Thikana News
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রবাসী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন কমিটির সেমিনার

দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রবাসী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন কমিটির সেমিনার


প্রবাসী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। প্রবাসী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন কমিটি ইউএসএ ইন্কের উদ্যোগে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টায় জুইশ সেন্টারে ওই সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার মধ্যে রয়েছে : ১. দেশে প্রবাসীদের প্রটেকশন বা সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে ‘প্রবাসী সুরক্ষা আইন’ নামে একটি বিশেষ আইনের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ২. তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে দেশে প্রবাসীদের অভিযোগ মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে প্রবাসী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে এবং দেশের প্রতিটি জেলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দ্বারা বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. এই বিশেষ ট্রাইব্যুনালের নিয়ন্ত্রণাধীনে একটি মোবাইল কোর্ট ব্যবস্থা ঢাকা এয়ারপোর্টে চালু করে দ্রুততার সঙ্গে প্রবাসীদের অথবা যেকোনো যাত্রীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে।
সংগঠনের সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী জানান, বাংলাদেশ সরকার বরাবর আমাদের দাবিগুলো হলো : ১. প্রবাসীদের কল্যাণে দেশে একটি বিশেষ আইন চাই, যার নাম হবে ‘প্রবাসী সুরক্ষা আইন’। ২. বিশেষ আদালত চাই- ‘প্রবাসী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’। ৩. প্রবাসীদের দায়েরকৃত প্রতিটি অভিযোগ এবং মামলা-মোকদ্দমা ‘প্রবাসী সুরক্ষা আইন’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে ‘প্রবাসী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ দ্বারা বিচার হতে হবে। ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রবাসীদের প্রতিটি অভিযোগ এবং মামলা-মোকদ্দমা অবশ্যই নিষ্পত্তি হতে হবে। প্রবাসীদের প্রধান প্রধান সমস্যার দিকে লক্ষ রেখে এবং তা সমাধানের লক্ষ্যে ‘প্রবাসী সুরক্ষা আইন’ এর খসড়া রূপরেখা ও প্রস্তাবনা আমরা তৈরি করি। প্রবাসীদের সমস্ত ন্যায়সংগত দাবি এই প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বরাবর আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপনা এবং প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ‘প্রবাসী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করি ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। সবাই মিলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকি। এখন নতুন সরকার এসেছে, এই সরকারের কাছে আমরা দাবিগুলো জানাব।
প্রবাসী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন কমিটি নিউইয়র্ক ইউএসএর অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট মাহাবুবার রহমান বকুল বলেন, এই বিদেশে আমরা সবাই প্রবাসী। সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বসবাস করেন জীবন ও জীবিকার তাগিদে। এই প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সহায়তা করে, অথচ এই প্রবাসীরা দেশে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। বিমানবন্দরে হয়রানি, রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজি, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা হয়রানি, বাড়ি-ঘর, জমি-জমা বেদখল এবং দেশে এসে অনেক সময় প্রবাসীরা নির্মমভাবে খুনের শিকার হন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতি এবং বিচার বিভাগে অধিকতর মামলাজটের কারণে তা নিষ্পত্তিতে বিলম্বিত হওয়ায় প্রবাসীরা দেশের প্রচলিত আইনে প্রচলিত আদালতে কোনো ন্যায়বিচার পান না। প্রবাসীদের কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবনায় সব বলেছি। নতুন সরকারের কাছে বলব, প্রবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের জানমাল এবং সম্পদ রক্ষায় বিচারকগণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দ্রুততার সঙ্গে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি জেলায় ‘প্রবাসী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করতে হবে। ‘প্রবাসী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ এর বিচারক হবেন জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজের সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।
তিনি বলেন, প্রবাসী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক গৃহীত প্রতিটি অভিযোগ বা মামলা-মোকদ্দমা গ্রহণের পর তা পরবর্তী ৯০টি কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। কোনো প্রবাসী বিদেশে অবস্থানকালীন দেশে থাকা তাদের বাড়ি-ঘর এবং মূল্যবান জায়গা-জমি নিয়ে শরিকানদের মধ্যে বা অন্য কারও সঙ্গে জমির মালিকানা বা স্বত্ব নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে অথবা প্রবাসীর অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিষয়ের উল্লেখ হলে ওই মর্মে অবগত হওয়া মাত্রই বিবাদীদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী বিদেশ থেকেই অনলাইনের মাধ্যমে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পূর্বে যদি কোনো প্রবাসী দ্বারা এক বা একাধিক দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলা চলমান থাকে এবং ওই মামলাগুলো যদি ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারভুক্ত হয়, তবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী চাইলে ট্রাইব্যুনালে আবেদনের মাধ্যমে এখতিয়ারভুক্ত অন্যান্য আদালতে চলমান মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে ট্রান্সফার করে নিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিধি মোতাবেক দ্রুততার সঙ্গে বিচার পেতে পারেন, সেরূপ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
অ্যাডভোকেট মাহাবুবার রহমান বকুল বলেন, কোনো প্রবাসী নিজ দেশে অবস্থানকালে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিদ্বয় দ্বারা আর্থিক বা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অথবা খুন হলে তার বিচারের দাবিতে প্রবাসে অবস্থানরত যেকোনো আত্মীয়স্বজন প্রবাসে থেকেই ওই অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনলাইনের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। যেমন থানায় এজাহার দাখিল করতে পারবেন, ‘প্রবাসী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’-এ মামলা দাখিল করতে পারবেন। ওই কাজে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করলে প্রয়োজনে তারা টেলিটক বা ফোন কল ব্যবহার করতে পারবেন। অভিযোগকারী বা বাদীকে সশরীরে কোর্টে হাজির না হয়েও প্রবাসে থেকে অনলাইন ভিডিও বা ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে ‘প্রবাসী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে’ সাক্ষ্য বা জবানবন্দি প্রদান করতে পারবেন। এই সাক্ষ্য বা জবানবন্দি কোর্ট দ্বারা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য হবে এবং তার ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত বা রায় দিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, একজন প্রবাসী বিদেশে অবস্থানকালে নিজ দেশে রেখে যাওয়া সম্পত্তি, জমিজমা, সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিকটতম আত্মীয়কে Power of Attorney বা আমমোক্তারনামা মূলে ক্ষমতা অর্পণ করে পরবর্তীতে প্রায়ই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই একজন প্রবাসী নিজেই যাতে বিদেশে অবস্থান করেই নিশ্চিন্তে দেশে Property বা জমি-জমা ক্রয় করতে পারেন এবং ক্রয়কালীন সময়ে সবকিছু নিজ চোখে দেখতে পারেন, সেই লক্ষ্যে সরকারি ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে শুধু প্রবাসীদের সুবিধার্থে Online Video Conference  ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। Online Video Conference এর মাধ্যমে প্রবাসী বিদেশ থেকে যাতে দলিল রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম দেখতে পারেন, ক্রয়কৃত জমির দলিলের সঠিকতা দেখতে ও পড়তে পারেন, দাতার স্বাক্ষর যাচাই প্রভৃতি সবকিছু   Video Conference বা Virtual Testimony এর মাধ্যমে স্বচক্ষে অবলোকন করে জমির ক্রয়কৃত মূল্য প্রতিনিধির মারফত বিক্রেতাকে নিশ্চিন্তে প্রদান করতে পারেন, এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের কোনো অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত ঘুষ-দুর্নীতি বা চাঁদাবাজির অভিযোগ অথবা দেশের যেকোনো বিমানবন্দরের কোনো সরকারি কর্মচারী দ্বারা হয়রানি ও লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ ‘প্রবাসী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে’ কোনো প্রবাসী দ্বারা উত্থাপন ও দায়ের করা হলে অভিযোগটি যদি অভিযোগকারী কর্তৃক প্রমাণিত হয়, তবে অভিযুক্ত আসামিকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত এবং একই সঙ্গে ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান সুনিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়েরে কোনো Sanction এর প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশের কোনো মহিলা শ্রমিক বহির্বিশ্বের কোনো দেশে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হলে অথবা খুনের শিকার হলে তা বাংলাদেশ সরকার অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অত্যাচারিত প্রবাসী মহিলা শ্রমিককে উদ্ধার করার চেষ্টা করতে হবে। খুন হলে মৃত ব্যক্তির মরদেহ ত্বরিৎ গতিতে দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে অবহিত করে দোষী ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ সরকারকে অটল থাকতে হবে। ‘প্রবাসী সুরক্ষা আইন’ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টির বিরুদ্ধে ‘প্রবাসী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ কর্তৃক কোনো ফৌজদারি প্রকৃতির অভিযোগ গৃহীত হলে তা বিচার চলাকালীন আসামিরা জামিনে মুক্ত থাকার হকদার হবে না।

কমেন্ট বক্স