দলকে নির্বাচনের উপযোগী করার জন্য বর্তমানে সিরিজ কর্মসূচিতে ব্যস্ত রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো সভা হচ্ছে। ঘরোয়া বৈঠক হচ্ছে। মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠনগুলোকেও কাছে টানছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের আদর্শিক ও রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে পরিচিত ১৪ দলীয় জোট নিষ্ক্রিয় থাকলেও নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন ও বিজয়ী হলে সবাইকে নিয়ে সরকার গঠনেরও আশ্বাস পেয়েছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিকেরা।
সিরিজ কর্মসূচির পাশাপাশি চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। প্রথমত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিরোধী দলগুলোর এক দফা দাবির মুখে সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, স্বল্প সময়ের নোটিশে যেকোনো বড় ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলকে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা। তৃতীয়ত, বর্তমান সংসদ সদস্যদের জনপ্রিয়তা যাচাই করে সঠিক ও উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া এবং চতুর্থত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত শান্ত রাখা। লক্ষ্য বাস্তবায়নে সিরিজ বৈঠকও করে যাচ্ছে দলটি। এখন আওয়ামী লীগ যত বৈঠক করছে, তার সবগুলোতেই থাকছে আগামী দ্বাদশ নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠানের অ্যাজেন্ডা।
আওয়ামী লীগের হাতে এখন যেসব কাজ রয়েছে, তা সফলভাবে বাস্তবায়নে আগামী ৬ আগস্ট বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছে দলটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সভা হওয়ার কথা। সূত্র জানায়, এই বিশেষ বর্ধিত সভার অ্যাজেন্ডা দুটি। একটি হচ্ছে নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করা আর অপরটি হচ্ছে বিরোধী দলগুলোর এক দফার আন্দোলন সফলভাবে মোকাবিলা করা। সভায় আগামী জাতীয় নির্বাচনী তরি পার হতে করণীয় নিয়ে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিশেষ বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ভোটে বিজয়ী হতে করণীয় নিয়ে ওই সভায় নেতাকর্মীদের পরামর্শও নেবেন তিনি।
জানা গেছে, ৬ আগস্টের ওই বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ, মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা ডাক পেয়েছেন। দলটির দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদেরও সভায় থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা ডাক পেয়েছেন বিশেষ ওই সভায়।
আগামী নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে-সরকারি দলের অবস্থান অনুযায়ী বর্তমান সংবিধানের অধীনে, নাকি বিরোধী দলের দাবি অনুযায়ী নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, নাকি অন্য কোনো নতুন ফর্মুলায়, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মীর মধ্যে কিছুটা টেনশন কাজ করছে। বিশেষ করে, যারা নানা অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা বেশি টেনশনে আছেন। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, তাদের টেনশন তত বাড়ছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি দিয়ে রেখেছে। বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত কী ফল আসে, তা নিয়ে সরকারি দলের অনেক নেতাকর্মীই উদ্বিগ্ন। তা ছাড়া ক্রমেই বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে কর্মসূচি বাড়ানো হচ্ছে। এসব নিয়ে দলটির কর্মীদের মধ্যেও নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যাতে উজ্জীবিত থাকেন, দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় থাকেন, বিরোধী দলের কর্মসূচি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকেন, সে জন্য দলের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর গত ১৯ জুলাই শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের সভা হয়েছে। সেখানে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। নির্বাচনে বিজয় এলে আওয়ামী লীগ সরকার নয়, গঠিত হবে ‘১৪ দলীয় জোট সরকার’-এমন আলোচনাও হয়েছে ওই বৈঠকে। তা ছাড়া আগামী মাস থেকে দেশের সব বিভাগ, মহানগর, জেলা ও উপজেলায় পর্যায়ক্রমে সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওইসব সভা হবে ১৪ দলের ব্যানারে। এসব কর্মসূচির মধ্যে বিভাগীয় সমাবেশ হলে এতে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ১৪ দলের শীর্ষ নেতারাও নতুন উদ্দীপনা পেয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ১৪ দলের পাশাপাশি এককভাবেও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, তার দল সব সময়ই সক্রিয় রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে আরও সক্রিয় করার জন্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা কার্যকর ভূমিকা পালন করছেন।
                           
                           
                            
                       
     
  
 


 ঠিকানা রিপোর্ট
 ঠিকানা রিপোর্ট  
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                
