Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যন্ত কঠোর!

আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যন্ত কঠোর!
পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা আশরাফুল মাখলুকাত বা সর্বোত্তম সৃষ্টি হিসেবে মানুষকে দৃষ্টিনন্দন আকার-আকৃতি, বিচার-বুদ্ধি, হিতাহিত জ্ঞান এবং নিত্যনতুন উদ্ভাবনী শক্তি প্রদান করে বিশেষভাবে ধন্য করেছেন। বিশ্ব মুসলিমের শাশ্বত জীবনবিধান পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে, ফেরেশতাদের পরামর্শ উপেক্ষা করেই মূলত পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা নিজস্ব আশীর্বাদধন্য মানুষের আদি পিতা হজরত আদমকে (আ.) এই ধরাধামের জন্যই নিজস্ব প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আদম-হাওয়া দম্পতিকে বেহেশতে বসবাসের সুযোগ দানকালে নিষিদ্ধ বৃক্ষের নিকটবর্তী না হওয়ার জন্য কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। অথচ আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.) এবং আদি মাতা বিবি হাওয়া (আ.) শয়তানের প্ররোচনায় মহান আল্লাহর প্রত্যক্ষ আদেশ অমান্য করে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করে অভিশপ্ত হলেন। তারপর তওবা-এস্তেগফারসহ কান্নাকাটি করায় আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর অছিলায় ক্ষমা পেলেও বেহেশতে বসবাসের সুযোগ বঞ্চিত হন এবং ধরাধামে নিক্ষিপ্ত হন। অনুশোচনাগ্রস্ত চিত্তে দীর্ঘ কয়েক বছর কান্নাকাটি ও ক্ষমা ভিক্ষার পর অবশেষে আদম (আ.) এবং বিবি হাওয়া (আ.) ১০ মহররম আরাফার ময়দানে পুনর্মিলিত হন।
এদিকে বজ্রকঠোর সংকল্প গ্রহণ করা সত্ত্বেও আদম দম্পতির সন্তান-সন্ততি হিসেবে যুগে যুগে, কালে কালে মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় কিংবা ব্যক্তিগত অহমিকার বশে আল্লাহর সঙ্গে অংশীদারিসহ নানাবিধ পাপাচারে লিপ্ত হয়েছিল এবং বর্তমানেও হচ্ছে। লক্ষণীয় যে নিজস্ব পর্বত পরিমাণ অপরাধের জন্য অনুশোচনাগ্রস্ত চিত্তে ও সানুনয় মিনতিসহকারে বিশ্বপ্রতিপালকের দরবারে প্রার্থনা করায় সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এর অছিলায় অনেকেরই নাজাত পাওয়ার ভুরি ভুরি নজির মানব-ইতিহাসে রয়েছে। পক্ষান্তরে পৌত্তলিকতা, খোদাদ্রোহিতা, অন্যায়-অত্যাচারসহ বহুবিধ অপরাধে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হওয়ার পরও অনুশোচনার স্থলে শৌর্যবীর্য ও ক্ষমতার বাহাদুরি প্রদর্শনের অভিশাপে অসংখ্য প্রবল-প্রতাপান্বিত রাজা-বাদশাহর সমূল উৎপাটনের কাহিনিতে মানবসভ্যতার ইতিহাস ভরপুর।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দুজন আস্তিক এবং দুজন নাস্তিক বাদশাহর রাজত্ব বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত ছিল। পবিত্র কোরআনের সুরা কাহফের বর্ণনা অনুসারে, হজরত দাউদ (আ.) এর পুুত্র হজরত সুলায়মান (আ.) বিশ্বজোড়া সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন। তিনি পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গসহ সকল সৃষ্টির ভাষা বুঝতেন এবং তাঁর সিংহাসন বাতাসে ভেসে বেড়াত। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুসারে, হজরত সুলায়মান (আ.) সাগর-মহাসাগরে জলযান চলাচলের উপযোগী সর্বশেষ সীমানা নির্ধারণ করেছিলেন এবং ওই সীমারেখা ডিঙিয়ে কোনো জলযান চলাচল করতে গেলে নির্ঘাত ধ্বংসের কবলে পতিত হয়। আর হজরত জুলকারনাইন (আ.) এর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের দেশ পর্যন্ত। সূর্যাস্তের দেশে হজরত জুলকারনাইন (আ.) একশ্রেণির জনগোষ্ঠীর এবং সূর্যোদয়ের দেশে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী জনগোষ্ঠীর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। সূর্যোদয়ের দেশের জনগোষ্ঠীর অনুরোধে এবং তাদের শারীরিক সহযোগিতায় সৃষ্টিকুলের চিরশত্রু সর্বভুক ইয়াজুজ-মাজুজ নামক বিশেষ গোষ্ঠীকে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী লোহার প্রাচীরবেষ্টিত স্থানে অবরুদ্ধ করেছিলেন জুলকারনাইন।
আবার খোদাদ্রোহী এবং নাস্তিক নমরুদ ও ফেরাউনও বিশ্বজোড়া সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে প্রবল প্রতাপান্বিত নমরুদ বিশ্ব মুসলিমের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) কে বলেছিল, সে-ই জন্ম ও মৃত্যুর মালিক। তখন হজরত ইবরাহিম (আ.) সূর্যকে পূর্ব দিকের স্থলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করার প্রস্তাব করায় নাস্তিক নমরুদ ভড়কে গিয়েছিল। কিন্তু দুষ্কর্মের দোসর হাম্মানসহ অন্যদের পরামর্শে নিজের অপকর্মের জন্য ইতিহাসধিক্কৃত নমরুদ অনুশোচনার পরিবর্তে আল্লাহকে হত্যা করার লক্ষ্যে আকাশে তীর নিক্ষেপ করেছিল। এ ছাড়া পৌত্তলিকতার সমূল উৎপাটন এবং আল্লাহর একত্ববাদ প্রচারে কৃতসংকল্প হজরত ইবরাহিম (আ.) কে প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল। ঐতিহাসিক তথ্যানুসারে, আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নমরুদ তার বিশাল বাহিনীকে নদীর তীরবর্তী একটি মাঠে জড়ো করেছিল। অথচ দুর্ভাগ্যক্রমে ছোট ছোট মশার কামড়েই নমরুদের বিশাল বাহিনীর পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটেছিল। আর একটি কানা ও ল্যাংড়া মশা নমরুদের নাসিকার মধ্য দিয়ে মাথার ভেতর ঢুকে অনবরত কামড়াতে লাগল। সেই মশকের দংশন জ্বালা সহ্য করতে না পেরে নমরুদ তার বিধ্বস্ত সেনাসদস্যদের জুতা দিয়ে তার মাথায় আঘাাত করার নির্দেশ দিল। অবশেষে জুতার আঘাতে নমরুদের মাথা দুভাগ হয়ে তার ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছিল। আর নিয়তিলাঞ্ছিত ফেরাউন ভিন্ন দেশ থেকে ভাগ্যের অন্বেষণে মিসরে আগমন করেছিল। অবশেষে আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানীতে সে মিসরের সম্রাট বনে গেল এবং বিশ্বজোড়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২৫০ মতান্তরে ৪০০ বছরের শাসনকালে প্রবল প্রতাপান্বিত ফেরাউন নিজেকে খোদা দাবি করল এবং নিজের সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী করার মানসে বনি ইসরাইলের নবজাতক বালক সন্তানদের হত্যা করত ও বালিকাদের জীবিত রাখত। অবশেষে ঐতিহাসিক নীলনদে সসৈন্যে প্রবল ক্ষমতাধর ফেরাউনের সলিলসমাধি রচিত হয়েছিল এবং তার মরদেহ বিশ্ববাসীর শিক্ষণীয় বস্তু বা আদর্শ হিসেবে মিসরের পিরামিডে অদ্যাবধি রক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা অক্ষত থাকবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ইন্নাল ইনসানা লা কাফীরুম্ মুবিন (নিশ্চয় মানুষ প্রকাশ্য অকৃতজ্ঞ)। ঐতিহাসিক স্মৃতিচারণা ছাড়াও নিজেদের দেখাশোনা মতো অশীতিপর বাঙালিরা ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে ও ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্টের পর বিভক্ত ভারত ও পাকিস্তানে মহাত্মা গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, এ কে ফজলুল হক, কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কমবেশি অবহিত। আবার ১৯৭০ এর দশকে জনাব তাজউদ্দীন, আবদুল মালেক উকিল, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে মেজর জিয়াউর রহমান, শেখ মণি, আ স ম রব, শাজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং বাংলাদেশের সর্বস্তরের পেশাজীবী ও ছাত্রসমাজের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসার্হ। কিন্তু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের কিছুসংখ্যক বুভুক্ষু রাজনীতিবিদের লোভ-লালসা ও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের অভিলাষ ও কর্মকাণ্ড স্বাধীনতার মৌলিক আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। তাদের স্বার্থপরতা ও লাগামহীন লোভ-লালসায় অতিষ্ঠ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘সাড়ে ৭ কোটি দেশবাসীর জন্য ৮ কোটি কম্বল এসেছে; আমার আর আমার বাবার কম্বল কোথায়?’ যাহোক, স্বাধীনতা-পরবর্তী জাসদের আত্মপ্রকাশ, রক্ষী বাহিনীর অমানুষিক নির্যাতন ও দৌরাত্ম্য, বিনা বিচারে হত্যা-গুম-খুন, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি, বাকশাল প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি ইত্যাদি ক্ষমতাসীন মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে গণরোষের জন্ম দেয় এবং প্রতিপক্ষীয় রাজনৈতিক দলগুলো জ্বালাময়ী বক্তব্য, মশাল মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেই গণরোষের ইন্ধনে জ্বালানি সরবরাহ করে। অবশেষে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনে সপরিজনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণহানি, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ, বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল গঠন, ৭৭ সালে আবদুল মালেক উকিল ও আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশালের স্থলে নতুনভাবে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসও দেশবাসীর অজানা নয়।
এদিকে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনীর এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রাণহানি, পরবর্তী সময়ে বিচারপতি রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ঊর্ণনাভ সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কাহিনিও দেশবাসী স্বচক্ষে অবলোকন করেছে। ক্ষমতা গ্রহণের অব্যবহিত পরপরই দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার মানসে স্বার্থান্বেষী এরশাদ সাইকেল চালিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে যাতায়াত করে বিশেষ দৃশ্য সৃষ্টি করেছিলেন। মূলত এরশাদের কার্যকালেই ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি দুরারোগ্য ক্যান্সারের মতো জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে। যাহোক, গণ-আন্দোলনে এরশাদের পতনের পর নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় আরোহণ এবং বিএনপির শাসনামলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হরতালসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে দেশবাসী পুরোপুরি অবহিত। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর বিএনপির কর্মকাণ্ডও নিয়তিলাঞ্ছিত দেশবাসী অবলোকন করেছে।
অবশ্য অনস্বীকার্য যে, প্রতিটি সরকারের আমলেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি-জনপ্রতিনিধি ও দলীয় চামচা এবং স্বার্থান্বেষী আমলা-কামলারা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনেছে এবং পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় ঘুষ-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর দুর্ভাগ্যপ্রপীড়িত মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠী জোতজমা হারিয়ে প্রান্তিক চাষি থেকে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ঘুষ-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ছাড়াও মাদক সেবনে দেশের তরুণসমাজ উচ্ছন্নে যেতে বসেছে এবং মধ্যবিত্ত সমাজের অস্তিত্ব বিপন্নপ্রায়। আবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টি পর্যায়ক্রমে জনগণের ভোটে কিংবা বন্দুকের জোরে যখনই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, তখনই সেই সরকার ও দলের নেতা-খেতারাই রাতারাতি দেশপ্রেমিক বনে গেছে এবং নিখুঁত দেশপ্রেমিক হিসেবে সরকারি ও জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। মূলত সরকার এবং সরকারের আশীর্বাদপুষ্টরাই জাতীয় উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধির আড়ালে দেশের যথাসর্বস্ব লুট করেছে এবং বিদেশের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা করেছে। আর বাকি সকল নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও দেশবাসী দেশদ্রোহী হিসেবে গণ্য হয়েছেন এবং তাদের জনকল্যাণমূলক যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও চিন্তাচেতনা দেশের জন্য ধ্বংসাত্মক ও ক্ষতিকর হিসেবে প্রচারিত হয়েছে।
যাহোক, ২০০১ সালে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর বিএনপির নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। ২০০৬ সালের দিকে ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের বিদায়লগ্নে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের নেতৃত্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে দেশজুড়ে চরম আন্দোলন-বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকারের হটকারিতা ও অনড় অবস্থানের পরিণতিতে শেষ পর্যন্ত সেই বিদ্রোহ-বিক্ষোভকে উপজীব্য করে সামরিক বাহিনী দেশের শাসনভার গ্রহণ করে এবং ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ও সরকার গঠন করে। যাহোক, পরে বিএনপির প্রায় প্রতিটি নির্বাচন বর্জন, এরশাদের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সবশেষে আমি-ডামির নির্বাচন এবং ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে নানা কাহিনির অবতারণা করা ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে অযৌক্তিক।
সবশেষে হাইকোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সূচিত কোটাবিরোধী আন্দোলন গোড়ার দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সুরক্ষিত হর্মে আঁচড় কাটতে পারেনি। সরকার অপর কয়েকটি আন্দোলন-সংগ্রামের মতো তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি সরকারপ্রধান আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত ও হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঝিনুক দিয়ে সাগর সেচার দুঃসাধ্য প্রচেষ্টা বাস্তবায়িত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিতে হচ্ছে। পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে সুরা আল বাক্বারাহর ২৫১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, অনন্তর তালুতের (স্বল্পসংখ্যক) বাহিনী প্রতিপক্ষ জালুতের (বিশাল) বাহিনীকে পরাস্ত করলেন; আর দাউদ (আ.) জালুতে হত্যা করে (সমুচিত) শিক্ষা দিলেন। (বস্তুত) আল্লাহ তায়ালা যদি মানবসমাজের এক দলকে দিয়ে অন্য দলকে প্রদমিত (নিঃশেষ) না করতে থাকতেন, তবে গোটা দুনিয়া অশান্তিপূর্ণ হয়ে উঠত। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা জগৎবাসীর প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল ও করুণাময়। পবিত্র কোরআনের তৃতীয় অধ্যায়ের সুরা আল ইমরানের ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ সমগ্র রাজ্যের মালিক; তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য প্রদান করেন, আর যার থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নেন। আর যাকে ইচ্ছা বিজয়ী করেন, অন্যদিকে যাকে ইচ্ছা পরাজিত করেন। তাঁরই একচ্ছত্র এখতিয়ারে রয়েছে সমুদয় কল্যাণ। নিশ্চয় তিনি সর্বময় পূর্ণ ক্ষমতাবান। পবিত্র কোরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর। তাই অন্যের পতনে আনন্দে আটখানা হয়ে পড়া কিংবা আহ্লাদে উদ্বেলিত হয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণে লম্ফঝম্ফ শুরু করা উচিত নয়। বরং অহংকারীদের পতন ও ধ্বংস থেকে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বিশ্ববিধাতা আমাদের আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টায় সহায়ক হোন। আমিন!
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
১৩ আগস্ট ২০২৪

কমেন্ট বক্স