Thikana News
১৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪


 

বিন্দু বিন্দু জলে সিন্ধুর সৃষ্টি

বিন্দু বিন্দু জলে সিন্ধুর সৃষ্টি


বয়োজ্যেষ্ঠ ভদ্রমহিলা। বয়স ৯০-এর বেশি। আন্টি বলে ডাকতে চাই। নিষেধ করেন। দাদু সম্বোধন এনজয় করেন। এ দেশে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছেন। সাতজন ছেলেমেয়ে। সাতটি প্রান্তে থাকেন। মেনে নেন-তারা কাজে ব্যস্ত, আমার খোঁজ নেনÑআমি এটুকুতেই খুশি।
দাদু খুবই স্বাস্থ্যসচেতন। যখনই পারেন তখনই শরীরচর্চা করেন। মাঝেমধ্যে দেখা হয়। উপমহাদেশের গল্প করেন। ইতিহাস বলেন। মন দিয়ে শুনি।
সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান। উনি কষ্ট পান। ছেলেমেয়েদের কথা ভাবেন। দেশের মানুষের কথা ভাবেন। দাদু একটা কিছু করতে চান। কী সেটা, দাদু? এখানে সুযোগ-সুবিধা আছে। ছেলেমেয়েদের বলেছি। অন্তত ১০০ ডলার দেশে পাঠিয়ে দাও। যারা এখনো হাসপাতালে। আমি বিস্মিত হই। আমার চোখে আমার এই দাদু প্রকৃত দেশপ্রেমিক।
মহিলাটি আমার পরিচিত। একমাত্র ছেলে। মা-ছেলে সারাক্ষণ টিভির পর্দায় চোখ। কিছু একটা খুঁজছেন। একটা ভাবনা প্রতিনিয়ত মাথায় আসছে। উভয়েরই জন্মদিন। দুজনেরই যেন সময় কাটছে না। আম্মু, এবার ২০২৪, কোনো গিফট দেবে না। মায়ের চোখের দিকে ছেলে তাকিয়ে থাকেন। কেন বাবা? দেশে আন্দোলনে আহতদের জন্য পাঠিয়ে দাও।
আমি ঘটনাটি জানতে পারি। উৎসাহিত হই। আমরা তিন বান্ধবী। একসঙ্গে বসে গল্প করছি। যদি একটা কিছু করতে পারি। যে মেয়েটির পুতুল খেলার কথা-সে হারিয়ে গেছে। যে ছেলেটি একাদশ শ্রেণিতে পড়ে-চযুংরপং, ঈযবসরংঃৎু পড়তে যাবে-মা-বাবা জানেন না, সে কোথায় আছে। যে ছেলেটি ঘড়ৎঃয ঝড়ঁঃয অথবা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীÑতার অবস্থান কোথায়? বেঁচে আছেন কি না মা-বাবা জানেন না। এমনই আরও অনেক অজানা, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা আছে।
বাবা-মা কি জানতেন এই বিছানায় বাকিটা জীবন তার ছেলে পঙ্গু হয়ে থাকবে? বাবা-মায়ের চোখের সামনে এক দৃষ্টিহীন সন্তান থাকবে? যে সন্তান পৃথিবীতে পঙ্গু হয়ে আসেনি, অন্ধ হয়ে জন্মায়নিÑবাকিটা জীবন তা মেনে নিতে হচ্ছে। বাবা-মায়ের এই ক্ষত আদৌ কোনো দিন সেরে উঠবে?
তিন বান্ধবী মনস্থির করলেনÑআমাদেরও অভিব্যক্তি ভিন্ন হোক। সন্তানের জন্মদিন অথবা আমাদের ম্যারেজ ডের প্রয়োজন নেই। তাদের কথা ভাবতে চাই। যাদের আত্মত্যাগে আজকের এই বাংলাদেশ। যারা আহত সুস্থ হয়ে উঠবে, ভালো থাকবেÑএই আমাদের প্রত্যাশা।
প্রবাসে আমরা যারা আছি, তাদের কাছে আমার অনুরোধ-আমরা ওদের পাশে দাঁড়াই। হাত বাড়িয়ে দিই। আমরা যারা উপার্জনশীল, ওদের সহযোগিতা করি। ওদের প্রয়োজনের চেয়ে আমাদের এই সাহায্য খুবই সামান্য। আমাদের সদিচ্ছা-সহযোগিতায় হয়তো অনেকেই এগিয়ে আসবে।
যে সন্তানটি আহত, পঙ্গু-অন্ধ অথবা যেমনটি হোক-সে আমার সন্তান-আপনার সন্তান-আমাদের সন্তান। আমাদের সন্তান নতুন চোখে উদ্দীপনায় এগিয়ে যাবে। আসুন, ওদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করি। সুস্থতার লক্ষ্যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিই। আমাদের সন্তান আজ পৃথিবীর কাছে একটি বিস্ময়।
আমি বিশ্বাস করিÑএরা কেউ না কেউ আমার-আপনার সন্তানের বন্ধু! ভাগনের বন্ধু। ভাইয়ের বান্ধবী। দেবরের বন্ধুর ছেলে। কলিগের ছেলে অথবা মেয়ে। আরও অনেক পরিচয়। সেই সূত্র ধরে আমরা সহজেই এটা করতে পারি। আমাদের এই প্রয়াস সহজেই শুরু করতে পারি।
আমার-আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগই যথেষ্ট। এটা খুবই সামান্য এবং বলতে গেলে বিন্দু। যারা আমাদের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করলেন, তাদের জন্য আমরা এতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে পারব না?
১০০ ডলার অথবা ২০০ ডলার অথবা যেমনটি হোক-ওদের জন্য যথেষ্ট নয়। খুবই সামান্য, কিন্তু মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি দায়িত্ব। আর এটা তো ঠিকÑবিন্দু বিন্দু জলে সিন্ধুর সৃষ্টি।
লেখক : ফরমার অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ। ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। নিউইয়র্ক প্রবাসী।

কমেন্ট বক্স