Thikana News
১৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪


 
পশ্চিমারা হতাশ করেছে বিএনপিকে

বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো অবস্থানে রাশিয়া-ভারত-চীন

বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো অবস্থানে রাশিয়া-ভারত-চীন


নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও শক্তির পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। এ অবস্থার অবসানে জরুরিভাবে প্রয়োজন উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থাশীল সম্পর্ক, যা দৃশ্যত অসম্ভব বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তাদের বিশ্বাস, দেশের মানুষ ভোট দিতে পারলে, পছন্দের প্রার্থীদের বেছে নেওয়ার সুযোগ পেরে সরকারি দল আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ঘটবে। তাদের মতে, সরকারি দল উন্নয়নের ঢাকঢোল মহা ধুমধামের সঙ্গে পেটালেও দেশের মানুষের মনে পুনরায় স্থান করে নিতে পারবে না। তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থা, সুশাসনের অভাব, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতা, সরকারি দলের কর্মীদের বেপরোয়া আচরণ মানুষের মন বিষিয়ে তুলেছে। এ অবস্থার সুযোগ নিতে চায় বিরোধীরা। এ জন্য অপরিহার্যভাবে প্রয়োজন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করতে পারেন।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা গভীরভাবে আস্থাশীল, কল্যাণ, শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নয়নকামী দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচন করবে। গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে এই সরকার নানা অভ্যন্তরীণ, আন্তর্জাতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের অবকাঠামোগত, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটিয়েছে, দেশবাসী তা চলমান দেখতে চান।
বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় এবং বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা করেছে। বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোর কথা উল্লেখ করে বিএনপি মনে করে সরকার আসন্ন নির্বাচনেও অতীতের পুনরাবৃত্তিই ঘটাবে। তবে এবার নানামুখী চাপের কারণে কৌশল কিছুটা পাল্টাবে। বিএনপি সব দল ও ব্যাপক সংখ্যক ভোটারের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযোগী পরিবেশ চায়। তাদের মতে, তার অপরিহার্য পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। একমাত্র এ ধরনের সরকারের পক্ষেই প্রত্যাশিত সেই নির্বাচনী পরিবেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে তারা মনে করে।
পক্ষান্তরে সরকারি দল মনে করে, যে ধরনের সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলে বিএনপির জয়লাভ নিশ্চিত হবে হবে বলে তারা আস্থাশীল, বিএনপি সেই সরকার এবং তাদের অধীনেই নির্বাচন চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সব রকম প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করছে না বিএনপি।
এ অবস্থায় আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ একরকম অনিশ্চিত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকা প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে কাছাকাছি অবস্থানে আনা স্পষ্টতই সম্ভব নয়। বিদেশিদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ কিছুদিন থেকেই বাংলাদেশের চলমান উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য রাষ্ট্রের চেয়ে অধিক মাত্রায় আগ্রহী। গত কয়েক বছর যাবৎই তারা বিভিন্ন প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে তাদের পক্ষে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে আসছে। শেখ হাসিনা ও তার সরকার মার্কিনবিরোধী নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উন্নত সম্পর্ক ও বজায় রেখেই দেশের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে চায় সরকার। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বা ছোট করে বিদেশি স্বার্থরক্ষা করতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধ মূলত এখানেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ব্যবহার করতে চায়। তারা ১০০ বছরের জন্য এই দ্বীপ লিজ নিতে আগ্রহী। এখানে আমেরিকান যুদ্ধজাহাজ, মেরিন সেনারা অবস্থান করবেন। বাংলাদেশ এতে সম্মত নয়। বিএনপির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নমনীয় হওয়ার কারণ কি কেবল বর্তমান সরকার কর্তৃক তাদের দাবি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনা। তারেক রহমান ও তার নেতৃত্বাধীন বিএনপি কি মার্কিন দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন?
অন্যদিকে রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ব্যাপারে নাক না গলানোর পরামর্শ দিয়েছে। বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন কীভাবে হবে, তা দেশটির সংবিধানেই সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে।
কূটনেতিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, পশ্চিমাদের ভাষ্য অনুযায়ী গত দুই সংসদ নির্বাচন গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা কোনো কথাই বলেনি কেন? হঠাৎ করে এখন কী বিশেষ কারণে, স্বার্থে সোচ্চার হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল সরকারি দলসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলেছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে, পর্যবেক্ষণ করে তারা সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে। তবে পশ্চিমাদের যাবতীয় তৎপরতায় বিচলিত নয় সরকার। তারা জোরালোভাবেই বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার হবে নিতান্ত রুটিনমাফিক। নির্বাচন কমিশনকে সব রকম সহায়তা করা হবে এ সরকারের দায়িত্ব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির মাধ্যমে দুই পক্ষকে এক টেবিলে বসানোর চেষ্টা করছে। সরকারের কঠোর অবস্থান দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্টদের হতাশ করছে। তার পরও সরকারের উচ্চতর মহল একটা সম্মানজনক সমঝোতার পক্ষে। আনুষ্ঠানিক আলোচনায় না বসেও নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্তসাপেক্ষে সরকার এ ছাড় দেবে। নির্বাচন প্রশ্নে পশ্চিমাদের এমন উদ্যোগ বিএনপিকে হতাশ করেছে।

কমেন্ট বক্স