‘দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর আমি ও আমার ভাই বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারিনি। বাবাকে বাবা বলে জড়িয়ে ধরতে পারিনি। এ নিদারুণ কষ্ট আমরা জানি। অবশেষে ন্যায় বিচার পেলাম। একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। আমরা বিচার পেলাম দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর পরে।’
২৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত ১০টা ১মিনিটে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমদ হত্যা মামলার দুই আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। পরে অধ্যাপক এস তাহের আহমদের মেয়ে অ্যাডভোকেট সেগুফতা তাব্বাসুম আহমদ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন। বাবার হত্যার বিচার পাওয়ার উদ্দেশেই আদালতের আইনজীবী হয়েছিলেন সেগুফতা।
সেগুফতা বলেন, ‘২০০৬ সালে যখন এ ঘটনা ঘটে, তখন আমি একটা ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষ, প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলাম। আমার ইচ্ছা অন্য রকম ছিল। যখন এটা (হত্যাকাণ্ড) ঘটল, তখন আমার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে আইনজীবী হওয়া দরকার। কোর্টে যারা থাকে তাদের সংস্পর্শে আসতে হবে। তাহলে বাবার হত্যার বিচারকাজ তরান্বিত হবে।’
আপনার অন্য কোনো পেশায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সেগুফতা তাব্বাসুম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘না- আমি আইনের ছাত্রী ছিলাম। আইনের ছাত্রী হয়ে আমাকে কোর্টের বারান্দায় দৌড়াতে হলো। আমি চাইলে ইউএনডিপির ইন্টারন্যাশনাল কোনো অর্গানাইজেশনে শিক্ষকতায় যেতে পারতাম। বিভিন্ন দেশে ঘুরতে পারতাম। এই ধরনের ইচ্ছে ছিল। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আইনগত বিশ্লেষণে কাজ করতে পারতাম। কত কিছু করা যেত। কোর্টে গিয়ে আইনজীবী হতে হবে কেন? এটাই তো আইনে পড়ার একমাত্র কাজ না।’
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পরে বাবা হত্যার ন্যায় বিচার পেলাম। বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ বিভাগ স্বাধীন। বিশেষ করে আইনজীবী, পুলিশ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তারা অনেক খরব প্রচার করেছেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।
পরে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। অপর দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দুজন হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আবদুস সালাম ও সালামের আত্মীয় নাজমুল। রিভিউ খারিজের আদেশ কারাগারে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আসামিরা। সেই প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়ে যায়। নাকচের সেই চিঠি গত ৬ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। পরে জেল কোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
ঠিকানা/এসআর