শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ সেপ্টেম্বর এক মাস পার করল। এখনো ঠিক হয়নি ড. ইউনূস কত দিন ক্ষমতায় থাকবেন। কিন্তু এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, ড. ইউনূসের পর কে ক্ষমতায় আসবে? বিএনপি-জামায়াত, নাকি অন্য কেউ। সরকারে থাকা নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছে, সেই কারণগুলো সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র-জনতার সরকার দেশের নেতৃত্বে থাকবে। এ জন্য কমপক্ষে তিন বছর লাগবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৭-এর শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনের গুঞ্জন রয়েছে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলছে, নির্বাচন আয়োজনের আগে পুলিশ বাহিনীকে নতুন করে সাজানো, নির্বাচন কমিশন নতুন করে গঠন করা, জুডিশিয়ারিতে পরিবর্তন আনার মতো কতগুলো বুনিয়াদি সমস্যার সমাধান অতীব জরুরি। এগুলো সংস্কার ব্যতীত একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে না। এ জন্য ড. ইউনূস সরকার রাষ্ট্রের চারটি গুরুত্বপূর্ণ খাত নির্বাচন-ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগে সংস্কারের মতো বিষয়গুলোতে বেশি মনোযোগী হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই খাতগুলো হাসিনা সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতসহ ডান-বাম সব রাজনৈতিক দলই এই খাতগুলো সংস্কারে পরামর্শ দিয়েছে।
ওই সূত্র আরও বলছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরি হচ্ছে। সংবিধান পুনর্গঠনের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হবে। ওই কমিটি ঠিক করবে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ। সেই কমিটি ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করবে। ধারণা করা হচ্ছে, ড. ইউনূস সরকারের মেয়াদ তিন বছর হতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দলের চিফ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না- এ বিষয়গুলো যুক্ত থাকাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একজন প্রধানমন্ত্রী টানা কতবার ক্ষমতায় থাকবেন- এ বিষয়টিও যুক্ত হচ্ছে বলে সূত্রটির ভাষ্য।
এদিকে ভোটের মাঠে ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমীকরণ তৈরি হয়েছে। একসময়কার বিএনপি-জামায়াতে দূরত্ব তৈরি হয়েছে ভোট প্রসঙ্গ নিয়ে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ড. ইউনূসের ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না থাকায় বিএনপি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা দ্রুত নির্বাচন চেয়েছে। অন্যদিকে ইউনূস সরকারকে স্বাগত জানিয়ে সংস্কারের জন্য সময়ের কথা বলেছে জামায়াত। অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পার হওয়ার পর মাঠে অনেকগুলো দৃশ্য উপস্থাপন হচ্ছে। ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে গঠন হচ্ছে বৃহৎ ইসলামি জোট। দলগুলোর সঙ্গে ইতিপূর্বেকার মতবিরোধের দূরত্ব কেটে যাচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন ঝুলে থাকা নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে। আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ জামায়াতও সিদ্ধ হয়েছে। বন্যা ইস্যুতে মানুষের সহানুভূতি পেতে পূর্ণশক্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, ছাত্রদল, যুবদল সবাই নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ত্রাণ কাজে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে। একই কাজ করছে জামায়াতও। সব দলই ভোটারদের কাছে টানতে ইস্যু নিয়ে চাঙা রাজনীতি করে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ড. ইউনূস যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন, তত দিন চলবে বিএনপি-জামায়াতের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর রাজনৈতিক পূর্ণশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে দল দুটি। অধিক স্বাধীনতায় তারা যদি রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার বা কোনো ভুল করে, তাহলে জনবিচ্ছিন্নও হতে পারে। তারা আরও বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পর কোন দল ক্ষমতায় আসবে, তা এখনো ধারণা করা মুশকিল। কারণ শেখ হাসিনার পতন কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলনে হয়নি। ছাত্র, শ্রমিক, সাধারণ মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। হাসিনার বিদায়টা যেমন ‘মিরাকেল’ আকারে হয়েছে, যা কয়েক ঘণ্টা আগেও ধারণা করা যায়নি; ঠিক তেমনি ড. ইউনূসের পর কোন দল বা কারা ক্ষমতায় আসবে, তাও ধারণার বাইরে থাকবে। মিরাকেল আকারেই কিছু হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।