ঠিকানা অনলাইন 
সম্প্রতি আক্রমণের শিকার হওয়া নির্দিষ্ট কোনো মাজার, নির্দিষ্ট কোনো দরবারের বিষয়ে না বললেও সামগ্রিকভাবে এসব ভাঙার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ‘নীতিগত প্রতিবাদ’ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বলেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ টক শোতে এক প্রশ্নের জবাবে নিজ দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। এই আলোচনা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খালেদ মুহিউদ্দীন। ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ ইউটিউব চ্যানেলে। এতে উপস্থাপকের মুখোমুখি হন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাজার ভেঙে ফেলছে দুর্বৃত্তরা। ‘তৌহিদি জনতার’ কথা বলে আক্রমণ করা হচ্ছে বিভিন্ন পীরের দরবার। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জামায়াতের আমির বলেন, এসব কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না তাদের দল। তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার, দ্বীনের ব্যাপারে কোনো বাড়াবাড়ি চলবে না। কোনো মানুষের ওপর কারও আদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। জোর করে কোনো কিছু প্রয়োগ করা আমরা পছন্দ করি না। আইন হাতে তুলে নেওয়াকে আমরা সমর্থন করি না।’
বাংলাদেশে ইসলামের আদর্শ সামনে রেখে শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, আরও কিছু রাজনৈতিক দল সক্রিয়। তাদের কারও কারও সঙ্গে জামায়াতের বিরোধও আছে, সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কোন দলটিকে প্রকৃত ইসলামভিত্তিক দল হিসেবে গ্রহণ করবে- খালেদ মুহিউদ্দীনের এমন প্রশ্নে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটি পরিবারে একাধিক সদস্য থাকেন। তাদের সবার মত এক হয় না। তার পরও পরিবার চলে। পরিবার ভেঙে যায় না। মতের ভিন্নতা থাকবে, এটাও সৌন্দর্য। ভিন্নতা যখন থাকে, তখন বৈচিত্র্য চিন্তা করার সুযোগ থাকে।’ তিনি দাবি করেন, এমন ভিন্নতা সকল ধর্মেই থাকে। তবে যারা সত্যিকারের ইসলামের অনুসারী, তারা এক কোরআন মানেন, এক আল্লাহ মানেন, এক রাসুল মানেন- এই তিন জায়গায় কোনো দ্বিমত নেই। বাকি জায়গায় একটু এদিক-সেদিক হতেই পারে, বলেন জামায়াত প্রধান। গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। সেদিন দুপুরেই সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মাঠে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান। তাতে অংশ নিয়েছিলেন জামায়াতের আমির। অথচ তখনো হাসিনা সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ সংগঠন ছিল তারা।
সেনাপ্রধান কখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন- এ প্রসঙ্গে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ টক শোতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ৫ আগস্ট দুপুরে ফোন আসে সেনাবাহিনী থেকে। এর আগে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এমনকি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সেদিনই প্রথম সরাসরি দেখা হয়, দাবি করেন জামায়াত প্রধান। একটি ‘নিষিদ্ধ’ সংগঠনের নেতাকে সেনানিবাসে যেতে বলা হচ্ছে, বিষয়টি তো ফাঁদও হতে পারত, এমন শঙ্কা ছিল কি না- জানতে চাইলে খালেদকে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আমি মনে করিনি। সরকার হঠাৎ করে পয়লা আগস্ট আমাদের যখন নিষিদ্ধ করে, আমরা সেটা গ্রহণ করিনি, সঙ্গে সঙ্গে বর্জন করি। সবাই আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের সকলে নিন্দা করেছে। কারণ এটা ছিল ইস্যু ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কৌশল। এটা কেউ গ্রহণ করেনি। কাজেই সেনাপ্রধানের দাওয়াত আমরা অস্বাভাবিক মনে করিনি।’
রাজনীতির পথে চলতে কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন, আবার কখনো বিএনপির সঙ্গে জোট করে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ- এ ক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে দলটির আমির বলেন, ‘যখন দেশে কোনো ধরনের ফ্যাসিজম এসেছে, যখন অন্যায় করেছে সরকার, তখন আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। একই সুরে যারা প্রতিবাদ করেছে, সংগত কারণেই তাদের সঙ্গে আমাদের বিষয়টি মিলে গেছে। আমরা চারদলীয় জোট করেছিলাম, যেটা পরে ২০ দলীয জোটে রূপান্তরিত হয়েছিল। তবে এখন আমরা কোনো জোটে নেই।’
‘জোটে আমরা গিয়েছি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে, আদর্শিক কোনো ঐক্য ছিল না।’ যোগ করেন তিনি। এই হিসেবে আদশর্গত না হলেও আবার কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিকভাবে জোটবদ্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা রয়ে যায় কি না, এ বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাথে হবে কি না, এটা বলা কঠিন। কারণ যে আওয়ামী লীগ তার নিজের দেশের মানুষকে, জনগণের কেনা অস্ত্র দিয়েই গুলি চালাতে পারে, গণহত্যা করতে পারে, তাদের নিজেদের রাজনীতি করাই তো চিন্তাভাবনার বিষয়।’
ঠিকানা/এনআই
