সম্প্রতি ঢাকার একটি আসনের উপনির্বাচনে বিরোধী এক প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় দেওয়া বিবৃতির জেরে ১৩ কূটনীতিককে তলবের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে উঠে এসেছে। ওই ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনও স্থান নেই।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশে আলাদা করে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না বলেও ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ২৬ জুলাই (বুধবার) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন বেদান্ত প্যাটেল এসব কথা বলেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সম্প্রতি ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার নিন্দা জানানোর জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউসহ ১৩টি বিদেশি মিশনের প্রধানদের তলব করেছে। এবং এর আগে গত ২০ জুলাই তারা আবাসিক সমন্বয়কারীকেও ডেকে পাঠায়। আপনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং সকল পশ্চিমা মিত্র দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীরাও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু সরকার করছে ঠিক উল্টোটা। তারা ঢাকায় কূটনীতিকদের তলব করছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য এবং প্রতিক্রিয়া কি?
জবাবে প্যাটেল বলেন, আমরা আগেই স্পষ্ট করেছি যে, গণতন্ত্রে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার স্থান নেই এবং যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নেয় না। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করি।
তিনি আরও বলেন, আমি উল্লেখ করতে চাই- আমরা সবসময়ই বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছি। এটা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের অভিন্ন অগ্রাধিকার এবং প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তা নিজেই বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা তাদেরও লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেওয়া পশ্চিমা মিশনের ১৩ দূতকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়।
এর আগে উপনির্বাচনের দিনই হিরো আলমের ওপর হামলার সেই ঘটনা ঘটে। সেদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে ভোটকেন্দ্রের বাইরে হিরো আলমের ওপর হামলার ওই ঘটনা ঘটে।
এমনকি মারধরের হাত থেকে বাঁচতে হিরো আলমকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করতেও দেখা যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে রামপুরার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-সহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে গত ১৯ জুলাই একটি যৌথ বিবৃতি দেয়।
এছাড়া হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস।
ঠিকানা/এসআর