বিয়ের পর সংসারজীবন স্বামী-স্ত্রীর জন্য একেবারেই নতুন অধ্যায়। শুরুর দিকে ভালোবাসা কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু সংসার তো আর এক দিনের নয়। বহু বছরের, যুগ যুগের। পথটা মসৃণ সব সময় থাকে না। মাঝেমাঝে তিক্ততাও আসে। সে ক্ষেত্রে দুজনকেই একটু কৌশলী হতে হবে।
আমেরিকার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ভেরিওয়েল মাইন্ডের গবেষণায়ও এমনটি বলা হয়েছে। সংসারে যখন অশান্তির আগুন জ্বলে, তখন স্বামী-স্ত্রীকে ৯টি টিপস মানতে বলা হয়েছে। সেগুলো হলো :
১. ঝগড়ার সময় দুজনের রাগ নয় : সংসারে ঝগড়া হবে - এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা দীর্ঘ সময় পুষে রাখলে চলবে না। কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া শুরু করলে একজন একটু শান্ত থাকার চেষ্টা করবেন। দুজনই সমানতালে ঝগড়া করলে পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তাই একজন শান্ত থেকে সমাধানের চেষ্টা করুন। দিন শেষে সংসারটা তো আপনাদেরই। মতবিরোধ হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে সব সময় ঝগড়া করা ঠিক নয়।
২. পুরোনো তিক্ততা সামনে আনা যাবে না : পুরোনো তিক্ততা থাকতেই পারে। কোনো ঘটনা ঘটলে কিংবা ঠুনকো বিষয়ে ঝগড়া হলে বারবার সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা সামনে আনা একদমই ঠিক নয়। হয়তো সঙ্গীর কোনো কাজ আপনাকে বেশ দুঃখ দিয়েছিল। এখনো সেটা নিয়ে চাপা দুঃখ কিংবা রাগ আপনার মনে রয়েছে। সেটা খোলাখুলি আলোচনা করে নিতে পারেন। এতে সম্পর্কের অনেক বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।
৩. হঠাৎ রেগে যাওয়া : প্রায়ই দেখা যায়, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে হঠাৎ করেই রেগে যাচ্ছেন, যেটা আপনার সঙ্গী একেবারেই মানতে পারছেন না। হয়তো চুপ রয়েছেন পরিস্থিতি ঠান্ডা রাখার জন্য। কিন্তু এটা বাড়লে সংসারে অল্প দিনেই অশান্তি বিরাজ করবে, কারণ ধৈর্য সব সময় এক থাকে না। পরিস্থিতি তুমুল পর্যায়ে যাওয়ার আগে নিজেই সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করুন।
৪. মন দিয়ে কথা শোনা : আপনার সঙ্গী কী বলছেন, সেই কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন। তার দুটো কথা শুনেই নিজের মতামত দিতে শুরু করবেন না। এতে আপনাদের মধ্যে সমস্যা বাড়বে, বৈ কমবে না। কথা শোনার সময় আপনি কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ততা দেখাবেন না। তাহলে আপনার সঙ্গী ভেবে নেবেন আপনি অবহেলা করছেন। পরবর্তী সময়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা আর শেয়ারই করবে না। তাই কথার মাঝখানে বারবার প্রশ্ন না করেও ভালো শ্রোতা হওয়ার চেষ্টা করুন। এতে সম্পর্ক ভালো থাকবে।
৫. মতামত চাপিয়ে দেবেন না : আপনার মতামত সঙ্গীর ওপর চাপিয়ে দেবেন না। আগে তার মতামতটিও শোনার চেষ্টা করুন। তিনিও একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তারও তো মতামত থাকতে পারে। আগে থেকে কিছু চাপিয়ে না দিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে মতামতের প্রাধান্য দিন। মতামতকে সম্মান করলে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। তাই দায়িত্ব নিয়েই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন।
৬. সব বিষয় পছন্দ না হলে : সঙ্গীর সব বিষয় পছন্দ হতে হবে তেমনটি নয়। তার কিছু কিছু কাজ, অভ্যাস খারাপ লাগতেই পারে। তবে তাতেই প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে কেন? সংসারে সহ্যক্ষমতা বাড়াতে হবে দুজনেরই। দুজনেরই আলাদা আলাদা খারাপ কিছু অভ্যাস থাকতে পারে। তাই আচরণগুলো আগে দেখুন, জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্যগুলো পর্যবেক্ষণ করুন। যদি কিছুটা বদলানো যায়, তা কথা বলেই বদলে ফেলুন না।
৭. বেশি প্রত্যাশা নয় : সম্পর্কের সঙ্গে প্রত্যাশা জড়িয়ে থাকে। সম্পর্ক সুন্দর রাখতে হলে প্রত্যাশা কমাতে হবে। প্রত্যাশা যত বাড়বে, অভিযোগও তার চেয়ে বেশি বেড়ে যাবে - এমনটা ধারণা করেন বিশেষজ্ঞরাও। তাই প্রত্যাশা কমিয়ে দুজন দুজনকে বোঝার চেষ্টা করুন। মানসিক স্বাস্থ্যে জোর দিন। নিজেদের মধ্যে কোয়ালিটি সময় কাটান। দেখবেন সংসারে সুন্দর সুন্দর সময় বয়ে আসছে।
৮. আর্থিক বোঝাপড়া : দাম্পত্য সম্পর্কে আর্থিক বোঝাপড়াও দরকার। সংসার চালানোর দায়িত্ব যদি হয় স্ত্রীর, তবে প্রতিদিনের আলোচনায় কোন খাতে কত টাকা লাগছে, আর কোন খাতে কত টাকা লাগবে, সে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে হবে। দুজনই কর্মজীবী হলে সংসারে খরচ চালানোর বিষয়গুলো আলোচনা করেই এগোতে হবে।
৯. ক্ষমা করে দেওয়া : কোনো ভুল হলে ক্ষমা করার মানসিকতা রাখতে হবে। ভুলের বিষয়টা অন্যের কাছ থেকে না শুনে নিজেই সঙ্গীকে বলে দেওয়াটাই ভালো।
ঠিকানা/এনআই