কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যা ঘটনায় ‘রাজনৈতিক সুবিধাবাদীরা’ বাংলাদেশের মতো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পায়তারা করছে বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তবে তার ভাষ্য,‘সেখানে বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি হবে না। ৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) রাজ্যের সচিবালয় 'নবান্ন'তে আয়োজিত একটি প্রশাসনিক নিরীক্ষা বৈঠকের পর এ কথা বলেন মমতা।
শিক্ষানবিশ এক চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গে সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বিচারে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখন মমতার পদত্যাগ দাবি করছে। এই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের ঘটনারও তুলনা করা হচ্ছে ভারতে।
সেই প্রসঙ্গ ধরে বৈঠকে মমতা বলেন, ‘তাদের বোঝা উচিত, বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্র। ভারত আলাদা রাষ্ট্র। এটি আপনারা মাথায় রাখতে ভুলে গিয়েছেন। বাংলাদেশ একটি অন্য রাষ্ট্র, তাদের আমরা সম্মান করি। তাদের ভাষাকে সম্মান করি। এখানে বাংলাদেশ হবে না।’
বিদেশে বসে একটি নির্দিষ্ট মহল তৃণমূলের সমালোচনা করছে মন্তব্য করে মমতা বলেন, ‘বাংলার সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু করা হচ্ছে। যারা এখানে পড়াশোনা করেছেন, বড় হয়েছেন, তারাই এখন অন্য জায়গায় চলে গিয়ে বাংলাকে নিয়ে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন। তারা একপাক্ষিক তথ্যের ভিত্তিতে বাংলার সুনামহানি করছেন। তারা উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনছেন না।’
এদিকে আর জি কর কাণ্ডের বিচার না হওয়ায়, আসছে দুর্গাপূজা উদযাপন না করার জন্য সোশাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু হয়েছে।
এই প্রচারের বিরোধিতা করে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে আপনারা যদি রাস্তায় থাকেন, অনেক মানুষের তো সমস্যা হয়। অনেক এলাকায় অনেক বয়স্ক মানুষ আছেন। আলো লাগালে, তাদের ঘুমের সমস্যা হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মও রয়েছে রাত ১০টার পর মাইক বাজানো নিয়ে। তা সত্ত্বেও তো আমরা সব ছেড়ে দিয়েছি।এক মাস তো হয়ে গেল। আমি অনুরোধ করব, পূজায় ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন। সিবিআইকে অনুরোধ করব, তাড়াতাড়ি বিচারের ব্যবস্থা করুন।’
এছাড়া মাথা ঠাণ্ডা রেখে এবং সতর্কতার সাথে প্রশাসন চালাতে জেলা প্রশাসকদের পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। সংকট সুরাহায় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতেও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
চলমান আন্দোলনে পুলিশেল ভূমিকার প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার সমস্যা কী পুলিশ দেখবে না? ভাগ্যিস পুলিশ এই কটা দিন সামলেছে। শান্তিপূর্ণ থেকেছে। মার খেয়েছে। নিজেদের রক্ত দিয়েছে, কিন্তু কারও রক্ত নেয়নি। কিন্তু মনে রাখবেন, পুলিশেরও সংসার আছে, তাদেরও পরিবার আছে। কিন্তু পুলিশকে অ্যাকশন নিতে বারণ করেছি।’
এদিকে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সোমবার তৃতীয় দিনের মত শুনানি হয় দেশটির সুপ্রিম কোর্টে। শুনানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-সিবিআই বলেছে, পুলিশের ফরেনসিক প্রতিবেদন তারা বিশ্বাস করতে পারছে না।তাই এ ঘটনায় যতটুকু নমুনা সংরক্ষিত আছে, দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (এইমস) এবং ভারতের পুনেসহ একাধিক জায়গায় সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করতে চায় তারা।
সিবিআইয়ের এই আবেদনে সম্মতি এসেছে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ থেকে। দেড় ঘণ্টার শুনানি শেষে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর পরবর্তী তারিখ রেখেছে আদালত।
ঠিকানা/এএস