ম আমিনুল হক চুন্নু
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এর নেতারা আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে সমান উৎসাহী ছিলেন। তবে সবার ভূমিকা সমান অগ্রগামী ছিল না। জাতির জনক ও প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন ‘রেড ইন্ডিয়ান’ প্রশ্নে সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের পক্ষপাতী ছিলেন। আদিবাসীদের ক্রমশ খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করা, সম্পত্তির মালিকানার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ধাঁচের ব্যক্তিগত জমি ও প্রতিপত্তি অর্জন ও ‘বর্বর’ আদিবাসী জীবন ত্যাগ করে শ্বেতাঙ্গদের মতো জীবনযাপনে প্রভাবিত করার মাধ্যমে তাদের ‘সিভিলাইজড’ বা সভ্য করে তোলার নীতি গৃহীত হয়েছিল। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের সবাই এই নীতি মেনে নেয়নি। বিশেষ করে, ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া জমি ও বনজ সম্পদের চাহিদার কারণে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলগুলোর দিকে তাদের নজর বেশি ছিল।
১৮৩২ সালে এন্ডু জ্যাকসন দ্বিতীয় মেয়াদে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি ‘রেড ইন্ডিয়ান’ প্রশ্নে উদারবাদী নীতির তীব্র বিরোধী ছিলেন। এ বছরই যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শ্বেতাঙ্গ ও ‘সাউক’ আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে ছোট আকারে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে আদিবাসীদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ‘ব্ল্যাক হক’। আগ্রাসী শ্বেতাঙ্গরা এই যুদ্ধের ফলে আরও বেশি আদিবাসী বিরোধী নীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব ভূখণ্ডের জর্জিয়া, অ্যালাবামা ও ফ্লোরিডা অঞ্চল শ্বেতাঙ্গ ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। তবে ১৮৩০ সালে এন্ডু জ্যাকসন ‘ইন্ডিয়ান রিমুভাল অ্যাক্ট’ এর প্রস্তাব কংগ্রেসে উত্থাপনের ব্যবস্থা করেন। মার্কিন কংগ্রেস তার প্রস্তাব অনুমোদন করে। ফলে আদিবাসী জনগোষ্ঠী নিজেদের বহু যুগের আবাসভূমি থেকে সমূলে উৎখাতের ক্ষেত্রে প্রস্তুত হয়, যা ইতিহাসে ‘ট্রেইল অব টিয়ারস’ নামে কুখ্যাত।
অন্যদিকে ১৮৩১ সালে ‘ইন্ডিয়ান রিমুভাল অ্যাক্ট’ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আদিবাসী ‘চকটাও’ জনগোষ্ঠী প্রথম এই আইনের শিকার হয়। আমেরিকার পশ্চিম ভূখণ্ডে নির্ধারিত ‘ইন্ডিয়ান টেরিটোরিতে তাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এই জনগোষ্ঠীর সবাই তাদের পূর্বপুরুষের ভূমি ছেড়ে আসতে প্রস্তুত ছিল না। তাদের জোর করে পায়ে ও গলায় শিকল পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এন্ডু জ্যাকসন প্রশাসন ‘ইন্ডিয়ান রিমুভাল অ্যাক্ট’ এর কিছু ধারা সরাসরি লঙ্ঘন করে। সরকার থেকে আদিবাসীদের জন্য কোনো রকম খাদ্য, পানীয় ও সাময়িক আশ্রয়ের সামান্য ব্যবস্থাও করা হয়নি। যাত্রাপথে হাজারেরও বেশি আদিবাসী কষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আলাবামার এক সংবাদপত্রে আদিবাসীদের ওপর এই নিষ্ঠুরতাকে ‘ট্রেইল অব টিয়ারস অ্যান্ড ডেথ’ নামে অভিহিত করা হয়।
ক্রমান্বয়ে এই আইন অন্যান্য গোষ্ঠীর ওপর কার্যকর হতে শুরু করে। ১৮৩৬ সালে ফেডারেল সরকার ‘ক্রিক’ জনগোষ্ঠীকেও আপন ভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করে। ওকলাহোমা প্রদেশে তাদের ভবিষ্যৎ নিবাস ঠিক করা হয়। যাত্রাপথে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ আদিবাসী ক্ষুধা, পিপাসা ও অত্যাচারে মৃত্যুবরণ করে।
১৮৩৮ সালের মধ্যে ‘চিরোকি গোষ্ঠীর’ ২০০০ সদস্যকে জর্জিয়া থেকে তাদের নির্ধারিত ‘ইন্ডিয়ান টেরিটোরি’তে যেতে বাধ্য করা হয়। প্রেসিডেন্ট এন্ডু জ্যাকসনের পর মার্টিন ভ্যান বুরেন প্রেসিডেন্ট হন। তিনি আদিবাসী প্রশ্নে অনেক ক্ষেত্রে জ্যাকসনের চেয়েও কঠোর ছিলেন। তিনি জেনারেল উইনফিল্ড স্কটকে সাত হাজার সৈন্যসহ জর্জিয়ায় পাঠান। তাদের কাজ ছিল অনিচ্ছুক ‘চিরোকি’দের জোর করে স্থানান্তর করা। স্কট ও তার বাহিনী অস্ত্রের মুখে তাদের বাড়িঘর ও সহায়-সম্পত্তি ত্যাগে বাধ্য করে। শ্বেতাঙ্গ লুটেরার দল এ সময় নির্বিচারে আদিবাসীদের বাড়িঘর ও সম্পত্তি লুট করেছিল। তারপর তারা আদিবাসীদের ১২০০ মাইলেরও অধিক দূরের ‘ইন্ডিয়ান টেরিটোরি’তে যেতে বাধ্য করে। যাত্রাপথে ডায়রিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত হয়ে অগণিত মানুষ নিহত হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, প্রায় পাঁচ হাজার চিরোকি আদিবাসী এই যাত্রাপথে করুণভাবে মৃত্যুবরণ করে।
১৮৪০ সালের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের আদিবাসীদের এক বড় অংশকে এভাবেই হত্যাকাণ্ড, অনাহার ও দুরারোগ্য রোগে মৃত্যুর মাধ্যমে আপন ভূমি থেকে উৎখাত করা হয়। তৎকালীন মার্কিন সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, পশ্চিমের ইন্ডিয়ান টেরিটোরিতে ভবিষ্যতে মার্কিন সরকার আর কখনো হস্তক্ষেপ করবে না। তবু উপযুক্ত সময়ে ফেডারেল সরকার আবারও আগ্রাসী হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট এন্ডু জ্যাকসনের এই ‘আদিবাসী উৎখাত নীতি’ আজও পরিকল্পিত জাতিগত হত্যার এক ঘৃণ্য নিদর্শন হয়ে আছে।
১৯৬১ সাল, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে বছরের পর বছর চলমান বিরোধের চূড়ান্ত পরিণতি ছিল এই গৃহযুদ্ধ। ১৮৬১ সালের গৃহযুদ্ধে ফেডারেল বাহিনী প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের নেতৃত্বে জয়লাভ করে। তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিরতরে বিলোপ হয় দাসপ্রথা। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীরা এসে দেশটির কৃষি, খনিজ, অরণ্য সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলে। তবে কৃষিপ্রধান সমাজে কৃষকদের সুবিধার কথা ভেবেই যুক্তরাষ্ট্রের বহুল প্রতীক্ষিত সংবিধান লেখা হয়েছিল ১৮৪৫ সালে। কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই শতবর্ষের অধিক সময় ধরে চলছে এ নিয়ম। 
প্রয়োজনে সংবিধানের ছোটখাটো পরিবর্তন-পরিবর্ধন করার অনুমতিরও ইতিহাস রয়েছে, যাকে বলে অ্যামেডম্যান্ট। চার বছর পর পর নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তবে ১৮৬১ সালে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ বেঁধেছিল যে পরিস্থিতির কারণে, তার চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অনেক খারাপ। কিন্তু এ কথা কেউ সাহস করে বলছে না। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের উত্থান ও কৃষ্ণাঙ্গ-বিরোধিতা বেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে একটি অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে। গণতন্ত্রের আদর্শ বলতে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন, সংখ্যাগরিষ্ঠের অংশগ্রহণ এবং গরিষ্ঠ মানুষের কল্যাণ, যার মধ্যে দাসশ্রেণির এবং খেটে খাওয়া শ্রমজীবী শ্রমিক-কৃষক অন্তর্ভুক্ত, সেই আদর্শ ফিরে পাবে সবাই। তবে স্মরণ করা প্রয়োজন, দেড় শতাধিক বছর আগে আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন দাসপ্রথা বিলুপ্ত করায় ঘাতকের হাতে নিহত হয়েছিলেন।
১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তার গেটিসবার্গ ভাষণে বলেছিলেন, ‘সরকার জনগণের, জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা পরিচালিত।’ সে ভাষণের কথা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তত দিন, যত দিন সভ্যতা টিকে থাকবে।
তাই বলা যায়, যুদ্ধ যত গড়িয়েছে লিংকনের প্রাধান্যে তত পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে তিনি শুধু আমেরিকাকে একত্র করতে চাইলেও যখন তার কাছে সুযোগ এসেছে দাসদের মুক্ত করে এত দিনের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করার, তিনি তার সদ্ব্যবহার করেছেন। এই রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই তাকে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এবং জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে।
আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হিসেবে যা আজও অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংজ্ঞা বলে দেড় শতাধিক বছর ধরে গ্রাহ্য হয়ে এলেও অধুনা কেন যেন একশ্রেণির মানুষের দ্বারাই তা বিবর্ণ হতে শুরু করেছে। এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যখন কাকদের মধ্যেও গণতন্ত্রচর্চার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে, তখন প্রেসিডেন্ট লিংকনের সেই গণতন্ত্রের চেতনা আজ আমাদের দ্বারা নানাভাবে ভূলুণ্ঠিত এবং অবমূল্যায়িত হতে দেখা যাচ্ছে।
তা ছাড়া স্ট্যাচু অব লিবার্টি এখন স্বাধীনতা ও মুক্তির একটি আন্তর্জাতিক প্রতীকে পরিণত হয়েছে, যা গণতন্ত্রের সবচেয়ে পরিচিত নিদর্শন হয়ে উঠেছে। তামার তৈরি ৯৩ মিটার উঁচু এই মূর্তিটি ১৮৮৬ সালে ফ্রান্সের জনগণের পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়। মূর্তিটি আমেরিকার বিপ্লবের সময় প্রতিষ্ঠিত মিত্রতার স্মারক। ১৮৮৪ সালে ফ্রান্সে এই মূর্তি তৈরি করা হয়। এরপর মূর্তিটি কয়েক ভাগে আলাদা করে নিউইয়র্কে জাহাজে করে পাঠানো হয়, সেখানে মূর্তিটি আবার স্বরূপে সংযুক্ত করা হয়। ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর হাজার হাজার উল্লসিত দর্শকের সম্মুখে মূর্তিটি স্থাপন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যকার সম্পর্কে দুই দেশেরই স্বাধীনতা ও মুক্তির আদর্শের একটি প্রতীক দ্বারা সমৃদ্ধ করতে ১৮৮৬ সালের দিকে ফরাসি আইনের অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ ও লেখক এডওয়ার্ড দ্য লাবুলে মূর্তিটির পরিকল্পনা করেন। বিশাল আকারের শিল্পকর্মের জন্য খ্যাত শিল্পী ফ্রেদেরিক আগস্ট বার্থোন্ডিকে মূর্তিটি তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। একটি মানানসই স্থান নির্বাচনের জন্য বার্থোন্ডি যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা করেন এবং নিউইয়র্ক বন্দরের বেডলোপ আইল্যান্ডে (১৯৫৬ সালে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় লিবার্টি আইল্যান্ড) একটি ছোট দ্বীপে মূর্তিটির স্থাপনাস্থল হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
যেহেতু মূর্তিটি আমেরিকা ও ফ্রান্সের মধ্যকার একটি যৌথ উদ্যোগ ছিল, এ জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আমেরিকান মূর্তিটি ভিত্তিস্তম্ভ গড়ে তুলবে এবং ফ্রান্সের জনগণ মূর্তি ও তার সংযুক্তকরণের দায়িত্ব নেবে। ফ্রান্সে নগর সরকারগুলোর কাছ থেকে, মূর্তিটির ক্ষুদ্র প্রতিকৃতির বিক্রয়মূল্য থেকে, লটারি থেকে এবং ফ্রান্সের স্কুলের শিশু ও অন্যদের অনুদানের মাধ্যমে মূর্তিটির জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়। প্রায় ২০ লাখ ফ্রা (সে সময় প্রায় চার লাখ ডলার সমমান) সংগ্রহ করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ সংগ্রহ করাটা তুলনামূলক কঠিন ছিল। প্রকাশক জোসেফ পুলিৎজার এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন এবং অনুদানের জন্য তার পত্রিকা নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডে প্রচেষ্টা শুরু করেন। তিনি তার পত্রিকায় সব অনুদানকারীর নাম ছাপা শুরু করেন, এমনকি কয়েক পয়সা অনুদান দেওয়া স্কুলছাত্রদের নামও সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অনুদানদাতার তালিকা ১ লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়, যাদের মধ্যে অনেকেই ১ ডলারেরও কম প্রদান করেছিল। এভাবেই আমেরিকানরা মূর্তিটির ভিত্তিস্তম্ভের জন্য আড়াই লাখ ডলার অনুদান প্রদান করে। বার্থোন্ডি মূর্তিটি নির্মাণ করেন। মূর্তিটির পুরো নাম হলো ‘লিবার্টি এনলাইটনিং দ্য ওয়ার্ল্ড’। মূর্তিটি যে তামা থেকে তৈরি, তা পেটাতে পেটাতে ২.৪ মিলিমিটার পুরুত্বে নিয়ে আসা হয়। ফরাসি প্রকৌশলী আলেক্সান্ডার গুস্তাভ আইফেল (আইফেল টাওয়ারের ডিজাইনার) মূর্তিটির জন্য একটি অবকাঠামো তৈরি করেন। অবকাঠামোটি এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে মূর্তিটির তাম্রদেহটি আলাদাভাবেই নড়াচড়া করানো সত্ত্বেও তা সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম হবে। এ জন্যই মূর্তিটি বন্দরের বাতাসে দোল খেতেও সক্ষম।
লেডি লিবার্টি নামে পরিচিত মূর্তিটি এর ভিত্তিস্তম্ভের পাদদেশ থেকে এর হাতের মশালের মাথা পর্যন্ত ৯৩ মিটার উঁচু। মূর্তিটির গোড়ালি থেকে মাথা পর্যন্ত এর উচ্চতা ৩৪ মিটার। বছরের পর বছর প্যাটিনেশন নামক একধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য এর তামার রং সবুজ হয়ে উঠেছে। ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত করে গত বছরই (২০২২) মূর্তিটির ১০০তম বার্ষিকী পালন করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিজার্ভেশনের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা মূর্তিটির ভিত্তিস্তম্ভ ও মাথার তাজের ওপর উঠতে পারেন। স্ট্যাচু অব লিবার্টি ১৮৯২ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে কাছাকাছি অবস্থিত এলিস দ্বীপের ফেডারেল অভিবাসন স্টেশন থেকে আগত ১ কোটি ২০ লাখেরও অধিক অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানায়। পুরোনো অভিবাসন স্টেশনটিকে এখন একটি জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে।
কোথায় যেন পড়েছিলাম, কালো মানুষদের সবচেয়ে সুন্দর লাগে যখন তারা প্রতিবাদী হয়। যখন তারা রুখে দাঁড়ায়। যখন তারা ঐক্যবদ্ধ হয়। সৃষ্টিকর্তা যেন ওদের প্রতিবাদ করার জন্যই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল। ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ টাইম স্কয়ারে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম সেই কথা, যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষ, বেশির ভাগ হাইতিয়ান, আফ্রিকান। অন্যান্য দেশেরও আছে, সবার হাতে নিজ দেশের পতাকা। সবার হাত উত্তোলিত।
১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ছিল আমেরিকার অবিসংবাদিত নেতা কালো মানুষের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের জন্মদিন। পুরো আমেরিকায় তিনিই একমাত্র মানুষ, যার জন্মদিনে স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত সব বন্ধ থাকে। শত বছর ধরে চলে আসা বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে কালো মানুষদের যে আন্দোলন, সেটা যেন আজও থামেনি। থামবে কীভাবে? আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই যেন একজন প্রচণ্ড বর্ণবাদীÑসেটাই প্রমাণিত হলো আরেকবার।
কালো মানুষেরা কি চিরকাল অপমানিত হবেই? অশালীন উক্তির শিকার হবে? এই তো কয়েক বছর আগেই (ফেব্রুয়ারি ২০১৯) হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটরদের সঙ্গে এক বৈঠকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘মলদ্বার’ এর সঙ্গে তুলনা করেছেন হাইতি, এল সালভাদর ও আফ্রিকান দেশগুলোকে। তিনি যে শব্দটি ব্যবহার করেন, সেটা ছিল ‘শিটহোল’, যার সঠিক অনুবাদ করতে গিয়ে পৃথিবীব্যাপী সাংবাদিকেরা বিপদে পড়েছেন। তবে আক্ষরিক অর্থে এর মানে হলো মলদ্বার বা টয়লেট। শুধু নোংরা ভাষায় আক্রমণ নয়, ভবিষ্যতে এসব দেশ থেকে ইমিগ্র্যান্টদের আনার ব্যাপারেও আপত্তি জানিয়েছেন তিনি।
আরব্য উপন্যাসের ক্রীতদাসদের কথা বাঙালিদের কমবেশি জানা আছে। কারণ, যারা ক্রীতদাসের হাসি বা সহস্র আরব্য রজনীর গল্প পড়েছেন, তাদের ক্রীতদাস চরিত্র যে আরবের ইতিহাসে কত বিশাল স্থান দখল করে আছে, তা বলা বাহুল্য। ১৬১৯ সালে ইংরেজ বা ইংল্যান্ডের আমেরিকান কলোনিতে কালোদের আগমন শুরু হয়েছে। আর এই আগত ব্যক্তিরাই আমেরিকায় নেশন স্টেটের ভিত রচনা করেছে। সে ১৬১৯ সাল ইতিহাসে এতই মূল্যবান, তা বহু ইতিহাসবিদের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়। তবে আমেরিকায় কালোদের সংগ্রামের ইতিহাস বিশ্বে অন্যতম।
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, নুরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজ, সিলেট। পিএইচডি ফেলো, নিউইয়র্ক।
 
                           
                           
                            
                       
     
  
 

 
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                