ঘুরে দাঁড়ানোর পথ
খুঁজছে আ.লীগ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ক্ষমতাসীন সরকারের এমন পতনে মন্ত্রী-এমপিসহ নেতাকর্মীদের প্রায় সবাই গা ঢাকা দেন। দেশত্যাগ করেছেন মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য। যারা রয়ে গেছেন তারাও প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছেন। ইতিমধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
টানা চারবার ক্ষমতায় আসার পরও শেখ হাসিনার এভাবে দেশত্যাগের ঘটনায় হতাশ নেতাকর্মীরা। এই সময়ে অনেকের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। গোপালগঞ্জসহ হাতে গোনা কয়েকটি এলাকা ছাড়া কোথাও প্রকাশ্যে আসছেন না নেতাকর্মীরা। এমন বাস্তবতায় বিদেশে বসে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে একমাত্র কথা বলছেন শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। বক্তব্যে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। যদিও এতে আশাবাদী হতে পারছে না কেউ। তাদের প্রশ্ন, এমন অবস্থায় দলের দায়িত্ব কে নেবে এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করবে কে?
ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় এক ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ সাতজনের নামে হত্যা মামলা করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রীসহ দলের আরও নেতার নামে মামলার আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এ অবস্থায় কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, তার পথ খুুঁজছে আওয়ামী লীগ। তাদের সামনে আশার আলো হয়ে এসেছে ১৫ আগস্ট। এদিন তারা মাঠে নামতে চায়।
জানা গেছে, ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া বক্তব্যে হানিফ বলেছেন, ‘১৫ আগস্ট ওই এলাকার (ধানমন্ডি ৩২) নিরাপত্তার জন্য দলের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন তার এক বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে ‘দল পুনর্গঠন’ করার কথা বলেছেন। এমন খবরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। দলটির সহযোগী সংগঠনও কর্মসূচি গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে গোপালগঞ্জ, বরগুনা ও মাদারীপুরে মিছিল-সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। যদিও গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর ওপর হামলার পর আওয়ামী লীগকে আর মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নানা সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে চায় সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে তারা সরকারকে চাপ দেবে না। দলে সংস্কার এবং নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগামী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি তোলা হলেও এটিই দলের প্রকৃত অবস্থান নয়। আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছুদিন ক্ষমতায় থাকুক। তাদের হাত ধরে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি চালু হোক, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার হোক। এই ফাঁকে আগামী এক-দুই বছর দল গোছানোর কাজ করবে আওয়ামী লীগ।
দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সূত্র জানায়, ভারতের দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। কোন পরিস্থিতিতে তিনি ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন, তা ব্যাখ্যা করছেন। দলের বিপদের দিনে সবাইকে এক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে পরিস্থিতি বুঝে মাঠের কর্মসূচি পালনের কথাও বলছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, টানা ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক ভুলত্রুটি হয়েছে। দলের মধ্যে কোন্দল চরমে পৌঁছে যায়। নেতাদের অনেকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনার কাজও করছিল। কিন্তু তা হয়তো জনগণের মনে আস্থা জাগাতে পারেনি। এখন এসবের মূল্যায়ন করে আওয়ামী লীগ পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।