বাংলাদেশে স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় প্রবাসীদের মাঝে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর এসব ব্যাংক রক্ষায় আশ্বাস দিলেও গ্রাহকরা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না গ্রাহক। সবচেয়ে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো- অ্যাকাউন্টে যত টাকাই থাকুক না কেন, ব্যাংক দেউলিয়া হলে একজন গ্রাহক বীমার আওতায় মাত্র দুই লাখ টাকা ফেরত পারেন।
প্রবাসীরা বলছেন, লাখ লাখ প্রবাসী তাদের কষ্টে অর্জিত অর্থ দেশে রেমিট্যান্স হিসাবে পাঠান। সেই অর্থ বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে সঞ্চিত আছে। কোন ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে তা উল্লেখ না থাকায় সব গ্রাহকদের মাঝে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। সঞ্চিত অর্থ হারালে তাদের পথে বসতে হবে।
নিউইয়র্ক প্রবাসী ক্যাবি শাহ আলম তালুকদার বলেন, গত ৮ বছরে তিনি দেশে ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। বাড়ি করবেন এজন্য সব টাকাই তিনি দেশের একটি ব্যাংকে জমা রেখেছেন। তিনি ১০ ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় তিনি উদ্বিগ্ন দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স স্কিমের আওতায় গ্রাহককে এক লাখ টাকার পরিবর্তে ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু যাদের লাখ লাখ টাকা ব্যাংকে আছে, তাদের কি হবে? তার মানে তার মত একজন গ্রাহকের কোটি টাকা লোপাট হলেও তিনি ফেরত পাবেন দুই লাখ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?
প্রবাসী আরিফুল ইসলাম সৈকত বলেন, ব্যাংক দেউলিয়ার আশঙ্কায় তিনি চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তার নির্ঘূম রাত কাটছে। ব্যাংকের টাকা হারালে তিনি পথে বসে যাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুব শিগগির দেশে যাব। যেসব ব্যাংকের সুনাম আছে, সেসব ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর করবো।
জালিয়াতি ও লুটপাটে দেশের ১০ ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এসব ব্যাংক রক্ষার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ৮ সেপ্টেম্বর রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আমরা আশা করি না কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে। তবে এটাও ঠিক অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে আছে। কিন্তু আমরা কাস্টমারের স্বার্থ রক্ষা করবো। এই ব্যাংকগুলোকে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবো।
তিনি আরো বলেন, দেউলিয়ার পথে ১০টা ব্যাংকের মতো। সেটা কথা নয়, এগুলোকে আমরা টার্ন অ্যারাউন্ড করবো ইনশাআল্লাহ। দরকার হলে মার্জ করবো। কাস্টমার আলটিমেটলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স স্কিম এক লাখ টাকার পরিবর্তে ২ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক খাতের অবস্থার কারণে গ্রাহকদের কোনো ক্ষতি হবে না উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতের ৯৫ শতাংশ গ্রাহকের স্বার্থ নিশ্চিত করা হবে। বিশ্বের কোনো দেশেই ব্যাংকিং খাতের আমানতের শতভাগ গ্যারান্টি দেয় না। আমরা ৯৫ শতাংশ গ্রাহকের স্বার্থ নিশ্চিতের গ্যারান্টি দিচ্ছি।
দেউলিয়াত্বের পথে থাকা ১০ ব্যাংকের নাম উল্লেখ না করলেও গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করা হয়নি। সেটা এস আলমের হোক বা সালমান এফ রহমানের হোক। কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়নি। যদি কেউ এস আলমের সম্পত্তি কিনে নেন, তবে নিজ দায়িত্ব কিনবেন, তার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক নেবে না বলেও সতর্ক করেন গভর্নর।
টাকা ছাপানো প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, আমরা টাকা ছাপাবো না। তার মানে হচ্ছে, আমরা যদি টাকা ছাপিয়ে সব ব্যাংকের সব টাকা শোধ করতে যাই তাহলে আমাদের লক্ষ কোটি টাকা ছাপাতে হবে বা আরও বেশি। সেটা কাম্য নয়। যাদের লিক্যুডিটি শর্টেজ আছে, ব্যাংকিং খাতের লিক্যুডিটি দিয়েই ইনোভেটিভ ওয়েতে তাদের লিক্যুইডিটি সাপ্লাই করবো।
এদিন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব নীতি সমালোচিত হয়েছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে।