পদযাত্রা বনাম শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজপথে মুখোমুখি বিএনপি-আওয়ামী লীগ। ১৮ জুলাই ঢাকাসহ সারা দেশে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে সজীব নামে কৃষক দলের এক নেতা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বহু। আহত সহস্রাধিক। বিএনপির দাবি, হামলার শিকার ও গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দলটির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। পুলিশের গুলি ও টিয়ারশেলে বগুড়ায় বিএনপির নেতাকর্মী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক। ঢাকার মিরপুরে পদযাত্রায় হামলায় বিএনপি ও ছাত্রলীগের সঙ্গে প্রায় আধঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। খাগড়াছড়িতে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শতাধিক। কিশোরগঞ্জে গুলিবিদ্ধসহ বহু লোক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফেনীতে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে দুই শতাধিক আহত হন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সংঘাতের দৃশ্যপটে জনমনে ভয়াবহ আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ময়মনসিংহে পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে অতিরিক্ত তাপদাহে (হিটস্ট্রোকে) দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সরকারের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তাদের মধ্য থেকেও মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ডিসেম্বর থেকেই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিএনপি। এত দিন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও গত ১২ জুলাই সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সমমনা দল ও জোটকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। একই দিন সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ পাল্টা এক দফা ঘোষণা করে, ‘শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে’। ১৮ জুলাই ঢাকাসহ দেশের জেলা ও মহানগরে পদযাত্রা করে বিএনপি। একই সময় ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিতে ওইদিন সকাল ১০টায় গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বিভিন্ন রুট ঘুরে বিএনপির পদযাত্রা পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে পৌঁছায়। সেখানে বিকাল চারটায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে বেলা তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে শান্তি সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন দল। দুই ঘণ্টা শোভাযাত্রা করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত যায় আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজের দাবি আদায়ে অনড়। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। এবার সরকারবিরোধীদের টার্গেট ঢাকা। গত ডিসেম্বর থেকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে গরম হাওয়া বইলেও এবার সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার কিছুটা লক্ষ করা গেল সরকার পতনে বিএনপির এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচির প্রথম দিনেই। সামনের দিনগুলোতে দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে আরও বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ। এ জন্য দেশবাসী ভীষণ উদ্বিগ্ন। তারা রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইছেন। দুই দলের কর্মসূচি নিয়ে শীর্ষ নেতাদের উগ্র বক্তব্যেও মানুষ ভীত, শঙ্কিত।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পদযাত্রা নয় এটা বিএনপির জয়যাত্রা, দাবি একটাই অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। ৩৬ দলের একটাই ঘোষণা, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারকে দেশের মানুষ দেখতে চায় না। অবৈধ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির পদযাত্রাকে তারা ‘বিজয়যাত্রা শুরু’ দাবি করলেও তাকে ‘পতনযাত্রা’ বলছি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তিনি কী বলেছেন? পদযাত্রা, জনযাত্রা, বিজয়যাত্রা। আসলে পদযাত্রা নয়, পরাজয়যাত্রা। পদযাত্রা পতনযাত্রা শুরু হয়ে গেছে।’