দেশে-বিদেশে বিরোধীপক্ষ সোচ্চার। নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনুসকে বিতর্কিত করার মিশনটি সক্রিয়। জাতিসঙ্ঘ তথা নিউইয়র্ক সফরের সাফল্যে ঈর্ষা বেড়েছে। ক্ষমতাশালী তথা দাতা দেশগুলো হাত বাড়িয়েছে। সেইসব আগ্রহ ও প্রতিশ্রতির বিরুদ্ধে চলছে মিশন। চিঠিতে-ইমেলে জানানো হচ্ছে 'ইউনুস সরকার' ভুঁয়া। আইনগত বা সাংবিধানিকভাবে বৈধতা নেই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগও করেন নি। বলা হচ্ছে এমন অবৈধ সরকার ঋণ-অনুদান পেতে পারে না। ‘সো, স্টপ অল কাইন্ড অব কো-অপারেশন’। আমেরিকা ও বৃটেনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চলছে প্রতিবাদ, প্রক্রিয়া। প্রবাস আ’লীগ নেতারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। পরিস্থিতিগতভাবে দেশে আন্দোলনের নাম নিশানা নেই। তবে প্রবাস হয়েছে প্রতিবাদ ও গুজবশিল্পের তীর্থস্থান। দাতা, ঋণদাতা বা মূলধারায় চালানো হচ্ছে অপপ্রচার। ফলে, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে এখন নতুন চাপ। দাতারা জানতে চাচ্ছেন ইউনুস সরকারের বৈধতা কি? সাংবিধানিক সরকার হলে কোন ধারামতে সরকারটি আইনসিদ্ধ? অন্তর্বর্তী বা ইন্টারিম সরকার অনানুষ্ঠানিক জবাব দিচ্ছে। বলছে ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানে প্রাধানমন্ত্রী হাসিনা পালিয়ে যায়। মন্ত্রিসভা, সংসদ, এমনকি থানার পুলিশও লা-পাত্তা। এমতাবস্থায় মন্ত্রিসভা, সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দীন চুপ্পু। সংবিধানের ১০৬ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন নেন। ৮ আগস্ট ইন্টারিম সরকারকে শপথ করান রাষ্ট্রপতি। প্রফেসর ড. ইউনূস ইন্টারিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদামময় এই পদটি। ১৯৯৬ সালের তত্বাবধায়ক সরকারেও ড. ইউনূস উপদেষ্টা ছিলেন। সেবার ভোটে জিতে শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। ক্ষমতার পরের টার্মে তত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেন। ২০১৩, ২০১৮, ২০২৪-এর নির্বাচন করান নিজের অধীনে। পাতানো ভোটের মাধ্যমে আরও তিনবার প্রধানমন্ত্রী হন। ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট’২৪ পালিয়ে ভারত যান।
কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদের সংখ্যা ১৫০০ ছাড়িয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২৮৭ জন হত্যার মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বয়ং শেখ হাসিনার ভাষ্য পাওয়া গেছে। বলেছেন, এবার ২৮৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেলাম। নেতাদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ বিষয়েও নির্দেশনা দেন। বলেন, যারা এসব করছে তাদের বাড়িতেও আগুন লাগাও। তিনি বলেন সব কাজ কি প্রকাশ্যে করতে হয়? উত্তরবঙ্গের এক নেতার সঙ্গে টেলিসংযোগে এমনটি বলেন। প্রতিউত্তরে নেতা বলেন-- নেত্রী আপনি ধৈর্য ধরুন। বাংলাদেশে এখন সেই পরিস্থিতি নেই, অপেক্ষা করুন। কিন্তু ইউনূস সরকারকে সময় দিতে চান না হাসিনা। ‘প্রবাসী সরকার’ ঘোষণার জন্যে উতলা হয়ে আছেন। কিন্তু আশ্রয়দাতা ভারত তাতে অনুমোদন দিচ্ছে না। তিব্বতীয় নেতা দালাইলামা পেয়েছিলেন সে সুযোগ। কিন্তু ভারত ইউনূস সরকারের সাথে বৈরিতায় অনাগ্রহী। ফলে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অভিলাষগুলো বিনষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশে হাসিনাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর শীর্ষ ঘোষণা এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। উভয়ে দৃঢ়চিত্তে বলেছেন ছাত্র হত্যাকারীদের ফাঁসি হবেই। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি ফলকার টুর্ককে একথা জানান। ছাত্রলীগের পর আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধের চেষ্টা চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ফুঁসছেন। শীর্ষ সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম পদক্ষেপ নিয়েছেন। হাইকোর্টে রিট করেছেন ১১টি দলের নিষিদ্ধতা চেয়ে। রহস্যজনকভাবে পরদিন রিট প্রত্যাহার করেন। সচেতন মহলের মতে ছাত্রশক্তি ও সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।
প্রবীণ প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি চলমান। ৮৪ বছর বয়েসে তিনি অনেক চাপ নিতে অক্ষম। মাঝেমধ্যেই হাসপাতালের আইসিইউ-এ ভর্তি হতে হচ্ছে। এমন অনুযোগের মাধ্যমে ভাগ্যবদল ঘটছে নোবেলজয়ীর। রাষ্ট্রপতি পদে থেকেও মিথ্যাচারের অভিযোগ রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে। ফলে সে পদে রদবদল ঘটানোর প্রক্রিয়া চলমান। কিন্তু সেনাপ্রধান ও ড. ইউনূস সম্মত হননি। বরং বলেছেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি বদলের বিষয়টি ঝুলে গিয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে প্রকাশ সমস্যাটি অন্যখানে। পরিকল্পনা হলো উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ড. ইউনূসকে সরানো। ওনাকে পুতুল-প্রেসিডেন্ট বানিয়ে বসিয়ে রাখা। ওনার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে কাজে লাগানোও জরুরি। কিন্তু ক্ষমতার খেলাগুলো খেলবেন অন্যরা। প্রধান উপদেষ্টা পদে দু’জনের নাম এখন আলোচনায়। সেনাজগতের পছন্দ নৌ-উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত। ছাত্রজগতের পছন্দ আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। অন্তর্বর্তী সরকারকে সুসংহত করার দাবি বা চাপ ক্রমশ বাড়ছে। সাংবিধানিক বা বৈপ্লবিক সরকার যেটাই হোক। গবেষকরা বলছেন দ্রুতভিত্তিতে হ্যাঁ-না ভোট করার। ১৯৭৭-এ হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে গণ-ম্যান্ডেট নেন জে. জিয়া। পরে তিনি প্রেসিডেন্ট হন, বিএনপি গড়েন। সর্বদলীয় সরকার গঠনের দাবিও জোরালো হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় জেলা কমিটিও সক্রিয় থাকবে। তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে প্রত্যাশা। বাজারদর, মাদকদ্রব্য চুরি-ডাকাতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ব্যর্থ হলে নতুন স্বাধীনতা হতাশায় পরিণত হতে পারে।