Thikana News
০৭ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

গণহত্যা, গণঅভ্যুত্থান, গণলুট ও অতীতের পাঠশালার গল্প

গণহত্যা, গণঅভ্যুত্থান, গণলুট ও অতীতের পাঠশালার গল্প



 
টাইটানিক ডুবে গেছে
হিটলার বেঁচে নাই
ফেরাউনের গল্প জানি
লাউকে কদু ডেকে যাই।
একটা নরম আলোর ভোরে প্রাণভরে শ্বাস নেবার জন্য যে লড়াই তা ফিকে হয়ে গেছে চারদিকে ঘটে যাওয়া বদ হাওয়ার উল্লাসে। তবে স্বপ্নদোষের বেশে বুড়িগঙ্গার জলে জলাঞ্জলি দেবার যাতনার ভারে নুয়ে যেতে চাই না এখনই-যেহেতু সুদীর্ঘকাল চাষ করা ধুতরা বনে গোলাপের আলাপ সহসাই শোনার আকাক্সক্ষাকে উচ্চাভিলাষী বলেই মানি। নিমেষেই সার্ফ এক্সেলে কাপড়ের দাগ মোছা গেলেও মগজের স্বভাব মুছতে সময়ের প্রয়োজন। সেই সময় দীর্ঘায়ুর সারিতে দাঁড়িয়ে উল্লাস না করুক, না করুক ক্ষতের বিস্তার, রক্তের ফোঁটায় আগুনের কুণ্ডলী না দেখি আর, না দেখি রাহুল আনন্দের নিরানন্দ মুখ। দুর্বৃত্তপনা এক ভয়াল অসুখ, বিস্তার না ঘটুক আর ভবিষ্যতের ঘন অন্ধকারে, ভোরে, তেজি আলোয়। ভালোয় ভালোয় তারা বুঝে নিক দানবের বিনাশের কাল, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের রূপ ও রূপান্তর। এই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার শাসনামল ও পরিণতি ভবিষ্যৎ শাসকদের জন্য একটা খোলা পুস্তক বলেই ভাবিÑএই পুস্তকের পৃষ্ঠাজুড়ে মুদ্রিত ভুলের সংসারে নতুন সরকার পা ফেললে তা প্রতিবিপ্লবের সুযোগ করে দেবে। ভুলে গেলে চলবে না, আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে শূন্য থেকে বেড়ে ওঠা একটা দলÑসময়ক্রমে তা অধীনদের দাসবৃত্তিক মনোভাব বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে দানবে পরিণত করেছিল। যেকোনো মুহূর্তে তারা ইতিহাসের শিক্ষাকে তুচ্ছ করে মাথা তুলে জানান দিতে পারে হিংস্র অস্তিত্বসমেত বা আদর্শিক আওয়ামী লীগ। রক্তাক্ত জুলাই পর্বের পর স্বৈরাচারের মতো আর কোনো দানবের উত্থিত দাঁতের বাগানের খাদ্যজালে জলাঞ্জলি না হোক স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো মুহূর্ত। আগামী দিনের সরকার যদি নর্দমার ধীর স্রোতে বয়ে আসা পূর্বজদের ঢের নেতিবাচক বোধের ব্যাধিতে জড়িয়ে যায়, তবে সাধারণ মানুষের জীবন আটকে যাবে পুরোনো বৃত্তে, দুর্বৃত্তের বেতাল নৃত্যে।
কী ভাবছে তারা? যারা বেড়ে উঠেছে শেখ হাসিনার কালে ঘটে যাওয়া বদ হাওয়ার কোলে-যাদের অভিজ্ঞতা স্বৈরশাসনের বৃত্তে বেড়ে উঠেছেÑতাদের কথা শুনতে হবে। আসন্ন রাজনৈতিক সরকার যদি শেখ হাসিনার মতো দানবে পরিণত হবার খায়েশ লালন করতে শুরু করে অন্তরে ও বাইরে, তবে তা আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়াবে। দমবন্ধ জীবন থেকে মুক্তির স্বপ্ন এঁকে বাংলাদেশের মানুষ জুলাইয়ের রক্তাক্ত ময়দানে যুদ্ধ করেছে। অগণিত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের লোলুপ দৃষ্টির থাবায়। শেখ হাসিনার স্বেচ্ছাচারী মনোভঙ্গির অঙ্গে-বিভঙ্গে যে দম্ভ-অহংকারের প্রকট আকার দৃশ্যমান হয়েছে, তা আর কোনো শাসকের চরিত্রে দেখতে চায় না বাংলাদেশের জনগণ। তারা মুক্তি চায়, একটু স্বস্তিতে শ্বাস নিয়ে বাঁচতে চায় বলেই লড়াই করেছে, বিজয় লাভ করেছে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে। কিন্তু ৩৬ জুলাই বিজয় উৎসবের নামে দেশব্যাপী অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, খুনের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তা যথেষ্ট শঙ্কা জাগায় ভবিষ্যতের ভাব ও ভঙ্গির শৃঙ্খলা নিয়ে। ইনিয়ে-বিনিয়ে এসব অরাজকতা জায়েজ করার কারবারিদের দিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে সচেতন নিষ্ঠায়।
কতিপয় ছাগলের কারণে লাখ টাকার বাগানের অস্তিত্বের বিনাশ তরুণ প্রজন্ম চায় না, তারা একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়েই নেমেছে পথে। ৩৬ জুলাইয়ের বিজয় উদ্্যাপনের নামে রাষ্ট্রের স্থাপনা ধ্বংসের যে আয়োজন, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর জ্বালাও-পোড়াও-হত্যা, উগ্র ধর্মবাদীদের উল্লম্ফন, সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও উপাসনালয়ে আক্রমণের যে চেহারা, তা বেশ ভয়ংকর। অনেকেই আশঙ্কা করছেন ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনের বাস্তবতাকে। কিন্তু আগামী দিনের সরকারকে এসব অপরাধের সুষ্ঠু ও সঠিক বিচার করে প্রমাণ করতে হবে তারা জ্বলন্ত উনুন নয়, তারা জনগণের সরকার, জনসেবক। বিপরীত হলে আবার ঝুলে যাবে এই অভাগা জাতির ভবিষ্যৎ। ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবে মানুষ স্বস্তিতে বাঁচার যে স্বপ্ন দেখেছে, তা ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। ৩৬ জুলাই ২০২৪ এর বিজয়-পরবর্তী রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের যে বীভৎস উৎসব দৃশ্যমান হয়েছে, তার বিরুদ্ধে নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করছি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ মানেই জনগণের সম্পদ, কিন্তু কিছু জনগণই আবার সেই সম্পদ ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের এই বাস্তবতা মেনে নেবার মতো নয়। রাষ্ট্রের ক্ষতি করে রাষ্ট্র গড়ার যে খায়েশ, তা কেবলই বাকোয়াজ বয়ান। যে পক্ষ বা যারাই রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করুক না কেন, তারা রাষ্ট্রের শত্রু। শত্রুর সংশোধন ব্যতিরেকে তার সঙ্গে বসবাস করে সুন্দরের অপেক্ষা পথ হারাবে বেঘোরে।
জাত-ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে সহাবস্থানের ভিত্তিতে রাষ্ট্র-সমাজকাঠামো নির্মিত না হলে এসব রক্তদান বৃথা যাবে। ৭১ ও ২৪ এর মর্মান্তিক রক্তপ্রবাহের যে ইতিহাস তা ইতিবাচক নয়াবাস্তবতার মাধ্যমে অর্থবহুল করে তুলতে হবে। কিন্তু চলমান সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, সম্পত্তি দখলের যে প্রেক্ষিত, তা প্রচণ্ড মনখারাপের অধ্যায়। শোকাচ্ছন্ন মনের আরশে জমতে থাকা এসব ঝড় হয়ে আর ফিরে না আসুক জমিনে, তার আগেই লাগাম টেনে ধরতে হবে এসব ঘৃণ্য নাশকতার। যে যার ধর্ম-জাত-বর্ণ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস ও পরিচয়ে বেঁচে থাকুক, সবার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মেলবন্ধনে গড়ে উঠুক সমৃদ্ধ একটি রাষ্ট্র, দেশ।
শিল্প ও শিল্পীর অনুপস্থিতি একটি জাতি-রাষ্ট্র-দেশকে স্থবির করে দেয়। চলমান ধ্বংসলীলা থেকে বাদ যায়নি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক নিদর্শন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ও তার পরিবার। রাহুল আনন্দের ব্যথাতুর চোখের দিকে তাকালেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। রাহুল আনন্দের মতো মানুষপ্রেমী শিল্পীর এই বিবর্ণ ভাগ্যলিপি বিবেক ও বোধসম্পন্ন মানুষকে আহত করবেই। দেশের বিভিন্ন স্থানের নান্দনিক ভাস্কর্যগুলো ভাঙা হয়েছে। ব্যথাতুর হৃদয়ের ভার বেড়েই চলছে এসব হীন কর্মকাণ্ডে। অপ্রত্যাশিত, অনাকাক্সিক্ষত এই বাস্তবতায় একজন মানুষ হিসেবে এসব গর্হিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি করুণা প্রদর্শন করছি।
আমিও মাইর খাব, আমিও মাইর দিব=ক্ষমতার পালাবদলে এমনই মনস্তত্ত্ব গড়ে উঠেছে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মগজে। ফলে ক্ষমতার পালাবদলে একই প্রতিশোধপরায়ণ দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখা যায়। বিগত দেড় যুগ আওয়ামী নিপীড়নে নিষ্পেষিতরা ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামীপন্থীদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিচ্ছে বিভিন্ন উপায়ে। বিশেষ করে, আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করার যে কুপথ তা অমানবিক। বিভিন্ন জায়গায় পোড়া বাড়ি থেকে পোড়া লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটাই যদি হয় দেশের রাজনীতিকদের মতাদর্শের বাস্তবতা, তাহলে এই স্বাধীনতা কেবলই দুর্বৃত্তায়নের পালাবদলের নামান্তর। দলমত-নির্বিশেষে সহাবস্থান করতে না পারলে এসব অর্জনের গর্জন কেবলই শব্দদূষণ। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি ও জামায়াত-বিএনপির কর্তারা এসব ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে দুর্বৃত্ত বা নাশকতাকারীদের কথা বলছে। আওয়ামী লীগও গত দেড় যুগ এভাবেই নিজেদের দায় এড়িয়ে যাবার জন্য দুর্বৃত্ত ও নাশকতাকারীদের কথা বলেছে। দায় এড়িয়ে যাবার এই অভিন্ন আচরণ বেশ আশঙ্কাজনক। প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত না করা গেলে লাউকে আমরা কদু বলেই ডেকে যাব শুধু, এই রাষ্ট্রের উপকার কিছু হবে না। আশায় গুড়ে বালি নিয়ে ধুঁকতেই থাকবে জনগণ আর অপশাসনের ঔরসে জন্ম নেবে লুটপাট-খুন-অনাচার-অন্যায়ের উৎসব। তরুণ প্রজন্ম যে স্বাধীন, সার্বভৌম, পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন বুনেছে, তার পরিচর্যা করতে হবে সর্বস্তরের বোধসম্পন্ন মানুষদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার পরিণতি এঁকে।

কমেন্ট বক্স