Thikana News
২৭ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

‘এখন যেমন খুশি বলা যায় বলে লাগাম ছাড়া কথা বলাবলি হচ্ছে’

‘এখন যেমন খুশি বলা যায় বলে লাগাম ছাড়া কথা বলাবলি হচ্ছে’ ছবি : অভিনেতার ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া



 
দেশের জনপ্রিয় প্রবীণ অভিনেতা আফজাল হোসেন। অভিনয় ও নির্মাণের পাশাপাশি লেখালেখিতেও হাত রয়েছে তার। প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা বিষয় নিয়ে মত প্রকাশ করেন লেখনির মাধ্যমে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে। এরপর রাস্তায় ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্ব নিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। তখন জনজীবনে কিছুটা স্বস্তির আভাস মিলেছিল বলে অনেকেই মত দিয়েয়েছিল। বর্ষীয়ান অভিনেতা আফজাল হোসেনও তেমনটাই বললেন। 

এবার ৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেসবুকের এক পোস্টে আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘কিছুদিন আগে যখন ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল, সে সময়টাতে একদিন অফিসে দাঁড়িয়ে তিন তলা থেকে সে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অবাক হয়ে দেখছিলাম। দেখছিলাম, আমাদের অনিয়মের শহর ছুঁ মন্তরে নিয়ম মেনে চলতে পারে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এই শহরের রাস্তায় কীভাবে চলাচল করে তা সকলেরই জানা। নিয়ম মানা কারও ধাঁতে নেই। দীর্ঘকাল ধরে অনিয়ম করতে করতে স্বাভাবিক চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়ম না মানা। যে যত বেয়াড়া সে তত স্মার্ট এই শহরে। রাস্তায় চলাচলের যতরকম নিয়ম আছে, কেউই মানতে পছন্দ করে না। করতো না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, চাইলেই সব পারা যায়। মনে কথাটা ভেসে ওঠে, বাঙালী শক্তের ভক্ত নরমের যম। যে মানুষ যতো উল্টোপাল্টা সমস্ত শহরজুড়ে বীরদর্পে করে থাকে, একই মানুষ ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে চলাচলের সময় চিরকালের ভদ্রলোকের মতো কড়ায় গণ্ডায় নিয়ম মানে। সেদিন উপর থেকে দেখছিলাম, কেউ এগোনোর জন্য একটু অনিয়ম করতে চেয়ে গাড়ির মাথাটা লাইন থেকে অল্প বের করে দিতে চেয়ে যেই দেখেছে সামনে একটু দূরে কোনো ছাত্রকে দেখা যাচ্ছে, সাথে সাথে গাড়ি জায়গামতো ফিরিয়ে নিয়ে খুব ভালো মানুষ হয়ে যাচ্ছে।’

তবে এখন আবারও সেই পুরনো জ্যামের চিত্র ফিরে এসেছে রাস্তাঘাটে। রাজধানীর বেশকিছু পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থা যা ইচ্ছে তাই! এই পরিস্থিতি তুলে ধরে আফজাল হোসেন লেখেন, ‘পথ চলা স্বাধীন করে দেয়া হলো। আবার শহর ও মানুষ নিজের চলা-বলা ফেরত পেয়ে গেল। সবাই চলছে নিজের ইচ্ছামতো, বলছেও যার যার যেমন ইচ্ছা তেমন করে।’

এদিকে, বাকস্বাধীনতা নিয়েও মন্তব্য করেছেন অভিনেতা। অতীতের স্মৃতি আওড়ে আফজাল হোসেন লেখেন, ‘এক সময় সবাইকে কথা হিসাব করে বলতে হয়েছে। এখন যার যেমন খুশি বলা যায় বলে লাগাম ছাড়া কথা বলাবলি হচ্ছে। যখন বলার দরকার; বলা হয়নি, বলা যায়নি। বিড়াল হয়ে কাটানো জীবনে হঠাৎ বাঘ হয়ে দেখানোর সুযোগ মিলেছে। এখন মানুষ নিশ্চিত, নিজের গলায় বাঘের গর্জন দিলে কারও চোখ রাঙানি দেখতে হবে না বা ঘর চেপে ধরতে আসবে না কেউ।’

তিনি লেখেন, ‘আমাদের সভ্যতার ভব্যতার সীমা জানা নেই। অপমানজনক আচরণ, কথা বলায় আমাদের দক্ষতা সর্বজনবিদিত। এখন যেন বুক ফুলিয়ে অনুচিত কাণ্ড করা যায়। যেমন খুশি বলে ও করে মর্যাদা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। গতকাল দেখতে পেলাম অসম্মান করে কথা বলা মানুষ টেলিভিশন চ্যানেলে খবর হয়েছে। বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাকে পর্দায় হাজির করা হলো। টেলিফোনে দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক দাবি করা মানুষটাকে বলতে শোনা গেল, সে উচিত কাজই করেছে, কোনো অন্যায় করেনি।’
 
ক্ষোভ প্রকাশ করে এই অভিনেতা সবশেষে লেখেন, ‘দিনে দিনে নিশ্চয়ই আরও উন্নতি হবে। ইচ্ছামতো নুন-মরিচ দিয়ে স্বাধীনতা চটকে আমরা অনেকেই বিচিত্র পদের ভর্তা বানিয়ে খেতে পারব। স্বাধীনতার ভর্তা বানানোর নানা রকম রেসিপি আগ্রহ নিয়ে মুখস্ত করার মানুষ দেশে বহু আছে। সেই বহুর জন্য রেসিপি বাজারজাত করে জনপ্রিয় হতে উৎসাহী মানুষ, প্রতিষ্ঠানও কম নেই।’

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স