চ্যাটজিপিটি’র মতো চ্যাটবটের যুগে ওয়ার্ল্ড আইডি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি ব্যবহার করে সত্যিকারের মানুষ ও এআই চ্যাটবটের মধ্যে পার্থক্য করা যাবে।
‘ওয়ার্ল্ডকয়েন’ নামে নতুন এক ক্রিপ্টো প্রকল্প চালু করেছেন ওপেনএআই’র সিইও স্যাম অল্টম্যান।
সোমবার থেকে চালু হওয়া এই প্রকল্পের মূল বিষয় হল এর ‘ওয়ার্ল্ড আইডি’ অ্যাকাউন্ট, যা কেবল সত্যিকারের মানুষরাই পেতে পারেন। এই আইডি পেতে গ্রাহককে ওয়ার্ল্ডকয়েনের ‘অর্ব’ (রূপালি রঙের বল আকৃতির একটি আইরিশ স্ক্যানার) ব্যবহার করে আইরিস স্ক্যানের মাধ্যমে সাইনআপ করতে হবে। অর্বের আইরিস স্ক্যানে ওই ব্যক্তি সত্যিকারের মানুষ কি না, তা যাচাই করার পর এতে একটি ‘ওয়ার্ল্ড আইডি’ তৈরি হয়।
ওয়ার্ল্ডকয়েনের পেছনে কাজ করেছে স্যান ফ্রান্সিসকো ও বার্লিনভিত্তিক কোম্পানি ‘টুলস ফর হিউম্যানিটি’।
এই প্রকল্পের বেটা সংস্করণে আছেন ২০ লাখ ব্যবহারকারী। আর সোমবার এর আনুষ্ঠানিক উন্মোচনের মাধ্যমে ২০টি দেশের ৩৫টি শহরে নিজেদের ‘অর্বিং’ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বাড়ানোর লক্ষ্যস্থির করেছে ওয়ার্ল্ডকয়েন। এর টোপ হিসেবে, কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশ থেকে সাইন আপ করা ব্যক্তিরা পাবেন ওয়ার্ল্ডকয়েনের ক্রিপ্টো টোকেন ‘ডব্লিউএলডি’।
ওয়ার্ল্ড আইডি’র ক্রিপ্টো সংশ্লিষ্ট দিকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিভিন্ন ক্রিপ্টো ব্লকচেইন আইডিগুলোকে এমন উপায়ে সংরক্ষণ করতে পারে, যা এগুলোর প্রাইভেসি রক্ষা করার পাশাপাশি কোনো একক ব্যক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ করা যায় না, রয়টার্সকে বলেন কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেক্স ব্লানিয়া।
প্রকল্পে উল্লেখ রয়েছে, মানুষের আদলে জবাব তৈরি করা চ্যাটজিপিটি’র মতো চ্যাটবটের যুগে ওয়ার্ল্ড আইডি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর এটি ব্যবহার করে সত্যিকারের মানুষ ও এআই চ্যাটবটের মধ্যে পার্থক্য শনাক্ত করা যাবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ বাইন্যান্স বলেছে, তারা সোমবারের সম্ভাব্য ট্রেডিংয়ের শুরুতে ওয়ার্ল্ডকয়েনকে তালিকাভুক্ত করবে।
অল্টম্যান রয়টার্সকে বলেন, জেনারেটিভ এআই’র মাধ্যমে কীভাবে অর্থনীতি নতুন আকার পাবে, সেই ক্ষেত্রেও ওয়ার্ল্ডকয়েন সহায়ক হতে পারে।
“মানুষ এআই’র মাধ্যমে উপকার পাবে, ‘সুপারচার্জড’ হবে, যার বিশাল অর্থনৈতিক প্রভাবও দেখা যাবে।” --বলেন তিনি।
এই বিষয়ে অল্টম্যানের পছন্দের উদাহরণ হল, ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’ বা ‘ইউবিআই’। এমন সামাজিক প্রকল্প সাধারণত বিভিন্ন দেশের সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকই আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য বিবেচিত হন। এআই ‘মানুষের বিদ্যমান কাজগুলোকে প্রতিস্থাপন করতে পারে’ এমন শঙ্কা থাকায় অল্টম্যান বিশ্বাস করেন, ইউবিআই আর্থিক উপার্জন সংশ্লিষ্ট অসামঞ্জস্যতা ঠেকাতে সহায়ক হতে পারে। যেহেতু কেবল সত্যিকারের মানুষরাই ওয়ার্ল্ড আইডি পাবেন, ফলে ইউবিআই’তে তালিকাভুক্ত করার সময় আর্থিক জালিয়াতির ঝুঁকিও কমে আসতে পারে।
অল্টম্যান বলেন, তার ধারণা গোটা বিশ্ব ইউবিআই ব্যবস্থার অধীনে আসার বিষয়টি ‘সূদুর ভবিষ্যতে ঘটতে পারে’। আর কোন সত্তা এই অর্থ সরবরাহ করবে, তা নিয়েও তিনি কোনো স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি। তবে, ওয়ার্ল্ডকয়েন এই বাস্তবতার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
“আমরা মনে করি আমাদের এইসব নিয়ে পরীক্ষা শুরু করা উচিৎ যাতে এর জন্য করণীয় বিষয়গুলো শনাক্ত করা যায়।” --বলেন তিনি।
ঠিকানা/এসআর