সরকারের ব্যয় কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই কৃচ্ছ্রতা সাধনের আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু সেই আহ্বান কোনো কাজে আসছে না। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসে, সুদুর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আড়াই মাস পরে সাড়ম্বরে বাংলা বর্ষবরণের একটি অনুষ্ঠান করায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
১৪ এপ্রিল রোববার ছিল বাংলা নববর্ষ। ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। কিন্তু এদিন কোনো অনুষ্ঠান করেনি স্থায়ী মিশন। বিদেশের মাটিতে বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য বাংলা নববর্ষ উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেখতে দেখতে কেটে গেছে আড়াই মাস। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক সুযোগ ছিল অনুষ্ঠান করার। কিন্তু কেন নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান না করে আড়াই মাস করা হলো তা নিয়ে কমিউনিটিতে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী কৃচ্ছ্রতা সাধনের আহ্বানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় দেখানো হচ্ছে।
একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে বিভিন্ন কল্যাণ তহবিলের নামে কয়েক মিলিয়ন ডলার অলস পড়ে আছে। বরং এই তহবিল বেড়েই চলেছে। এসব অর্থ কখনো রাষ্ট্রীয় কোষাগারেও জমা করার সুযোগ নেই। তবে সরকারি নিরীক্ষণ বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়াতে এসব অর্থ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খরচ করা হয়। তবে সূত্রটি বলছে, বাংলাদেশের জাতীয় দিবস বা অন্যান্য অনুষ্ঠান পালনের ব্যয় সরকারি অর্থ থেকে ব্যয় করা হয়। আড়াই মাস পর কেন বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করা হলো এ বিষয়ে জানতে স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিতের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে, স্থায়ী মিশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থায়ী মিশনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও কূনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এবারো বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও কূনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের ব্যস্ততার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে এর আগে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২ জুলাই বুধবার উৎসবমুখর পরিবেশে জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ ও তাঁদের স্পাউজগণের অংশগ্রহণে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়। মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত এই আনন্দঘন অনুষ্ঠান উপলক্ষে মিলনায়তনকে আবহমান বাঙালির সংস্কৃতির নানা উপাদানে সাজিয়ে তোলা হয়। ঢাক-ঢোল-একতারা, পালতোলা নৌকা, ডালা-কুলা, তালপাতার পাখা, নকশী কাঁথা, মাটির পুতুল, মাটির থালা-বাসন, কাঁচের চুড়ি, আলপনা ও নানা-বর্ণের ব্যানার-ফ্যাস্টুন-বেলুনে বর্ণিল হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের স্থায়ী মিশনসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধি, কনসাল জেনারেল, সিনিয়র কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও তাঁদের স্পাউজগণ এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিতের সহধর্মিনী রুবি পারভিন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিদেশি অতিথিদের সামনে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরবণ তুলে ধরেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নাচ, গান ও আবৃত্তির সমন্বয়ে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ। নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর শিল্পীবৃন্দ এবং স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষে অতিথিবৃন্দকে পিঠা-পুলি, নাড়ু, মুড়ি-মুড়কি, সাজ-বাতাসা, পায়েস, চটপটি, ফুচকা, মিষ্টিসহ নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারে আপ্যায়ন করা হয়।