ঠিকানা রিপোর্ট 
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আমব্রেলা সংগঠন হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে সেলিম-আলী প্যানেলের ভূমিধস বিজয় হয়েছে। কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদের সবকটিতেই তারা জয়ী হয়েছেন। গত ২৭ অক্টোবর রোববার সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটির ৫টি কেন্দ্রে একটানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ১৮ হাজার ভোটারের মধ্যে ৯৩২৪ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নির্বাচনে সেলিম-আলী প্যানেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে রুহুল-জাহিদ প্যানেল। এই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী রুহুল আমিন সিদ্দিকী বর্তমান কার্যকরি পরিষদের পর পর দুই বারের সাধারণ সম্পাদক। তাদের প্যানেল থেকে বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ রব মিয়াও কার্যকরী সদস্য পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন।
ভোটগ্রহণ শেষে রাতে নিউইয়র্কের উডসাইড কেন্দ্রে নির্বাচনের প্রাথমিক ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি। এসময় নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, আব্দুল হাকিম মিয়া, হেলাল উদ্দিন, আহবাব চৌধুরী খোকন ও মো. আব্দুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুবুর রহমান বাদল।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন আতাউর রহমান সেলিম। তার প্রাপ্ত ভোট ৫২৮৯। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রুহুল আমিন সিদ্দিকী পেয়েছেন ৩৮২০ ভোট। এর আগে তিনি এই সংগঠনের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান। তার প্রাপ্ত ভোট ৫৪৯৪। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফারুক চৌধুরী পেয়েছেন ৩৪০৫ ভোট।
সহ-সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান কামরুল। তার প্রাপ্ত ভোট ৫৪৮০। এটি এই নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর সর্বোচ্চ ভোট। নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মত তিনি সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে পুনরায় সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আমিনুল চৌধুরী পেয়েছেন ৩৪০৯ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে ৫১৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মোহাম্মদ আলী। তিনি এই সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। গত নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়ে তিনি পরাজিত হন। এবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাহিদ মিন্টু পেয়েছেন ৩৮৭২ ভোট।
সহ-সাধারণ পদে বিজয়ী হয়েছেন আবুল কালাম ভূঁইয়া। তার প্রাপ্ত ভোট ৫০৮৫। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সরোয়ার খান বাবু পেয়েছেন ৩৮৬৪ ভোট। দুইজনই বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা।
কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া রুমী। তার প্রাপ্ত ভোট ৫২৪২। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নওশেদ হোসেন পেয়েছেন ৩৬২৬ ভোট। নওশেদ হোসেন সংগঠনের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন ডিউক খান। তিনি পেয়েছেন ৫২৩০ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাদী মিন্টু পেয়েছেন ৩৬৩৯ ভোট। তিনি সংগঠনের বর্তমান কার্যকরী সদস্য।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন অনিক রাজ। তিনি পেয়েছেন ৫০৬৯ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী মনিকা রায় চৌধুরী পেয়েছেন ৩৭২৭ ভোট। তিনি একাধিক বার এই সংগঠনে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সমাজকল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মো. জামিল আনসারী। প্রাপ্ত ভোট ৫২০৭। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নাদির আহমেদ আইয়ুব পেয়েছেন ৩৫৮৮ ভোট। তিনি এর আগে সোসাইটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাহিত্য সম্পাদক পদে বিজয়ী আখতার বাবুল পেয়েছেন ৪৭৯৩ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী রোমানা আহমেদ পেয়েছেন ৪০৫২ ভোট। তিনি সংগঠনের প্রয়াত সভাপতি কামাল আমেদের কন্যা। বিজিত রুহুল-জাহিদ প্যানেলে তিনিই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন।
ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মো. আশ্রাব আলী খান লিটন। তিনি পেয়েছেন ৫০৯১ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী আলমগীর হোসেন পেয়েছেন ৩৬৮২ ভোট। দুজনই সোসাইটিতে নতুন প্রার্থী।
স্কুল ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদ নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ হাসান জিলানী। প্রাপ্ত ভোট ৫০৩৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শাহনাজ হোসেন পেয়েছেন ৩৭৯৪ ভোট। শাহনাজ হোসেন প্রথম বার সোসাইটির নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন।
কার্যকরী সদস্য পদে বিজয়ীরা হলেন- মো. সিদ্দিক পাটোয়ারী (প্রাপ্ত ভোট ৫১৫৮), হারুন চেয়ারম্যান (প্রাপ্ত ভোট ৫২১৮),আবুল কাশেম চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট ৫১৫০), জাহাঙ্গীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী (প্রাপ্ত ভোট ৫২১৪), মনসুর আহমেদ (প্রাপ্ত ভোট ৫১১৯) এবং হাসান খান (প্রাপ্ত ভোট ৫০৩৩)।
কার্যকরী পরিষদে রুহুল-জাহিদ প্যানেল থেকে অংশ নিয়েছিলেন - বর্তমান সভাপতি রব মিয়া, মোহাম্মদ তাজু মিয়া, মোহাম্মদ এন. ইসলাম, একেএম রফিকুল ইসলাম ডালিম ও মো. সাইফুল ইসলাম।
কার্যকরী পরিষদের প্রচার ও গণসংযোগ সম্পাদক পদে সেলিম-আলী প্যানেল থেকে রিজু মোহাম্মদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে তিনি পর পর চার বার একই পদে বিজয়ী হয়েছেন।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। শিগগিরই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- এই নির্বাচনে মোট ভোট দিয়েছেন ৯৩২৪ জন। এরমধ্যে উডসাইডে গুলশান টেরেস কেন্দ্রে ১৮৮৬ ভোট, ব্রুকলিনে পিএস-১৭৯ কেন্দ্রে ১৫৯৭ ভোট, ব্রঙ্কসে গোল্ডেন প্যালেস কেন্দ্রে ১৯৫৩ ভোট, জ্যামাইকায় কেন্দ্রে ২৩১৯ ভোট এবং ওজোন পার্কে মুনা সেন্টার কেন্দ্রে ১৫৯৯ ভোট পড়েছে।
ব্রঙ্কসে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ সমাবেশ : বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে সেলিম-আলী পরিষদের ভূমিধস বিজয়ে ব্রঙ্কসে মিষ্টি বিতরণ ও বিজয় মিছিল উত্তর আনন্দ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৮ অক্টোবর সোমবার স্টারলিং- বাংলাবাজারে সন্ধ্যায় শতাধিক সমর্থকদের অংশগ্রহণে বিজয় মিছিল বাজার প্রদক্ষিণ শেষে গোল্ডেন প্যালেসে সমাবেত হয়। ব্রঙ্কস নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব আহমদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব শামীম আহমদের পরিচালনায় আনন্দ সমাবেশে নবনির্বাচিত সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমকে ব্রঙ্কসবাসীর পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী, সদস্য মনসুর আহমদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ।
বক্তব্য দেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সিরাজ উদ্দীন সোহাগ, জুনেদ চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশে ব্রঙ্কসে বসবাসকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে সকলের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
নবনির্বাচিত সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি ব্রঙ্কসবাসীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ এবং নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুরণে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।
