‘আমি দোষী নই, মাননীয় বিচারক’। ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আদালতের বিচারক নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসকে তার অধিকার পড়ে শোনানোর পর তিনি জনসমক্ষে অভিযোগপত্রের পাঠ প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে এভাবেই নির্দোষ দাবি করেন।
এরপর এরিক অ্যাডামস জামিনে মুক্তি পান এবং আদালতের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেননি এদিন। বরং তিনি তার আইনজীবীর পাশে দাঁড়ান, যিনি সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেন।
এদিকে মেয়রের বিরুদ্ধে নির্বাচনি তহবিলে বিদেশিদের অর্থ গ্রহণ এবং ঘুষ-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন নগরবাসী। বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটির একজন মেয়রের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগের কারণে নিউইয়র্কবাসী বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন। তাদের মতে, আশাকরি মেয়র নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে নিউইয়র্কবাসীকে সম্ভাব্য কলঙ্কের হাত থেকে রক্ষা করবেন।
নিউইয়র্ক সিটির ৩৬০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় কোনো মেয়রকে গুরুতর অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত করা হলো।
এদিকে ২ অক্টোবর আগামী বুধবার মেয়র অ্যাডামসকে আদালতে হাজির হতে হবে বলে ফেডারেল ম্যাজিস্ট্রেট জজ ক্যাথারিন পারকার মেয়রকে জানিয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে এ মামলার সাক্ষীদের আশপাশে না যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সহকারী ইউএস অ্যাটর্নি সেলিয়া কহেন বলেন, তবে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মেয়র সবার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। অন্যদিকে মেয়রের আইনজীবী এলেক্স স্পাইরো বলেন, বুধবার আদালতে হাজির হয়ে মামলাটি খারিজের আবেদন জানানো হবে।
এদিকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি ৫৭ পৃষ্ঠার বিশাল অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এরিক অ্যাডামস প্রায় এক দশক ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং তার নিজের জনগণের স্বার্থের চেয়ে বিদেশী নাগরিকদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কিন্তু ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আদালতে হাজির হয়ে এরিক অ্যাডামস নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
তবে এরিক অ্যাডামস নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মেয়র যিনি ফেডারেল অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। পাঁচটি অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে, তিনি ৪৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।
অ্যাডামসের উপর চাপ বাড়ছে : এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে পদত্যাগ করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন, অনেকেই তার নিজের প্রতিরক্ষা এবং শহর চালানোর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তবে তিনি কিছু পুরানো সমর্থকদের কাছ থেকে সমর্থনও পেয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন যে তিনি তার মেয়রের কাজ চালিয়ে যেতে চান।
এদিকে মেয়রের ভবিষ্যৎ কী হবে তা অস্পষ্ট। তবে জনমতের চাপ বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই ভাবছেন নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল কি হস্তক্ষেপ করবেন। রাজ্য আইনের অধীনে, তাকে পদ থেকে সরানোর ক্ষমতা তার রয়েছে।
২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে হোকুল বলেন, নিউইয়র্ক সিটির জন্য এটি একটি অত্যন্ত কঠিন দিন। অভিযোগগুলি একটি উদ্বেগজনক ধারাবাহিকতার সর্বশেষ উদাহরণ যা অনেক নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে অস্থিরতার অনুভূতি তৈরি করেছে।
যদি মেয়র পদত্যাগ করেন বা অপসারিত হন, নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানে উইলিয়ামস অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তিনি তারপরে একটি বিশেষ নির্বাচনের ঘোষণা করার জন্য তিন দিন সময় পাবেন, যা ৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে হবে।