বাংলার আকাশে এখন ছেঁড়া ছেঁড়া, পেঁজা পেঁজা সাদা তুলোট মেঘের ছোটাছুটি। কাঁশবনে কাঁশ ফুলের দোল, শিউলি ফুলের সুগন্ধে মাতোয়ারা ধরিত্রী। আর এসব কিছুই বার্তা বয়ে আনছে শারদোৎসবের। আগামী ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে দূর্গাপুজা। চলবে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। তাই দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গোৎসব। সবাই এখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়। এদিকে নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। ৫ ও ৬ অক্টোবর এই আয়োজনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
পুরাণে দেবী দুর্গার আবির্ভাব তত্ত্বে বলা হয়েছে, সমাজের সব অশুভ শক্তির বিনাশে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আবির্ভাব। ত্রেতাযুগে অসুরকূলের দাপটে সমগ্র মানব জাতি যখন উৎকণ্ঠিত, তখন মানব কল্যাণে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন ভগবান শ্রী রামচন্দ্র। তিনি পিতৃ আদেশে বনবাসে থাকাকালীন লঙ্কেশর রাবণ তার স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে লঙ্কায় লুকিয়ে রাখেন। লঙ্কাপুরী থেকে প্রিয়তমা স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান করেন। বসন্তকালের পরিবর্তে শরৎকালে দেবী দুর্গাকে আহ্বান করায় এ পূজাকে ‘অকালবোধন’ বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই শরৎকালে দুর্গাপূজার প্রচলন হয়।
সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, অসুরশক্তি বিনাশকারী দেবী দুর্গার আরাধনার মধ্য দিয়ে সমাজ থেকে সব পাপ দূর হয়ে যাবে, সমাজে ফিরে আসবে শান্তি।
এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসছেন দোলা বা পালকিতে চড়ে। অর্থাৎ মহামারী, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধ ও অতিমৃত্যু। যাতে বিপুল প্রাণহানি অনিবার্য। দেবী দুর্গা বিদায় নেবেন হাতিতে, শাস্ত্র মতে যা দেবীর উৎকৃষ্টতম বাহন। দেবীর গমন হাতিতে হলে মর্ত্যলোক ভরে ওঠে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে। পূর্ণ হয় ভক্তদের মনোবাঞ্ছা।
শারদোৎসবের বার্তা পেয়ে প্রবাসী বাঙালি হিন্দুরা মেতে উঠেছে দুর্গোৎসবের হরেক আয়োজনে। প্রথমেই আসা যাক পোশাক পরিচ্ছদের ব্যাপারে। প্রবাসে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্ম স্যাটেলাইটের কল্যাণে হাল ফ্যাশন সম্পর্কে সম্যক অবগত। তরুণীদের কাছে ভারতীয় টিভির বিভিন্ন সিরিয়ালের নায়িকাদের নাম দিয়ে তৈরি পোশাক বেশ জনপ্রিয়। তরুণীরা অনলাইনে অর্ডার দিয়ে নিউইয়র্কের বিভিন্ন বাঙালি ফ্যাশন হাউজ থেকে তা সংগ্রহ করেছে। কেউ কেউ আবার দেশ থেকে পরিচিতজনদের মাধ্যমেও তাদের পছন্দের পোষাক সংগ্রহ করেছে। যেসব তরুণীর পছন্দ পাশ্চাত্য ফ্যাশন, তারা ছুটছে আমেরিকান শপিং মলগুলোতে।
তরুণদের পছন্দ হাল ফ্যাশনের পাঞ্জাবি ও বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিচ্ছদ। তারাও নিউইয়র্কের ফ্যাশন হাউজ, অনলাইন অথবা দেশ থেকে তা আনিয়েছে। বাচ্চারা তাদের পোশাক ও জুতার জন্য মা-বাবার হাত ধরে ছুটছে শপিং মলগুলোতে। কেউ কেউ ছুটছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি ফ্যাশন হাউজগুলোতে।
এদিকে নিউইয়র্কের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে শেষ মুহূর্তের আয়োজনে হিন্দু সম্প্রদায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটিতে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। আটলান্টিক সিটির ১০৯, উত্তর ফ্লোরিডা এভিনিউর প্রবাসী হিন্দুদের মন্দিরে আগামী ৯ অক্টোবর (বুধবার) সপ্তমী পূজার মধ্য দিয়ে মূল উৎসব শুরু হবে। ১২ অক্টোবর (শনিবার) বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে এবারের দুর্গাপূজার সমাপ্তি হবে।
দুর্গাপূজার বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে থাকছে তিথি অনুযায়ী পূজা-অর্চনা, অঞ্জলি, ধর্মীয় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মহাপ্রসাদ বিতরণ ইত্যাদি।
দুর্গাপূজার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রবাসী সিনিয়র শিল্পীদের সাথে প্রবাসে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম অংশগ্রহণ করবে। তাই মহড়াতে অংশগ্রহণকারীদের কল-কাকলীতে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মন্দির প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকে।
দুর্গাপূজার বিভিন্ন আয়োজনে নিউজার্সি ছাড়াও নিউইয়র্ক, পেনসিলভেনিয়াসহ অন্যান্য রাজ্য থেকেও প্রবাসী হিন্দুদের ব্যাপক সমাগম ঘটে।
প্রবাসীদের মনে শারদোৎসব উপলক্ষে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের যে বহিঃপ্রকাশ, তার সাথে দেশের শারদোৎসবের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের তুলনাই মেলে না। তারপরও ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো’র জন্য প্রবাসে এসব আনন্দ-আয়োজনও কম কীসের?
টাইমস স্কয়ার দুর্গাপূজা ৫ ও ৬ অক্টোবর
উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক পূজার পরও এবার ঐতিহাসিক উদ্যোগ নিউইয়র্কের প্রাণ কেন্দ্র টাইম স্কয়ারে দুর্গোৎসব। এবারেই প্রথম ম্যানহাটনের হৃদয় টাইম স্কয়ারে বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায় শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করবে বলে জানা যায়। নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন ‘বেঙ্গলী ক্লাব’ ও বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্যোগে মহাসমারোহে দুর্গোৎসব-এর আয়োজন। আগামী ৫ ও ৬ অক্টোবর টাইম স্কয়ারে এই মহাযজ্ঞের মহা উৎসব। প্রথমবারের মতো এই আয়োজনে কমিউনিটিতে আনন্দধারা বইছে। প্রবাসী বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
বেঙ্গলী ক্লাব ইউএসএ ও হিন্দু কমিউনিটি অব নিউইয়র্ক আয়োজিত শারদ উৎসবের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, চেয়ারম্যান প্রদীপ সাহা, চিফ অ্যাডভাইজার রতন তালুকদার, প্রেসিডেন্ট শিতাংশু বিকাশ গুহ, কনভেনর দীনেশ মজুমদার, ম্যানেজমেন্ট ও এডিটরিএল দীপক দাস, কো-কনভেনর তাপস সাহা, চিফ কর্ডিনেটর আর পি দত্ত স্বপন, মেম্বার সেক্রেটারি রণজিৎ সরকার, জয়েন্ট সেক্রেটারি পল্লব সরকার প্রমুখ।