Thikana News
২৭ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ

দ্রুত নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি

দ্রুত নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ছবি সংগৃহীত



 
রাষ্ট্র সংস্কারের ইস্যুতে মতামত নিতে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চতুর্থ দফায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। এই সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচন আয়োজন এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনে এখনো বিতর্কিত যারা রয়ে গেছেন, তাদের বাদ দেওয়া এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিও তোলা হয়েছে। জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে এলডিপি। তারেক রহমানের সব মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছে এনডিএম। পাচার করা টাকা ফেরাতে কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিজেপি।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে এসব প্রস্তাব দিয়েছে দলগুলো। সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ১০টি দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করেন সরকারপ্রধান। এর আগে ৫ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ করে সরকার। উপদেষ্টা পরিষদের কলেবর বৃদ্ধি, রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ১০ কমিশনে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত, প্রশাসনে থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অপসারণের প্রস্তাব করেছে কয়েকটি দল।

সংলাপের পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা এসেছে আবারও। সঙ্গে তাদের শরিক দলগুলোকে নিষিদ্ধের দাবিও এসেছে। গত তিনটি সংসদ হয়েছে অবৈধভাবে। এগুলোকে কীভাবে অবৈধ ঘোষণা করা যায়–এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো অভিমত দিয়েছে।

শনিবার বিকেল তিনটায় গণফোরামের সঙ্গে আলোচনায় শুরু হয় সংলাপ। এরপর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণফ্রন্ট, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশে লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাসদের (একাংশ) শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৯ সদস্য অংশ নেন। সংলাপে সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কামাল হোসেন কথা বলেছেন বলে জানান দলটির সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি বলেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জোর দিয়েছি। সিন্ডিকেট অবশ্যই ভাঙতে হবে। রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না এই প্রশ্নে তিনি বলেন, তারিখ উল্লেখ করিনি। বলেছি, সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দিতে।

আটটি দিবস বাতিলের বিষয়ে সাবেক যুবলীগ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মন্টু বলেন, ‘জাতীয় দিবস ছাড়া কোনো দিবসই রাখা উচিত নয়।’ গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান এস এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সদস্যসচিব মিজানুর রহমান, সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ সংলাপে অংশ নেন।

সংলাপে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তিনি বলেন, প্রথম দফায় ১০৩ ও এবার ২৩ প্রস্তাব দিয়েছি। পুরো জাতি জুলাই-আগস্টে যুদ্ধের মধ্যে গেলাম। আওয়ামী লীগ অন্যায়ভাবে পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে। দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ায় নিষিদ্ধ হয়েছিল। আজকে কী কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে।

এলডিপির প্রেসিডেন্ট বলেন, সংস্কার কমিশনকে রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দিতে হবে। খসড়া শেষে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ওয়ার্কশপে চূড়ান্ত করবে কী কী সংস্কার করবে। এর ওপর রাজনীতিবিদদের লিখিতভাবে মতামত দিতে হবে। এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার সংলাপে অংশ নেন।

সংলাপে ১২ দলীয় জোট ১৪ দফা প্রস্তাব দেয়। জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ভর্তুকি দিয়ে হলেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যা প্রয়োজন করবেন। জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে সবচেয়ে বড় কনটেইনার হ্যান্ডলিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সব আয়োজন করেছিল পতিত স্বৈরাচার। উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে এনে সুশাসন কায়েম করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করে তৃণমূল থেকে স্বৈরাচার উৎখাত ও সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছি।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সংস্কারকাজের পাশাপাশি নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে বলেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছি। অর্থ পাচারে জড়িত ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি, পরিচালকদের আইনের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছি।

চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপ শেষে পার্থ বলেন, আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি মুখ্য না হলেও নির্বাচনে আসা ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, এমন কোনো সংস্কারে হাত দেবেন না, যা গণতান্ত্রিক সরকারের নেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ তিনটি অবৈধ নির্বাচন করেছিল। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না, তা বলেছি।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, ‘সুস্পষ্টভাবে বলেছি, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন করতে হবে।’

লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘সবার আগে সংস্কার করতে হবে উপদেষ্টা পরিষদ। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি উপদেষ্টারা ব্যর্থ। নাহিদ ও আসিফ ভালো করছেন। আলী ইমাম মজুমদারকে অপসারণ করতে হবে। তিনি প্রশাসনে আওয়ামী লীগারদের নিয়োগ দিচ্ছেন। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, ২০২৫ সালের জুনের পরে সহজেই নির্বাচন সম্ভব।

বাংলাদেশ জাসদের (একাংশ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু ও ৭ মার্চ নিয়ে বিতর্ক গ্রহণযোগ্য হয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের ভুলত্রুটির দায় বঙ্গবন্ধুর ওপর চাপানো যৌক্তিক নয়।

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স