অস্থিরতা বিষয়ে আবু সাঈদের বাবা-মা ►
‘হামরাও টেনশন করিছি বাহে...’
রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা নিয়ে টান টান উত্তেজনা।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার ভবিষ্যৎ বিষয়ে সর্বমহলে কৌতূহল। পদত্যাগ দাবি করে রাষ্ট্রপতি-নিবাস ‘বঙ্গভবন’-এর বাইরে হামলা। পদত্যাগপত্র না দিয়ে শেখ হাসিনার পলায়ন নিয়ে বিতর্ক। অভিযোগ- বিরোধীদের হাতে ইস্যু তুলে দিচ্ছে ইউনুস সরকার।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় উদ্বিগ্ন শহীদ আবু সাঈদ পরিবার। পিতা মকবুল হোসেন বলেন, আমরা শান্তি চাই। চাকরির সুবিধা আর ভোটের অধিকার ছিলো প্রধান দাবি। আন্দোলনে আমার ছেলেসহ ১৫০০ নিহত। তাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা চলবে না। সরকারের নিজেদের ঐক্যও ভাঙা চলবে না।
তিনি বলেন, টিভিতে এইসব কি দেখতেছি। বঙ্গভবন ঘেরাও, হামলা, রাষ্ট্রপতি নিয়া বিতর্ক। আঞ্চলিক ভাষায় বাবা-মা বলেন- ‘হামরাও টেনশন করিছি বাহে...।’
♦ পদত্যাগ বিষয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য ♦ ভারতে নতুন ঠিকানায় স্থানান্তর ♦ মামলা নিয়ে যেতে চান সুইজারল্যান্ড : গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ তথা পলাতক হন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। বিকেলে জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণ সেনাপ্রধানের। জে. ওয়াকারুজ্জামানের পর রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর। উভয়ে বলেন যে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট বলেন যে, আমার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু পরে এ বিষয়ে ভিন্ন তথ্য মেলে। রাজনৈতিক সহকর্মী সকাশে টেলিফোনে কথা হয় হাসিনার। বলেন, পদত্যাগপত্র আমি গণভবনে ফেলে এসেছি। ৫ আগস্ট সবকিছুর সাথে পদত্যাগপত্রও লুট হয়ে যায়।
হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও বক্তব্য রাখেন। বলেন, পদত্যাগপত্রের কপি কারো হাতেই নেই।
দৈনিক মানবজমিনে পদত্যাগপত্র বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বক্তব্য দেন। বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণপত্র নেই। এই বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে চলছে তুমুল বিতর্ক। অন্যদিকে ভারতে শেখ হাসিনা ‘গৃহবন্দি’রূপে সমাদৃত হয়েছেন। দিল্লি থেকে উত্তর প্রদেশের মীরাটিতে স্থানান্তরিত। সেনানিবাসের গোপনস্থানে চলছে নতুন জীবন। অন্যদিকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আদালতে শুরু হয়েছে বিচারকার্য।
হাসিনাপুত্র জয় বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিযুক্ত করেছেন। প্রাথমিকভাবে দু’লাখ মার্কিন ডলার অগ্রিম দিয়েছেন। প্রধান কাজ- হাসিনার পদত্যাগকে না করানো। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল রাখার চেষ্টা। মামলার স্থান হবে সুইজারল্যান্ড। সেই মামলাসূত্রে সুইজারল্যান্ড যাবেন তিনি। যাত্রা সহজতর করতে ভারত ইতিমধ্যে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ ইস্যু করেছে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগকে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ বলা হচ্ছে। তিনি সবকিছু ছেড়ে আকস্মিকভাবে পালিয়ে গেছেন। ফলে রাষ্ট্রপতি সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীত্ব বাতিল করেন। অন্তর্বর্তী সরকার গড়ে শপথও করান উপদেষ্টাদের। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চাচ্ছেন। তাদের মতে রাষ্ট্রপতি চুপ্পু শেখ হাসিনার লোক। হাসিনা সরকার ওনাকে ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি’ পদে নিয়োগ দিয়েছিলো।
♦ অপসারণের কাঁটায় দুলছেন রাষ্ট্রপতি চুপ্পু ♦ ৫ আগস্টের বক্তব্যটি ছিলো পূর্বলিখিত : গত ৫ আগস্ট একটি লিখিত বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি চুপ্পু। বিশেষ সূত্রমতে, বক্তব্যটি ছিলো পূর্বলিখিত। সেদিন তিনি ছিলেন জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি। ফলে ড্রাফটির পুরোটা শুধু পাঠ করেছেন। তাতে উল্লেখ ছিলো- প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু আসলে সেদিন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎই হয়নি। তবুও এ প্রসঙ্গটিতে জোর বিতর্ক উঠেছে।
রাষ্ট্রপতির অপসারণ বিষয়ে গ্রাউন্ডওয়ার্ক চলছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তবে সচেতন মহল মনে করছে, উত্তেজনা বাড়ছে। সেনাপ্রধান জে. ওয়াকারুজ্জামান আমেরিকা সফরে। এমন অবস্থায় পরিবর্তন ঘটলে দেশের ভাগ্যে গভীর অমানিশা নামতে পারে।