উর্দুভাষী পাকিস্তানি রাষ্ট্রনায়ক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার ভাষা উর্দুকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনের বিরুদ্ধে শুরু হয়ে গেল বাংলাভাষীদের প্রাণের আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন। তেমনি করে ছেষট্টির (১৯৬৬) আন্দোলন এবং ১৯৭১-এর স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় চাকরিজীবনে আমাকে কর্মরত ভাইদের সঙ্গে খুলনার জঙ্গলে ঢুকে তৎকালীন আমলাতান্ত্রিক সামরিক পাকিস্তানি সরকারের অমানবিক প্রশাসনিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল।
উন্নয়নের প্রকৃত ধারায় উনিশ ও বিশ শতকে আজ বিশ্বের অনেক দেশই এগিয়ে চলেছে সঠিকভাবেই বলা যায়। যে আমেরিকাকে নিয়ে একসময় সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাসহ অপসামাজিক, ধর্মীয় অনেক বিষয়েই সমালোচনা করা হতো, আজ মানুষের সেই দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে গেছে। মানুষ সঠিকভাবেই বিশ্লেষণ করতে পারছে জীবনে চলার পথ কোনটা সঠিক, আর কোনটা নয়। আমাদের বাংলাদেশকে নিয়েও আজ অনেক চিন্তা উঠে এসেছে বিশ্বজুড়ে। যে উদ্দেশ্য ও আশা নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তার সুফল কতটুকু পেয়েছি আমরা? দেশের জন্য পূর্বের সরকারগুলোর উন্নয়নমূলক অবদান আছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিগত ৫৩ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও দেশে যে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অবক্ষয় চলছে, তা ভীষণ কষ্টকর। এগুলো আমাদের আশাহত করছে।
২০২৪ সালে তরুণ ছাত্রসমাজ কোটাবিরোধী যে আন্দোলন শুরু করল, তার যৌক্তিকতা অবশ্যই আছে, যা দেশের গুণীজনেরাও স্বীকার করেছেন। এমনকি আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাসহ বিদেশি অনেক রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও সমর্থন করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক অবস্থানে আমরা এসে গেলাম, যখন সেই কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় নানা ধরনের সহিংসতার মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে গাড়ি ভাঙচুর, বাসভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকানসহ নানা প্রতিষ্ঠানও ধ্বংস করা শুরু হলো। তাতে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে, সেই অহিংস আন্দোলনকারী ছাত্রদের মাঝে দুষ্কৃতকারী, মানবতাবিরোধী একটি শ্রেণিচক্র ঢুকে পড়েছে উদ্দেশ্যমূলক কোনো চক্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, যাতে করে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক মানে যাওয়ার পথে অবক্ষয় ঘটানোর চেষ্টা করা যায়।
আন্দোলনের সময় দেখা গেল, দেশের অনেক পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে আলোচনা-সমালোচনামূলক বিভিন্ন প্রতিবেদন ও অনুষ্ঠান। কিন্তু কেউই সঠিকভাবে উল্লেখ করতে পারল না, দেশের উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে কারা এই ছাত্র আন্দোলনের মাঝে সহিংসতার ইন্ধন জুগিয়ে সক্রিয় ছিল এবং এখনো আছে। আর কত দিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এদের চিহ্নিত করতে?