Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

২১ বছরের অপেক্ষার অবসান, মা-বাবার বুকে মতিউর

২১ বছরের অপেক্ষার অবসান, মা-বাবার বুকে মতিউর ছবি সংগৃহীত
২০০২ সালে বাড়ি থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মতিউর রহমান। মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকলেও সে সময় তিনি স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। পরিবারের ধারণা, ঠাকুরগাঁওয়ের আখানগর ইউনিয়নের কান্তিভিটা ধোনতলা সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের উত্তর দিনাজপুরে অনুপ্রবেশ করেন মতিউর। থানায় জিডি ও দীর্ঘ ২১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মতিউরকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পায়নি পরিবার।

তবে ছেলেকে কোনো একদিন ফিরে পাবেন এমন আশা ছিল মা-বাবার মনে। সেই অপেক্ষা থেকে বিচ্যুত হননি তারা। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে। মতিউর ফিরে এসেছেন পরিবারের কাছে।

২১ জুলাই শুক্রবার দুপুর ২টা ২২ মিনিটে ভারতের ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর হয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরেন মতিউর।

এত দিন পর সন্তানকে কাছে পেয়ে আনন্দে কান্না শুরু করেন বাবা-মাসহ তার স্বজনেরা। পরিবারের সদস্যদের কান্না দেখে কেঁদে ফেলেন মতিউরও। এ সময় সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত। তবে ২১ বছর পর হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়ে আনন্দে ভাসছে মতিউরের পরিবার। পরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মতিউরকে পরিবারের কাছে তুলে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ।

মতিউর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের দেবীডাঙ্গা গ্রামের সহিদুল ইসলাম-মর্জিনা বেগমের বড় ছেলে।

পরিবারের সদস্য ও বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, ২০১৯ সালের জুনে ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে মতিউর রহমানকে উদ্ধার করেন ভারতের ‘শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশন'-এর সমাজকর্মীরা। উদ্ধারের পর ওই সংস্থার পক্ষ থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মতিউরের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এরপর তাকে সিজোফ্রেনিয়া রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। পরে ওই ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার মাধ্যমে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। সুস্থতার পর তার কাছেই পরিবারের পরিচয় জানতে পারেন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা।

এরপর সেখানকার সমাজকর্মী নীতিশ শর্মা বাংলাদেশে তার দুই বন্ধুর মাধ্যমে মতিউরের পরিবারের খোঁজ পান। তাদের সহযোগিতায় প্রথম ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলেন মতিউর। এরপর দুই দেশের আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফেরত আসেন তিনি। তাকে কাছে পেয়েই বুকে জড়িয়ে নেন বাবা-মাসহ স্বজনেরা।

এর আগে ২৭ জুন মতিউরের দেশে ফেরার কথা ছিল। তাকে নিতে দিনাজপুরের হিলি ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে গিয়েছিলেন পরিবার। কিন্তু কাগজপত্রের জটিলতায় সেদিন তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। 

২১ বছর পর দেশে এসে মতিউর বলেন, ‘আমি কখন ভারতে গিয়েছি, কীভাবে গিয়েছি কিছুই মনে নেই। ভারতে শ্রদ্ধা ফাউন্ডেশন সংস্থায় আমার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরপর আমি আমার পরিচয় দিলে তারা দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন। দীর্ঘদিন পর দেশে আসতে পেরেছি, বাবা-মাকে কাছে পেয়েছি এ জন্য আমার খুব ভালো লেগেছে।’

মতিউরের মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমার হারানো কলিজার টুকরাকে দীর্ঘ ২১ বছর পরে কাছে পেয়েছি। আল্লাহর কাছে আর কিছুই চাই না। যারা আমার ছেলেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করে আমাদের কাছে ফেরত দিয়েছে, তাদের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আজকে আমার আনন্দের দিন। আমি কী যে আনন্দিত হয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’

মতিউরের বাবা সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিল। ২০০২ সালে যখন তার বয়স ১৫ বছর ছিল, তখন সে নিখোঁজ হয়। গত আট মাস আগে জানতে পারি, সে ভারতের শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সেখানে চিকিৎসা শেষে সে সুস্থ হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ছেলেকে ফেরত পাওয়ার জন্য আমি বাংলাদেশ সরকার, ভারত সরকারসহ সেখানকার শ্রদ্ধা ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাদের কারণে আমি আমরা হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে আবারও ফিরে পেয়েছি। আমি ঈদের চাঁদ হাতে পেয়েছি।’

শ্রদ্ধা ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মী নীতিশ শর্মা বলেন, ‘২০১৯ সালে আমরা মহারাষ্ট্রের কারজাত এলাকা থেকে মতিউর রহমানকে উদ্ধার করি। আমরা মূলত রাস্তাঘাটে মানসিক অসুস্থ ব্যক্তিদের ঘোরাফেরা করতে দেখলে উদ্ধার করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করি এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করি। সুস্থতার পর এমন অনেককে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছি আমরা। এর আগে নেপালেও আমরা কয়েকজনকে সুস্থ করে পরিবারের কাছে ফেরত দিয়েছি। তবে এবারই প্রথম কোনো বাংলাদেশের অসুস্থ মানুষকে ভারতে উদ্ধার করে চিকিৎসার পর দেশে ফেরত দেওয়া হলো।’

বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘মতিউর রহমানের বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের হাইকমিশনার পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় ভারত থেকে তাকে ফেরত আনা হয়েছে। ভারতের ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করে। আমরা আইনি প্রক্রিয়া শেষে ভারতের একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি।’

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স