নিউইয়র্কে সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গাইলেন শত শত প্রবাসী। গত ৮ সেপ্টেম্বর রোববার বিকালে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে থেকে এই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
সমাবেশে দলমত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের প্রবাসীরা যোগ দেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ পরিচালনার আহ্বান জানান। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সময় তাদের হাতে ছিল বাংলাদেশে পতাকা। জাতীয় সঙ্গীত এবং জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের যে কথা উঠেছে তার নিন্দা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি এ ধরনের ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
সমাবেশে ‘তুমি কে আমি কে-বাঙালি বাঙালি’, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’ এবং ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগান দেন অংশগ্রহণকারীরা। স্লোগানের মাঝে চলে গণসংগীত ও কবিতা আবৃত্তিও।
সমাবেশে আয়োজকদের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত পতাকা, জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার যে সুগভীর একটি চক্রান্ত চলছে, তার প্রতিবাদ জানাতে আজকের এ সমাবেশ। এখানে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে, দ্রোহের কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে ও মুক্তিযুদ্ধের রণসংগীত গেয়ে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশে চলমান ষড়যন্ত্রকে আমরা বাস্তবায়িত হতে দেব না এবং যে কোন মূল্যে প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর।
প্রবীণ টিভি ব্যক্তিত্ব বেলাল বেগ বলেন, ৩০ লাখ বাঙালির রক্ত আর তিন লক্ষাধিক নারীর সম্ভ্রম হারানোর মধ্য দিয়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা আর অবিস্মরণীয় জাতীয় সংগীত ৫৩ বছর পর একাত্তরের পরাজিত শক্তির চেলা-চামুন্ডারা কোন সাহসে পরিবর্তনের কথা বলছে?
সমাবেশের ‘অঙ্গীকারপত্র’ পড়ে শোনান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতা মিথুন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা বিরোধিতা করি অপরাজনীতিকে। আমরা বিরোধিতা করি বিরাজনীতিকরণের দুরভিসন্ধিকে। আমরা বিরোধিতা করি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ঘৃণ্য সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তকে। আমরা বিরোধিতা করি অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতার পালাবদলের সব অপচেষ্টাকে।
এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে ‘উদীচী যুক্তরাষ্ট্র শাখার আয়োজনে ডাইভারসিটি প্লাজায় হাজারো কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। সাংস্কৃতিক কর্মী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, কবি, লেখক, খেটে খাওয়া প্রবাসীরা সপরিবারে।
সুব্রত বিশ্বাসের সমন্বয়ে আলিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সৈয়দ মুহম্মদ উল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা খুরশিদ উল ইসলাম, আর্টিস্ট ওবায়দুল্লাহ মামুন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মুজাহিদ আনসারী প্রমুখ। বক্তারা বলেন, আমরা দায়বদ্ধ মানুষের প্রতি। আমাদের অর্জন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখনই কোনো আঘাত আসবে, আমরা তার প্রতিবাদ করব।
জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা কারও দানে পাওয়া নয় উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, “লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া আমাদের এ অর্জন। এই অর্জনকে কোনোভাবেই কলঙ্কিত করা যাবে না। যখনই কেউ মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সঙ্গীতে আঘাত করবে, আমরা তার প্রতিবাদ করবই।
জাতীয় সঙ্গীত ছাড়াও দেশের গান পরিবেশিত হয় সমবেত কণ্ঠে। ছোট্টমনিরাও ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে ঘৃণা প্রদর্শনের এই কর্মসূচিতে।