সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল রেখে দেওয়া হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে গেছে। গত রোববার এ বিষয়ে করা লিভ টু আপিলের দীর্ঘ শুনানির পর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দেন। সব গ্রেডের সরকারি চাকরিতেই এ রায় কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, ৯ম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্যই নতুন কোটা পদ্ধতি কার্যকর হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন সোমবারই জারি হবে। আদালতের এ রায়ে ছাত্রদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এর আগে রোববার রায় পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, কোটাসংক্রান্ত রায় অনুযায়ী ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ মেধা ও ৭ শতাংশ নিয়োগ কোটার ভিত্তিতে হবে। রায় অনুযায়ী ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, এক শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও এক শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ নিয়োগ পাবেন।
এর আগে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা পুনর্বহালের রায় বাতিল ও সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। এ আন্দোলনকে ঘিরে দেশে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী এই লিভ টু আপিল করেন। আপিল বিভাগের রায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাসহ বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আর কোনো যৌক্তিকতা থাকছে না বলে আইনজীবীরা জানান। যদিও আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এ রায় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক রিটে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এমতাবস্থায় গত ১০ জুলাই হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন; যা আগামী ৭ আগস্ট শুনানি হওয়ার কথা ছিল। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে বলেন আদালত। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকার কথা জানান আইনজীবীরা। তবে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন ১১ জুলাই কোটা পুনর্বহাল করে দেওয়া হাইকোর্টের আলোচিত রায়ের মূল অংশ প্রকাশ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে অবরোধ ও কম্পিলিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। সবশেষ গত ১৮ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি খোন্দকার দিলারুজ্জামানকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ঠিকানা/এসআর