Thikana News
২২ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

ফোবানায় বিভক্তি সুবিধায় আপস 

 লেবার ডে উইকেন্ডে পৃথক ৫ সম্মেলন  নেতৃত্বে একই মুখ  নামেই সভা-সেমিনার  পোস্টারজুড়ে কেবল শিল্পীদের ছবি
ফোবানায় বিভক্তি সুবিধায় আপস 
উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের স্বদেশ-সংস্কৃতির আলোকে ঐক্যবদ্ধ রেখে নতুন প্রজন্মে বাঙালিত্ব প্রবাহিত করা এবং মূলধারায় জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সংকল্পে যে আলোকিত ফোবানার যাত্রা শুরু হয়েছিল, অনৈক্যের কারণে তা এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত। প্রতিবারই আশার আলো দেখা যায়, ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলন হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর হয় না। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর নেতৃত্বের কোন্দলে ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো বিভক্ত হয়ে যায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা)। গত তিন দশকে বিভক্ত ফোবানার ব্যানারে পৃথক অনুষ্ঠান হচ্ছে।
অথচ, ফোবানা নিয়ে যারা বিভক্ত, তারা নানা কারণে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ঐক্যবদ্ধ। এক টেবিলে বসছেন, খোশগল্প করছেন। একসাথে অনুষ্ঠানে অতিথি হচ্ছেন। একজনের বাড়িতে আরেকজন দাওয়াত খাচ্ছেন। পার্টি করছেন। কিন্তু ফোবানায় তারা আপসহীন। তাদের মধ্যে এমনটি কেন হচ্ছে, সেই সদুত্তর কেউ দিতে পারছেন না। শুধু ফোবানা সম্মেলন শুরুর আগে তারা জোর গলায় বলে থাকেন, আমরা এক হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু যেসব শর্ত দেওয়া হয় ঐক্যের, তা সালিশ মানি, কিন্তু ‘তালগাছটা আমার’ প্রবাদ বাক্যের মতই।
বিভক্তির ফোবানা শুধু গুরুত্ব হারায়নি, অনুষ্ঠানের মানও অনেক নিচে নেমে গেছে। আগে ফোবানা সম্মেলনে দেশ-বিদেশের বিশিষ্টজনেরা যোগ দিতেন। তাদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভা সেমিনার হতো। প্রবাসীরা তাদের কথা মন দিয়ে শুনতেন। বহির্বিশ্বের ফোবানার কদর ছিল। কিন্তু এখন ফোবানা সম্মেলনে সভা-সেমিনার হয়। তাতে উপস্থিতি থাকে হতাশাজনক। তবে বিনোদন থাকে প্রচুর। দেশ ও প্রবাস থেকে শিল্পী আনার প্রতিযোগিতা হয়।  কোন ফোবানা সম্মেলনে কত বড় শিল্পী আসছে এটাই এখন মানদণ্ড। এমনকী ফোবানার পোস্টারই হয় শিল্পীদের বড় বড় ছবি দিয়ে। এ নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নানান কথা হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
ফোবানার নেতৃত্বেও বার বার একই মুখ দেখা যায়। নেতৃত্বের কোন্দলেই মুলতঃ ফোবানা ভাঙছে। প্রতি বছর ফোবানা সম্মেলনে একটি করে নতুন বিভক্তির সূচনা হয়। গত তিন দশকে এমনটিই দেখছেন প্রবাসীরা।
কী লাভ ফোবানায়? নেতৃত্বের কোন্দল দেখে মনে হয়, ফোবানা করলে অনেক লাভ। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এখনকার ফোবানার খরচই ওঠে না। ফোবানা সম্মেলন সবসময় ব্যয়বহুল ছিল। এখনো ব্যয়বহুল। কিন্তু পকেটের অর্থ খরচ করে হলেও ফোবানা করতে হবে। এটা অনেকটা সামাজিক স্ট্যাটাস ধরে রাখার মত। অনেকে বলছেন, ফোবানা যারা করেন, তাদের অনেকে ইগোতে ভোগেন। আর এর কারণে তারা অর্থ ও সময় অপচয়, কোনো কিছুকেই প্রাধান্য দেন না।   
সাধারণ প্রবাসীরা বলছেন, সঙ্কট আছে, সঙ্কট থাকলে তার সমাধানও আছে। কিন্তু সমাধান নেই শুধু ফোবানা সঙ্কটের। প্রতিবছর ফোবানায় ভাঙন ধরে। আর এই ভাঙনে টুকরো-টুকরো হচ্ছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। কারো কোনো প্রচেষ্টাই কাজে লাগছে না। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এমন একজন ব্যক্তিও আর অবশিষ্ট নেই, যিনি ফোবানার বিভেদ বা বিভক্তি দূর করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, যার কথায় সবাই বিভেদ বা অনৈক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলন করবেন। এমনটি আশাও কেউ এখন আর করেন না।
প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির ঐক্য ও সংহতির প্রতীক ছিল ফোবানা। কিন্তু এখন ফোবানা মানেই ভাঙন। নেতৃত্বের কোন্দলে ভাঙতে ভাঙতে কথিত ঐক্যের আহ্বানে গড়া ফোবানা এখন পাঁচ ভাগ হয়ে গেছে। সর্বশেষ গত বছরের ২০ মে শনিবার ভাগ হয়েছে গিয়াস আহমেদ ও শাহনেওয়াজের নেতৃত্বাধীন ফোবানা। একসময়ের একে-অপরের ঘনিষ্ঠ এই দুই কমিউনিটি লিডারের সম্পর্ক এখন দা-কুমড়োর। শুধু গিয়াস আহমেদ বা শাহনেওয়াজের সম্পর্ক নয়, একসময় ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কিন্তু ফোবানার কারণে একে অপরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের মধ্যেই। তবুও শাহনেওয়াজের নেতৃত্বাধীন ফোবানার এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি কাজী আজম ঠিকানাকে বলেন, গিয়াস আহমেদের সঙ্গে আমাদের একটা সমঝোতা হতে পারে। ইতিমধ্যে তাদের কয়েকজন আমাদের সাথে পুনরায় যোগ দিয়েছেন।
এখানে উল্লেখ্য, শাহনেওয়াজ ও কাজী আজমের নেতৃত্বাধীন ফোবানার সম্মেলন মেরিল্যান্ডের হিলটন হোটেলে। অন্যদিকে গিয়াস আহমেদ ফোবানা সম্মেলন করছেন লাগোয়াডিয়া এয়ারপোর্ট ম্যারিয়ট হোটেলে।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর ও আবীর আলমগীরের নেতৃত্বাধীন ফোবানা সম্মেলন হবে ভার্জিনিয়ায়। তাদের প্রতিপক্ষ আতিকুর রহমান ও ড. রফিক খানের নেতৃত্বাধীন ফোবানা সম্মেলন হবে মিমিগানের ডেট্রয়েটে। এই দুটি পক্ষ উভয়েই নিজেদের আসল ফোবানা দাবি করে আসছেন। তবে আবীর আলমগীর ৯ জুলাই মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছেন, তারাই আসল ফোবানা। তবে প্রতিপক্ষের সাথে যাতে মামলা মোকদ্দমা না হয় এজন্য দুপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।তিনি বলেন এবার ৩০টি শহরের প্রায় ৮০টি সুনামধন্য সংগঠন রেজিস্ট্রেশন করেছেন,যা ফোবানার ইতিহাসে বিরল।
এদিকে ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলন করার প্রয়াসে অনেকেই বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু কারো চেষ্টাই কাজে আসেনি। আর এখন যতগুলো ফোবানা হয়েছে তাতে কেউ না কেউ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এমন কেউ অবশিষ্ট নেই, অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি খুুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগ নেবেন। আবার কেউ উদ্যোগ নিলে তার কথা সবাই শুনবেন, এমন ব্যক্তিও বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দেখা যাচ্ছে না।
ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া বাংলাদেশি কমিউনিটির একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ঠিকানাকে জানান, আমাকে একবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তখন মাত্র বিভক্ত হয়েছে ফোবানা। আমি ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ কথা শোনেননি। সেই যে বিভক্তির ধারা, তা এখনো বহমান। এখন প্রতিবছর একটি করে বিভক্তির ‘বাচ্চা প্রসব’ করে ফোবানা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, একসময় ফোবানা নিয়ে গর্ব করতাম। আর এখন বলতে লজ্জাবোধ হয়। একসময় আমরাই ফোবানা প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন ফোবানা ভাঙলো, নাকি ভেস্তে গেল, তাতে কিছুই আসে যায় না। ফোবানার মধ্যে কিছু দুষ্ট রাজনৈতিক প্রভাবিত চক্র ড়ুকেছে।
ফোবানাকে এক করার আর সুযোগ আছে কী না জানতে চাইলে এই প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, এখন কয়টা ফোবানাকে এক করবো। এখন তো ঘরে ঘরে ফোবানা। প্রকৃত অর্থে ফোবানায় কিছু দুষ্টু লোক ঢুকে পড়েছে। তাদের কব্জা থেকে ফোবানাকে বের করে আনা কঠিন। এই দুষ্টু লোকগুলো নিজেদের অনেক বড় কিছু মনে করেন। ফলে ফোবানা মানেই এখন বিভক্তি, উল্লেখ করেন ওই নেতা।

কমেন্ট বক্স