সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণের আন্দোলনের মুখে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট (সোমবার) দুপুর আড়াইটার দিকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন তিনি।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা তার ছোট বোনকে নিয়ে গণভবন থেকে নিরাপদে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। দেশ ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সুযোগ না হওয়ায় আগেই দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
এদিকে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরই দেশবাসীর উদ্দেশে কথা বলেছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। এদিন লন্ডন থেকে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটায় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। সেখানে ক্যাপশনে বিএনপির এ নেতা লিখেন, ‘বিজয়ের এই আনন্দঘন সময় শান্তভাবে উদযাপন করুন। অনুগ্রহ পূর্বক কেউ প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসা পরায়ন হবেন না। কেউ নিজের হাতে দয়া করে আইন তুলে নিবেন না।’
শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ব্যাপারে প্রথমেই দেশের ছাত্র জনতাকে অভিনন্দন জানান তারেক জিয়া। তিনি বলেন, হাজারও শহিদের প্রাণের বিনিময়ে জনতার ঐতিহাসিক এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। রাহু মুক্ত হয়েছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। জনতার বিপ্লবের প্রথম ধাপ চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে। লাখো শহিদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কখনো পরাজয় মানতে পারে না।
এ সময় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তারেক জিয়া বলেন, আপনাদের সন্তানদের শহিদি মৃত্যু, স্বজনদের ত্যাগ প্রতীক্ষায় এই ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে প্রিয় বাংলাদেশ আর একটি বিজয় দেখেছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে যেসব শিক্ষার্থী ও মানুষ নির্যাতন, মামলা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, কারাগারে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার ও কারামুক্তির দাবিও জানান তারেক জিয়া।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন আবার স্বাভাবিকভাবে হলে, হোস্টেলে, ক্লাসে ফিরতে পারেন এবং পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন, সেই পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করার আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষকে জিম্মি করে সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছে। এর মধ্যে দিয়ে জনগণের বিপ্লবের প্রথম ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচি ঘিরে রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশে সরকার সমর্থিত নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১০০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন ছাড়াও কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে পৃথক হামলায় হাইওয়ে থানার এক পুলিশসহ মোট ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ের প্রথম থেকে আন্দোলন করে আসছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় গত ১৫ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধে গুলি চালায় পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এবং দলটির সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের হামলায় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী ও মানুষের মৃত্যু হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা।
ঠিকানা/এএস