যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও বন্যার্তদের বিপদ মুক্তির জন্য প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মের প্রবক্তা ও প্রাণপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রবাসী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা উদযাপন করেছেন।
দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারি রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত কোলজুড়ে জন্ম নিয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সনাতন ধর্মমতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতেই এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আলোড়িত করছে হাজার বছর ধরে।
নিউইয়র্কের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উদযাপন করেছেন শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি শুভ জন্মাষ্টমী। এ উপলক্ষে নিউইয়র্কের ব্রুকলিন, ব্রঙ্কস, জ্যামাইকা, উডসাইড ও জ্যাকসন হাইটসের বিভিন্ন মন্দিরে প্রবাসী বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায় আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদযাপন করে শুভ জন্মাষ্টমী।
শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত সংঘের আয়োজনে গত ২৬ আগস্ট সোমবার নিউইয়র্কের জ্যামাইকার শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরে জন্মাষ্টমী উদযাপন করা হয়। সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ ইউএসএ, ইনকের উদ্যোগে গত ২৫ আগস্ট রোববার উডসাইডের দিব্যধাম মন্দিরে শত কণ্ঠে গীতাপাঠ অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়।
জ্যাকসন হাইটসে ওঁমশক্তি মন্দির-এর আয়োজনে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি শুভ জন্মাষ্টমী মহোৎসবে সকাল থেকেই এ ছিল নানা আয়োজন। এরমধ্যে ছিলো গীতা পাঠ, অষ্টোত্তর শতনাম, শিশু কিশোরদের অনুষ্ঠানসহ ভক্তিমূলক গান। আলোচনা পর্বে ওঁম শক্তি মন্দিরের দুই পুরোহিত প্রবাস চক্রবর্ত্তী ও রণজিৎ ভাদুরী বলেন, শ্রীকৃষ্ণ যিনি দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন অগণিত ভক্তকে। হিন্দু পুরাণ মতে, অত্যাচারী ও দুর্জনের বিরুদ্ধে সাধুজনের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জন্ম নেন বিষ্ণুর অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণ এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল বাংলাদেশি প্রবাস প্রজন্মের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।
আটলান্টিক সিটি থেকে সুব্রত চৌধুরী জানান, গত ২৬ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক কাউন্টির পেনরোজ অ্যাভিনিউর প্রার্থনা হলে অনুষ্ঠিত জন্মাষ্টমী উৎসবের বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল অধিবাস, মঙ্গলাচারণ, নাম কীর্তন, গীতা পাঠ, কৃষ্ণ পূজা, পদাবলি কীর্তন, জপমালা, ধর্মীয় সংগীত ইত্যাদি। এছাড়াও বাংলাদেশে বণ্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিপদ মুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। আটলান্টিক সিটির পুলিশ কর্মকর্তা সুমন মজুমদার,
রেশমি দাশ, গংগা সাহা, পিকলু দাশ, দীপা দে জয়া, সুস্মিতা সাহা, রানা দাশ, ভবানী প্যাটেল, সুমি মজুমদার, সুনীল দাশ, বিউটি দাশ, সুপ্রীতি দে, সোমা বিশ্বাস, দীলিপ মালাকার প্রমুখ ধর্মসভার বিভিন্ন পর্বে অংশগ্রহণ করেন। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায় জন্মাষ্টমী উৎসবে যোগ দেন। তাদের সবার মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। রাত বারোটা এক মিনিটে কেক কাটার মাধ্যমে জন্মাষ্টমী উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। এদিকে গত ২৪ আগস্ট মিশিগানের হ্যামট্রাম্যাক শহরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাটির আয়োজন করে ডেট্রয়েট দুর্গা টেম্পল। হ্যামট্রাম্যাক হাই স্কুলের পার্কিং লট থেকে বিকেল ৬টায় শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। মিশিগানের বিভিন্ন শহর ডেট্রয়েট, ট্রয়, স্টার্লিং হাইটস, মেডিসন হাইটস, শিলভি টাউনশিপ, রয়েল অকসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিকেল থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে লোকজন সমবেত হন।
দুর্গা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত পারিন্দ্র চক্রবর্তী বিভিন্ন মাঙ্গলিক ক্রিয়া কর্মকাণ্ডসহ বিশেষ পূজা, অর্চনা করেন। পূজার পর শোভাযাত্রা শুরু হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ভারত থেকে আগত শ্রীল প্রভুপাদ নিত্য গোপাল গোস্বামী। শোভাযাত্রায় ভক্তবৃন্দরা ঢাক ঢোল, কাশর, শঙ্খ, করতাল বাজিয়ে নেচে গেয়ে কীর্তন পরিবেশন করে হ্যামট্রাম্যাক হাই স্কুলের পার্কিং লটে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এ সময় রাস্তার দু’পাশ থেকে হাত নাড়িয়ে স্বাগত জানান অনেক মানুষ। কেউ কেউ গাড়ীর হর্ন বাজিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহিত করেন।
ভক্তবৃন্দরা শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন বর্ণের প্লেকার্ড, ফ্যাস্টুন হাতে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু কিশোররাও এ শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণ করে। শোভাযাত্রায় বিপুলসংখ্যক নারী অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন শহরের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন হ্যামট্রামিক পুলিশ।