১৭৮৯ সালে আমেরিকায় প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জর্জ ওয়াশিংটন নির্বাচিত হন।
১৮৪৫ সাল থেকে নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং সেই থেকে এই নির্ধারিত দিনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ১৯২০ সালে আমেরিকার নারীরা প্রথম ভোটাধিকারের সুযোগ পান। আর ১৯৬৫ সালে সংখ্যালঘুদের ভোটের অধিকার দেওয়া হয়। ভোটের দিন সরকারি ছুটি থাকে না। এ দেশে আগাম ভোট দেওয়ার বিধান আছে, যা ডাকযোগে দেওয়া যায়। ২০১৬ সালে ২১ শতাংশ এবং ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের (কোভিড) কারণে ৪৬ শতাংশ আগাম ভোট পড়ে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে হলে একজন ব্যক্তিকে আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করতে হবে, কমপক্ষে ১৪ বছর আমেরিকার মধ্যে বসবাস করতে হবে এবং বয়স সর্বনিম্ন ৩৫ বছর হতে হবে। আমেরিকার সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এফ কেনেডি। তিনি ৪৩ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আমেরিকায় কোনো ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন পরপর দুবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর স্বেচ্ছায় তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াননি। এরপর এটি আইনে পরিণত হয়, শুধু একবারই এই আইনের ব্যতিক্রম হয়েছে। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত মোট চারবার ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। মূলত ১৯৩০ এর দশকের বৈশ্বিক মন্দা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে।
পৃথিবীর বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলেও আমেরিকা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন না। কিছুটা জটিলতার কারণে অনেক আমেরিকান ভোটারও আমেরিকার নির্বাচন-পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মূলত শুরু হয় প্রতিটি রাজ্যের প্রাইমারি নির্বাচন ও ককাসের মাধ্যমে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চলে এই প্রক্রিয়া। ওই দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রধানত দুই দল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দল তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে থাকে। ককাসে দলের স্থানীয় সদস্যরা তাদের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্য থেকে আলোচনা ও সমালোচনা এবং ভোটের মাধ্যমে একজনকে বেছে নেন। আর প্রাইমারি নির্বাচনে দলের সদস্যরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নিজেদের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত করেন, যিনি সাধারণ নির্বাচনে দলকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। কিছু অঙ্গরাজ্যে শুধু প্রাইমারি, কিছু অঙ্গরাজ্যে শুধু ককাস এবং বাকি অঙ্গরাজ্যগুলোতে দুটোই হয়ে থাকে। প্রাইমারি ও ককাসের পর প্রধান দুই দল পৃথক জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে চূড়ান্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বেছে নেয়। এই সম্মেলনে দলের নির্বাচিত প্রার্থী তার রানিংমেট তথা ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করেন। এরপর দুই দলের প্রার্থী সাধারণ জনগণের সমর্থন পেতে দেশজুড়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থীর সঙ্গে বিতর্কে অংশ নেন। এভাবেই শুরু হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টকে বলা হয় কংগ্রেস। কংগ্রেস হলো দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা। কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষকে বলা হয় হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস আর উচ্চ কক্ষকে বলা হয় সিনেট। নিম্ন কক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্যসংখ্যা ৪৩৫, উচ্চ কক্ষ সিনেটের সদস্যসংখ্যা ১০০ এবং ওয়াশিংটন ডিসি বা ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার তিনজনসহ মোট ৫৩৮ জন। তারা সবাই কংগ্রেসম্যান, তবে উচ্চ কক্ষ সিনেটের সদস্যদের সিনেটর হিসেবে ডাকা হয়।
পদাধিকারবলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট সিনেটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চার বছর পরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস সদস্যদেরও নির্বাচিত করা হয়।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের মেয়াদ দুই বছর। এ জন্য প্রতি দুই বছর অন্তর নিম্ন কক্ষের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর সিনেটের সদস্যদের মেয়াদ ছয় বছর, তবে সিনেট সদস্যদের নির্বাচন তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। তাই দুই বছর পরপর সিনেটের তিন ভাগের এক ভাগ আসনে নির্বাচন হয়। আমেরিকার ৫০টি রাজ্যের প্রতিটিতে দুজন করে সিনেটর নির্বাচিত হন। সে জন্য কংগ্রেসে সিনেটরের সংখ্যা ১০০।
জনসাধারণের ভোটে নয়, এখানে ইলেক্টোরালদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আর এই ইলেক্টোরাল কলেজকে নির্বাচিত করেন সাধারণ ভোটাররা। মূলত কংগ্রেসের সদস্যরাই ইলেক্টোরাল কলেজের ইলেক্টোরাল। যেমন ফ্লোরিডায় ইলেক্টোরাল ভোট ২৯। এই ২৯ জন ইলেক্টোরালের সমষ্টি ইলেক্টোরাল কলেজ। কিন্তু এখানে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। আয়তন ও জনসংখ্যা অনুযায়ী আমেরিকার রাজ্যগুলোতে ইলেক্টোরালের সংখ্যা কমবেশি হয়। যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় ইলেক্টোরালের সংখ্যা ৫৫ আবার ওয়াইয়োমিং রাজ্যে ইলেক্টোরালের সংখ্যা মাত্র ৩।
এখন ধরুন, ক্যালিফোর্নিয়ায় ১০০ জন ভোটারের ৮০ জন ভোট দিয়েছেন, যেখানে ৪১ জন রিপাবলিকান দলকে আর ৩৯ জন ডেমোক্র্যাট দলকে ভোট দিয়েছেন। এর ফলে এই রাজ্যে রিপাবলিকান দল জিতে যাওয়ায় ক্যালিফোর্নিয়ার সব ইলেক্টোরাল ভোট এই দল পেয়ে যাবে। অন্যদিকে ওয়াইয়োমিং রাজ্যে ১০০ জন ভোটারের ৮০ জন যদি ভোট দেন এবং ডেমোক্র্যাট দল ৭৫টি ভোট পায় আর রিপাবলিকান দল ৫টি ভোট পায়, তাহলে ডেমোক্র্যাট দল এই রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট পাবে। অথচ এই রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা মাত্র ৩। কিন্তু দুই রাজ্য মিলে ডেমোক্র্যাট দল মোট ভোট পেল ৩৯+৭৫=১১৪ জনসাধারণের ভোট আর রিপাবলিকান দল পেল ৪১+৫=৪৬ জনসাধারণের ভোট। এই দুই রাজ্যকে যদি সম্পূর্ণ আমেরিকা ধরা হয়, তাহলে কম ভোট পেয়েও রিপাবলিকান দল ইলেক্টোরাল ভোট বেশি পাওয়ায় জিতে যাবে।
এ কারণে ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ জনসাধারণের ভোট বেশি পেয়েও হেরে গিয়েছিলেন।