টানা ১৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে চলা রুশ এই আগ্রাসন মোকাবিলায় পশ্চিমা সহায়তায় পাওয়া অস্ত্র নিয়ে লড়ছে ইউক্রেন। এমনকি পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির পাল্টা হামলায় রুশ সেনারা বহু সময়ই ব্যর্থতা-বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
তবে ইউক্রেনের এই পাল্টা হামলা চালানো নিয়েই এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মূলত পশ্চিমা অস্ত্র না পেলে কিয়েভ পাল্টা হামলা চালাবে না বলেও জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ২৬ মার্চ (রবিবার) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা মিত্ররা আরও সামরিক সহায়তা না পাঠানো পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ শুরু করা যাবে না বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জাপানি একটি সংবাদপত্রকে তিনি বলেন, আরও ট্যাংক, আর্টিলারি এবং হিমারস রকেট লঞ্চার ছাড়া তিনি তার সৈন্যদের ফ্রন্টলাইনে পাঠাবেন না।
বিবিসি বলছে, জাপনের সংবাদপত্র ইয়োমিউরি শিম্বুনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি বলেন, পূর্ব ইউক্রেনের পরিস্থিতি ‘ভালো নয়’। তার ভাষায়, ‘আমরা আমাদের অংশীদারদের কাছ থেকে গোলাবারুদ আসার জন্য অপেক্ষা করছি।’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন: ‘পাল্টা হামলা আমরা এখনও শুরু করতে পারিনি। ট্যাংক, আর্টিলারি এবং দূরপাল্লার রকেট ছাড়া আমরা আমাদের সাহসী সৈন্যদের ফ্রন্টলাইনে পাঠাতে পারি না।’
তিনি আরও বলেছেন: ‘আপনার যদি রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকে তবে আপনি একটা উপায় খুঁজে আমাদের সাহায্য করবেন। আমরা যুদ্ধ করছি এবং (কোনও কিছুর জন্য) অপেক্ষা করতে পারি না।’
বিবিসি বলছে, রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ শুরু করার বিষয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিয়েভের এই হামলা আসন্ন হতে পারে। ইউক্রেনের স্থল বাহিনীর কমান্ডার ওলেক্সান্ডার সিরস্কি বলেছেন, এই সপ্তাহে এটি ‘খুব তাড়াতাড়ি’ দেখা যেতে পারে।
অন্যদিকে কিছু বিশ্লেষক বলছেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তাদের রুশ প্রতিপক্ষকে অস্বস্তিতে ফেলতে পাল্টা আক্রমণের কথা বলছে। তারা চায়- রাশিয়ান কমান্ডাররা তাদের বাহিনীকে পূর্বের শহর বাখমুতের মতো নির্দিষ্ট স্থানে কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে, যেকোন আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতে রুশ বাহিনীকে পুরো ফ্রন্টলাইনে ছড়িয়ে দিক।
আবার অন্য বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনের দিক থেকে শিগগিরই পাল্টা আক্রমণ সম্ভব। মার্কিন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার গত সপ্তাহে ইঙ্গিত দিয়েছিল, রাশিয়ার নিজস্ব আক্রমণ সম্ভাব্যভাবে গতি হারাচ্ছে এবং শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে: ‘সুতরাং ইউক্রেন যেকোনও পদক্ষেপ নিতে এবং গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে পাল্টা আক্রমণ চালানোর জন্য উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে।’
তবে ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যেন বেশিই হতাশাবাদী। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি প্রায়ই সতর্ক করে বলেছেন, পশ্চিমা মিত্ররা দ্রুত আরও বেশি অস্ত্র সরবরাহ না করলে যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে। তবে এই প্রথম তিনি আসলে বলেছেন, ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ বিলম্বিত হতে পারে এবং সেটিও পশ্চিমা সরঞ্জামের অভাবে।
অবশ্য রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনের মিত্ররা আরও ট্যাংক, আর্টিলারি এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে কিছু দেশ তাদের প্রতিশ্রুত অস্ত্র দেওয়ার জন্য কার্যত সংগ্রাম করছে। আর অন্য দেশগুলোও ইউক্রেনে সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সময় নিচ্ছে।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, সামরিক সহায়তা ইউক্রেন অবশ্যই পাবে। তবে প্রশিক্ষণ এবং পরিকল্পনা করতে সময় লাগছে বলেও স্বীকার করে নিয়েছেন তারা। এদিকে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ সম্পর্কে এই ধরনের জল্পনা - বিশেষ করে পাল্টা হামলা কখন এবং কোথায় হতে পারে - সম্পর্কে সম্ভাব্য পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হান্না মালিয়ার সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন, ইউক্রেনের সামরিক পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আনার অধিকার রয়েছে কেবল তিনজনের। তারা হলেন- প্রেসিডেন্ট, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ।
তিনি লিখেছেন, ‘অন্য সকলেই কেবল তাদের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করতে পারে। অনুগ্রহ করে আকাশপথে পাল্টা আক্রমণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন করা বন্ধ করুন, দয়া করে এই বিষয়ে ব্লগ এবং পোস্টে কোনও কিছু লেখা বন্ধ করুন, দয়া করে আমাদের সেনাবাহিনীর সামরিক পরিকল্পনাগুলো প্রকাশ্যে আলোচনা করা বন্ধ করুন।’