Thikana News
২২ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সিটিজেনদের সহায়ক উদ্যোগ কাম্য

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সিটিজেনদের সহায়ক উদ্যোগ কাম্য
সুশৃঙ্খলভাবে জীবন পরিচালনার জন্য মানবসভ্যতার একটি অতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আইন। আইনের প্রয়োগ ধনী, গরিব, ক্ষমতাবান, ক্ষমতাহীন এবং রাষ্ট্র ও জনগণ সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগযোগ্য বটে। এর ব্যতিক্রম হলে আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। বলা হয়ে থাকে, আইন অন্ধ অর্থাৎ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ এমনভাবে করা হয় যে আইনের বিধান সমভাবে সবার ক্ষেত্রে পক্ষপাতহীনভাবে প্রযোজ্য। তবে এ ক্ষেত্রে যাদের মাধ্যমে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়, তাদের মানসিকতাও নিরপেক্ষ হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

অন্যথায় আইন যতই নিরপেক্ষ হোক, প্রয়োগের ত্রুটির কারণে নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন হতে বাধ্য। সে কারণেই রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন পরিষদের ক্ষমতা পরস্পর বিযুক্ত হওয়া অতীব প্রয়োজন, যাতে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষের পক্ষপাতিত্বের সুযোগ না থাকে। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সময়, পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। আইন যেহেতু মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ, সাবলীল ও নিরাপত্তা প্রদানের জন্য, তাই আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইন প্রণীত হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় আইনের যথাযথ সুফল প্রাপ্তি অধরা রয়ে যেতে পারে। সে কারণেই পূর্বের অনেক বিদ্যমান আইন সময়, পরিস্থিতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সংশোধন আবশ্যক, যাতে আইনের পরিপূর্ণ সুফল সকল পক্ষ অনায়াসে ভোগ করতে পারে।

বর্তমান বিশ্বকে গ্লোবাল ভিলেজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। একসময় নিজ গ্রামে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনাও গ্রামের অন্য প্রান্তের লোকজনের জানতে অনেক সময় পার হয়ে যেত। অথচ বর্তমানে বিশ্বের এক প্রান্তের খবর মুহূর্তের মধ্যে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যায়। ইন্টারনেট, ফোন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, জীবনমুখী বিভিন্ন অ্যাপ ইত্যাদি যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। এসবের মাধ্যমে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অর্থ, টেক্সট, ছবি ইত্যাদি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছানো সম্ভব। তাই কিছু কিছু আইনের বিধান এসবের সঙ্গে মিল রেখে প্রণয়ন করা হলে সকল পক্ষ এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। ফলে সময় ও অর্থ ব্যয় ব্যতিরেকেই সেবাগ্রহীতা সুফল ভোগ করতে পারে। আইন ও বিধিবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যই যেহেতু সকল মহলের কল্যাণ সাধন, তাই তথ্যপ্রযুক্তির সুফল কাজে লাগিয়ে যেসব বিষয় সহজে সমাধান করা সম্ভব, আইনে সংশোধনী এনে সহজ করা হলে সেবাদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সহজে তথ্য আদান-প্রদান করে উভয়পক্ষ উপকৃত হতে পারে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সঙ্গেই একে অন্যের কূটনৈতিক মিশন চালু রয়েছে। তাই কূটনৈতিক মিশনগুলোও এ ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারে।

আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনসভা সদা সচেষ্ট থাকলেও আইনের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় ভুক্তভোগী যতটা উপলব্ধি করে, আইনসভার গোচরে না আনলে অনেক ক্ষেত্রে আইনের সেসব বিষয় আইনসভার অগোচরেই থেকে যায় এবং ভুক্তভেগী এর কুফল বহন করে বেড়ায়। গ্লোবাল ভিলেজ হওয়ার কারণে বহু লোক পৃথিবীর বহু দেশে প্রয়োজনের তাগিদে অবস্থান করে থাকে। বিদেশে অবস্থানকালীন দেশীয় আইন মোতাবেক তাদের অনেক কাজ (প্রয়োজনীয় কাগজপত্র) সম্পাদনের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিজ দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে সংগ্রহ ও ত্রুটি সংশোধন করতে পারলে ভুক্তভোগীর সময় ও অর্থের অনেক সাশ্রয় হয়। পক্ষান্তরে দেশে এসব কাজে যারা নিয়োজিত, সাশ্রয়ী সময়ে তারা অন্য কাজে নিয়োজিত হলে ত্রিপক্ষীয় কল্যাণ সাধিত হয়। দূতাবাসের মাধ্যমে বা দেশে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগ করে সহজে সমাধান করা যায় এমন কিছু বিষয়, যেমন পাসপোর্টের অনেক পাতা অব্যবহৃত থাকা সাপেক্ষে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে নতুন পাসপোর্টের পরিবর্তে দূতাবাসের মাধ্যমে মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। ব্যবহারকারী বিদেশে অবস্থানকালীন দেশে তার পুলিশ ভেরিফিকেশন আদৌ প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এ ছাড়া নাম, পিতার নাম, জন্মতারিখ ইত্যাদি ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দূতাবাসকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

পেনশন-সংক্রান্ত বিধিবিধানে কিছু পরিবর্তন আনায় এককালীন সমুদয় পেনশন গ্রহণ সম্ভব নয়। পেনশনের অর্ধেক অংশ এককালীন এবং বাকি অর্ধেক অংশ প্রতি মাসে গ্রহণ করতে হয়, যা গ্রহণকারীর সুবিধার্থে সরাসরি গ্রহীতার ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। এটি অত্যন্ত প্রসংশনীয় উদ্যোগ কিন্তু বছর বছর সশরীরে হাজির হয়ে লাইফ ভেরিফিকেশনের বিধান থাকায় বিদেশে অবস্থানকারী বা বয়স্ক অসুস্থ ব্যক্তির পক্ষে তা ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি হিসাবরক্ষণ অফিসে একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পেনশনভোগীদের ছবি ও তথ্যাদি সংগ্রহ করা হলে বছর শেষে সদ্য তোলা ছবি পোস্ট এবং অধিকতর স্বচ্ছতার জন্য ভিডিও কলের মাধ্যমে লাইভ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করার জন্য বিধি সংশোধন করা হলে উভয় পক্ষের সময় ও অর্থ সাশ্রয় সম্ভব।

পেনশনের সামান্য অর্থপ্রাপ্তির জন্য প্রতিবছর ইউরোপ, আমেরিকা থেকে যেতে হলে সারা বছরের প্রাপ্ত অর্থ খরচ করেও যাতায়াতের খরচ মেটানো সম্ভব নয়। যদিও দূতাবাসের মাধ্যমে অ্যালাইভ সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়, তবে সে বিষয়টি সবাই অবগত না থাকায় অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হয়। তাই বিধি সংশোধনপূর্বক প্রস্তাবিত বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলে বিদেশে অবস্থানকারী পেনশনাররা উপকৃত হবে। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় সেবাদানকারী পেনশনারদের কষ্ট ও অর্থ সাশ্রয়ে বিধিতে এহেন সামান্য পরিবর্তন আনা হলে বার্ধক্যে জর্জরিত পেনশনাররা খুবই উপকৃত হবেন। বিষয়টি সহৃদয় বিবেচনা করা যেতে পারে।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও গবেষক। কুইন্স ভিলেজ, নিউইয়র্ক।

কমেন্ট বক্স