মেয়াদ পূর্তির আগেই পদত্যাগ করছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। আজ দুপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা আসতে পারে। সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে ইসি’র পক্ষ থেকে গতকালই নিশ্চিত করা হয়েছে। ৫ সদস্যের ইসি’র একজন ৫ই আগস্টে সরকার পতনের পর আর অফিস করছেন না। তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। সিইসি ও অন্য ৩ কমিশনার এতদিন অফিস করে আসছিলেন। তাদের পদত্যাগের দাবি ছিল নানা মহল থেকে। বুধবারও ইসির পদত্যাগের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের সামনে কর্মসূচি পালন করা হয়।
ইসি সূত্র বলছে, আজ বৃহস্পতিবারই পদত্যাগের ঘোষণা আসতে পারে। পদত্যাগের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন কমিশনাররা। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে ব্যক্তিগত মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন তারা।
অনেক আগে থেকেই অফিস করছেন না নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান।
তবে পদত্যাগের বিষয়ে মুখ খোলেননি সিইসিসহ কোনো কমিশনার। বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অফিস থেকে বের হওয়ার সময় তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। সিইসি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ১২টার সংবাদ সম্মেলনে সবকিছু জানানো হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কবে দেখা করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যাবো।
এদিকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ ও ইসির সংস্কারের দাবিতে ইসির সামনে গতকাল বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন ভোটাধিকারবঞ্চিত নাগরিক সমাজ। ইসির সংস্কার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। দাবিগুলো হলো- আউয়াল কমিশনের পদত্যাগ, ২০১৮ সালের কেএম নূরুল হুদা কমিশনের বিচার, ২০১৪ সালের কাজী রকিব কমিশনের বিচার, বিগত সরকারের দালাল কর্মকর্তাদের অপসারণ এবং দক্ষ, যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের পদায়ন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আগেও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চেয়ে কয়েকবার ঝটিকা বিক্ষোভ হয়েছে।
২০২২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন। তার আগে সরকার নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়ন করে, যেখানে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নামের প্রস্তাব নিয়ে ৫ সদস্যের ইসি নিযোগ দেন প্রেসিডেন্ট। নির্বাচন কমিশনাররা হলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান।
আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেয়ার কয়েক মাসের মাথায় বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে। তবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ভোট বর্জনের নীতিতে থাকায় সেই সংলাপে অংশ নেয়া থেকেও বিরত থাকে। এরপর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ছাড়াই চলতি সালের ৭ই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে ইসি। এর আগে বিভিন্ন উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের সাধারণ নির্বাচনে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে সিইসির স্ববিরোধী বক্তব্য কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দেয়। এ ছাড়া ভোটের ফলাফল পরিবর্তন নিয়েও সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার বাড়ানো, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়েও সমালোচনায় পড়ে সংস্থাটি। অন্যদিকে আউয়াল কমিশনের আয়োজিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা। বিরোধী দলগুলোর বর্জন করা এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
ঠিকানা/এসআর