শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্স, ইটালি, ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডস। ২০২২ সালে পিসা গবেষণার পর জার্মানির শ্রেণিকক্ষেও মোবাইল নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হচ্ছে। জার্মানির একটি বিদ্যালয়ে ছোটখাট এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব দানা বাঁধছে। এখানে সকলের প্রিয় আসক্তি মোবাইল ফোন সম্ভবত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা আর ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও চলছে।
জার্মানিসহ নানা দেশে বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ নিয়ে অনেক দিন ধরে বিতর্ক চলছে। অনেক বিদ্যালয় ইতোমধ্যে শ্রেণিকক্ষে মোবাইলের ব্যবহার সীমিত করেছে। কিন্তু বিরতির সময় কী হবে? নরটরফের এই বিদ্যালয়ে সেই চেষ্টাই হচ্ছে। সপ্তাহে দু‘দিন মোবাইল পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
বিদ্যালয়টির শিক্ষক সিল্কে উইপিশ বলেন, ‘তরুণ এবং মধ্যবয়সি সহকর্মীদের মাধ্যমে এটা শুরু হয়েছিল। তারা প্রতিবাদ করে বলেছিলেন কখন ফোন ব্যবহার করবেন তা কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারবে না।’
অভিভাবকদের প্রতিনিধি জানিন স্টল্ট বলেন, ‘বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো- না- কোনোভাবে খেয়াল রাখতে হয় যে সন্তান বিদ্যালয়ে পৌঁছেছে বা বাড়ি ফিরেছে। ফলে কোনো অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবে না বলা ঠিক নয়।’
শিক্ষার্থী ম্যাক্সিমিলিয়ান ফরস্টার অবশ্য মনে করেন, ‘মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা ভালো। কারণ, বিরতির সময় আমি এটি অনেক ব্যবহার করি।’ এখন শিক্ষার্থীরা বিরতিতে খেলাধুলা এবং আলাপচারিতায় বেশি মন দেয়। এতে মনোযোগ এবং জানার সক্ষমতা বাড়ে। বিশেষ করে যাদের এসব ব্যাপারে দুর্বলতা আছে। কিন্তু ডিজিটাল শিক্ষার কী হবে?
শিক্ষক এবং মিডিয়া পডকাস্টার ম্যাথিয়াস ডিয়র্কস বলেন, ‘আমি মনে করি, শিক্ষক হিসেবে মানুষকে শিক্ষিত করা আমার দায়িত্ব। তারা এটা তখনই করতে পারে, যখন তারা বিদ্যালয়ে এবং ভুল করার মতো জায়গা তাদের রয়েছে।’
ম্যাথিয়াস ডিয়র্কস এই বিদ্যালয়ের দুই মিডিয়া হিরোর একজন। ডিজিটাল দক্ষতা উৎসাহিত করা তার কাজ। শ্লেসভিগ-হলস্টাইন রাজ্য এজন্য সপ্তাহে ছয় ঘণ্টা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু এক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ছয়টি ট্যাবলেট রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এমেলি হাইনেন বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল স্কুলে পরিণত হতে চাই এবং ক্লাসে আরো ডিজিটাল উপায় চালু করতে চাই। অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, আইপ্যাড বা অন্য কোনো ট্যাবলেট পায় না। এর অর্থ হচ্ছে, তাদের সেলফোনই ক্লাসে সবচেয়ে সহজলভ্য ডিভাইস।’
এর অর্থ কি স্কুলে স্মার্টফোন চালু রাখা? এ ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী পন্থাও রয়েছে। শিক্ষার্থী টিম পিটারসন বলেন, ‘আমি এর আগে নয় ম্যুনস্টারে ছিলাম এবং সেখানে মাইনক্রাফ্টে তথ্যপ্রযুক্তি নামে একটি ক্লাস ছিল। আসলেই সেটার এমন নাম ছিল এবং সপ্তাহে একদিন ৪৫ মিনিট মাইনক্রাফ্ট ভিডিও গেমে কিছু বানানো এবং শেখা যেতো। তারপর শিক্ষক সেগুলো দেখে নম্বর দিতো। এই পন্থা সৃজনশীলতা বাড়ায়।’
নরটরফে এখনো সংস্কৃতি বিপ্লব হয়নি। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আবারো স্মার্টফোন আনতে পারে। কেউ কেউ বলেন, সাময়িক নিষেধাজ্ঞা তাদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ধরণ বদলে দিয়েছে। তবে পুরোপুরি নিষিদ্ধের পরিকল্পনা হয়নি। অর্থাৎ, নরটরফ জার্মানির বাকি অংশের মতোই রয়ে গেছে।
ঠিকানা/এসআর