড়াতে টেস্ট ও ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টির আবির্ভাব ঘটে। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে এ ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯টি বিশ্বকাপ। টি-টোয়েন্টির এমন জনপ্রিয়তা দেখে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের আবির্ভাব ঘটায় ভারত। প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হিসেবে মাঠে গড়ায় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। এর জনপ্রিয়তা দেখে পরবর্তীতে পিএসএল, বিপিএল, এলপিএল, এসএ টি-টোয়েন্টির মতো লিগগুলো।
এসব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় টাকার ঝনঝনানির কাছে জাতীয় দল বিমুখ হয়েছে খেলোয়াড়রা। আস্তে আস্তে এসব লিগে অর্থের ছড়াছড়ি, পুরস্কার এবং চাকচিক্যের কাছে জৌলুস হারাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। জাতীয় দল বিমুখ হওয়ায় এই লিগগুলো নিয়ে বেশ কয়েকটি দেশের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। এবার এসব লিগের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে ফিক্সিংসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কথা শোনা যায়। বেশ কয়েক ম্যাচে এমন ঘটনা ঘটেছেও। ফিক্সিং কেলেঙ্কারির কারণে শাস্তিভোগ করতে হয়েছে আইপিএলের দল চেন্নাই সুপার কিংস ও রাজস্থান রয়্যালকেও। যদিও তারা পুনরায় লিগের ফিরে এসেছে। লিগগুলোতে দুর্নীতিরোধে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট আকসু বেশ তৎপর।
সম্প্রতি আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট আকসু দুর্নীতি হয় এমন লিগের সন্দেহের তালিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে নাম এসেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল)।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের ‘কীভাবে ক্রিকেট নিজেকেই খেয়েছে’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্ফোরক এসব তথ্য।
গত ৭ বছর ধরে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটে তদন্ত সমন্বয়কের কাজ করেছেন স্টিভ রিচার্ডসন। তিনি গত বছর বিদায় জানিয়েছেন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। দায়িত্ব ছাড়ার এক বছরের মাথায় এসব নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। সাবেক এই আইসিসি কর্তার মতে, দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালা ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা ঠিকমতো মেনে চলে না।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বিপিএল প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সর্বশেষ দুই বছরে বিপিএলে ৩০টিরও বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব অভিযোগের জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত খেলোয়াড়রা বছরের পর বছর খেলা চালিয়ে গেছেন বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিপিএলের মতো বিশ্বজুড়ে চলা বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ও লিজেন্ডস লিগে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এসব লিগে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য আইসিসিকে তালিকাভুক্ত করা হয় না। কাজটি তারা স্বল্প খরচে করে। সেক্ষেত্রে অনেক সমস্যা থেকেই যায়।
অভিযোগ জানাতে অনেক খেলোয়াড়ই ভয় পান বলেও উঠে এসেছে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি এই বিষয়ে বলেন, অভিযোগ জানাতে অনেক খেলোয়াড়ই ভয় পান। প্রথমত, তাদের পারিশ্রমিক নাও দেয়া হতে পারে। দ্বিতীয়ত, তারা নিজেদের অনিরাপদ বোধ করতে পারেন। তারা তখনই জানান, যখন সরাসরি অ্যাপ্রোচ করা হয়। কিন্তু শুধু সন্দেহের ওপর খুব কমই বলেন।
আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটে তদন্ত সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করা রিচার্ডসন বলেন, যখন ছোট ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিজস্ব ইভেন্ট কাভার করে, তখন ঝুঁকি হচ্ছে, এর মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী বিধান কি ততটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে? আইসিসি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও তথ্যের জন্য যোগাযোগ না করে একজন দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তা মাঠে থাকলেই লিগকে সর্বোত্তমভাবে রক্ষা করা যায় না। এর মধ্যে অনেক কিছুই আছে।
ঠিকানা/এএস