নিউইয়র্কের জ্যামাইকার কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ২৪ আগষ্ট শনিবার সকাল ১১টায় প্রদর্শিত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘কুড়া পক্ষীর শুন্যে উড়া’। চলচ্চিত্রের জাদুকরী দৃশ্যরূপ আর গতিময় নাটকীয়তা নিয়ে, লৌকিক উত্তরাধিকার ও লোকজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আবহে রচিত, বৈষম্য ও বঞ্চনার মাঝে ভাটি বাংলার কৃষিজীবী মানুষের চিরকালীন জীবন সংগ্রামের আখ্যান! ভাটির দেশের মাটির ছবি কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া।
হাওর অঞ্চলের দর্পণ বাংলাদেশের মত নিউইয়র্কেও অনেকটা চুপিসারেই এই সিনেমাটা মুক্তি পেয়েছিল, একটি মাত্র শো। ট্রেলার দেখেই কেমন যেন একটা মাটির গন্ধ পাওয়া যায়। মাটির পুরো গন্ধ নিয়েই ফিরে এসেছে দর্শক। হাওর অঞ্চলের একটা পরিবারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই সিনেমার কাহিনি। তাদের জীবনের লক্ষ্য আর স্বপ্ন একটাই- পেট ভরে ভাত খাওয়া। ধানের চাষকে ঘিরেই তাদের জীবন আবর্তিত হয়। কিন্তু তাদের এতটুকু স্বপ্নও পূরণ হয় না প্রকৃতির রুদ্রমূর্তিতে। বানের জল তাদের সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
পচে যাওয়া ধান গাছকে জড়িয়ে তাদের চোখের জল আর বৃষ্টির জল একাকার হয়ে যায়। এরপরেও তারা থেমে থাকে না, ঘুরে দাঁড়ায়, আবারও নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। নিজের থালার ভাত উঠিয়ে দেয় সম্পূর্ণ অপরিচিত অতিথির জন্য, শুধুমাত্র অতিথি ভাতের কষ্ট করেছে বলে। এর মাঝেও আনন্দ মাতোয়ারা হওয়ার চেষ্টা করে তারা, যদিও আনন্দের উৎস তাদের কাছে নেই বললেই চলে। যাদের কাছে খাওয়ার জন্য চাল নেই, তাদের কাছে বিনোদনের জন্য মোবাইল, ফেসবুক আশা করা বাতুলতা বৈকি! লঞ্চে কোন বিয়ের যাত্রীদল বিয়েবাড়িতে যাচ্ছে- সেটা দেখাই তাদের কাছে সিনেমা দেখার মত আনন্দ! সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে যেন নিজের বিয়ের দিনকে খুঁজে পায় তারা, সেই দিনের কথা ভেবে হয়তো একইসাথে কিছুটা আনন্দিত আর দুঃখিতও হয় তারা।
তবে অনুভূতি টিকে থাকার সময় এখানে খুবই কম কারণ শুকনো মৌসুমে যে জায়গায় বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত থাকে, পানি চলে এলে সেখানে নৌকা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। সেখানে মরেও শান্তি নেই, কারণ কবর দেয়ার মত বিন্দুমাত্র মাটি অবশিষ্ট থাকে না সেখানে, পানিতে লাশ ভাসিয়ে দেয়াই একমাত্র নিয়তি সেসময়।
ধ্রুপদী চিত্রলোক নিবেদিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’-তে অভিনয় করেছেন জয়িতা মহলানবিশ, উজ্জ্বল কবির হিমু, সুমী ইসলাম, সামিয়া আখতার বৃষ্টি, বাদল শহীদ, মাহমুদ আলম ও আবুল কালাম আজাদএ ছবিটি উত্তর আমেরিকায় পরিবেশনা করছে প্রিয়জন ফিল্মস। সার্বিক সহযোগিতায় টোস্টার প্রোডাকশন, নোলক, আশা হোম কেয়ার এবং অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী। উল্লেখ্য, ছবিটি বাংলাদেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়লাভ করে।