Thikana News
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি

সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি


ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে সরকার পতনের ২৭ দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ২ সেপ্টেম্বর সোমবার তিনি প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তার পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্ট গ্রহণের পর এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়। স্পিকারের পদত্যাগে দেশে এক সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়া হলেও স্পিকারের পদ তাৎক্ষণিভাবে শূন্য হয় না। পরবর্তী স্পিকারের শপথ পড়ানো পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থেকে যান। তবে সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে পদত্যাগ করছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকারের পদ শূন্য হওয়ায় পরবর্তী সংসদের এমপিদের শপথ পড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়মে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর স্পিকার হলেন রাষ্ট্রের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী। সংসদ ভেঙে দিলেও তার পদ যায় না। পদত্যাগ করলেও নতুন স্পিকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত তিনি পদে আছেন বলে ধরে নিতে হয়। পরবর্তী সংসদের সদস্যদের শপথ পড়ানোর ভার তার ওপরই বর্তায়। এমনকি রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে স্পিকারকেই রাষ্ট্রপ্রধানের ভার নিতে হয়।
স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের পদ কীভাবে শূন্য হবে এ বিষয়ে সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ সদস্য পদ না থাকা, মন্ত্রী হওয়া, অপসারণের প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হওয়া, পদত্যাগ করা অথবা কোনো সাধারণ নির্বাচনের পর অন্য কোনো সদস্য তার কার্যভার গ্রহণ করার কারণে স্পিকারের পদ শূন্য হবে। তবে একই অনুচ্ছেদে বলা আছে, এসব বিধান সত্ত্বেও ক্ষেত্রমতে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে।
এ বিষয়ে সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, স্পিকারের পদত্যাগ একটা নজিরবিহীন ঘটনা। তবে শূন্যতা মানেই শূন্যতা, অর্থাৎ তার পদত্যাগে দেশে সংসদের স্পিকার বলে আর কেউ নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এমন ঘটনা আমরা দেখেনি। তাই এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে কী হবে তা যারা দেশের ক্ষমতায় বা সরকারে আসবেন, তারাই ভালো বলতে পারেন। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর অনেক কিছুই সংবিধানসম্মতভাবে হচ্ছে কি? সেভাবেই পরবর্তী সময়ে তারাই বুঝবেন কাকে দিয়ে স্পিকার বা এমপিদের শপথ বাক্য পাঠ করানো হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলছেন, স্পিকারের পদত্যাগে একধরনের শূন্যতা তো তৈরি হয়েছেই। কেন পদত্যাগ করলেন, এটা গ্রহণই বা কেন করলেন, আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। উদাহরণ দিয়ে যদি বলি, কালকে যদি খোদা নাখাস্তা রাষ্ট্রপতি মারা যান বা অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন কে? তিনি আরও বলেন, পার্লামেন্ট না বসা পর্যন্ত তিনি স্পিকার আছেন। আমাদের কনস্টিটিউশনটা লিখিত। অলিখিত সংবিধানের কিছু অংশ থাকে রিটেন। আবার রিটেন কনস্টিটিউশনের কিছু বিষয় থাকে কনভেনশন। সেটা হচ্ছে, পরবর্তী পার্লামেন্ট না হওয়া পর্যন্ত স্পিকার থাকবেন। তার পদত্যাগের ফলে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নাই এবং এ ধরনের শূন্যতার দৃষ্টান্ত এই প্রথম। সম্ভবত উপমহাদেশে এই প্রথম।
স্পিকার পদত্যাগ করেছেন, তা গৃহীতও হয়েছে; ডেপুটি স্পিকার জেলে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে কে দায়িত্ব পালন করবেন? এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন স্পিকার দায়িত্ব গ্রহণ না করবেন, ততক্ষণ ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি জেলে আছেন ঠিক, কিন্তু তিনি তো কেবল অভিযুক্ত এখনো। উনি জেলে থাকলে তো সমস্যা নাই। পরবর্তী স্পিকার যিনি আসবেন, তার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে শূন্যতা নাই। রাষ্ট্রপতি যখন থাকবেন না, তখন শূন্যতা আসবে। শূন্যতা তৈরি হলে সে ক্ষেত্রে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাইতে হবে। যেভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সময় তাদের মতামত নেওয়া হয়েছিল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, স্পিকারের পদত্যাগের ফলে একটি সাংবিধানিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, এটা ঠিকই। তবে সংবিধানের ৭৪ ধারায় তো বলাই আছে স্পিকার পদত্যাগ করলেও পরবর্তী সংসদের স্পিকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান স্পিকারই বহাল থাকবেন বলে গণ্য করা হবে, অর্থাৎ বর্তমানে পরিস্থিতি এমন সৃষ্টি হয়েছে; তাতে স্পিকার না থেকেও আছেন। সংবিধান তা-ই বলছে। এতে অনিশ্চয়তা আছে বলে প্রশ্ন তো থেকেই যায়। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন অনেক কিছু করতে হচ্ছে, যা সুস্পষ্টভাবে সংবিধানে নেই। এখানে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ কাজ করে। যদি সেটা প্রয়োজনীয় হয়, তাহলে স্পিকার না থেকেও পরবর্তী শপথ কে পড়াবেন সেখানেও ডকট্রিন অব নেসাসিটির মতো বিষয়টি এসে পড়ে, সেভাবেই এ অনিশ্চয়তা বা শূন্যতাকে সেভাবে পূরণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্পিকার নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। পরে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল স্পিকার নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর পর থেকে তিনিই এ দায়িত্বে টানা রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধেও রংপুরে হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু ১৫ আগস্ট গ্রেপ্তার হয়ে হত্যা মামলায় রিমান্ডে রয়েছেন।

কমেন্ট বক্স