একাত্তরের মহান সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, টাঙ্গাইলের প্রখ্যাত কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান ছিলেন কাদের সিদ্দিকী। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কাদের সিদ্দিকীই ছিলেন একমাত্র অসামরিক ব্যক্তি। কাদের সিদ্দিকী, তার কাদেরিয়া বাহিনীর নামে তটস্থ থাকত হানাদার পাক বাহিনী। টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা, জনতার কাছে কাদের সিদ্দিকী ছিলেন রীতিমতো এক পূজনীয় নাম। সময়ের বিবর্তনে সেই কাদের সিদ্দিকী এখন তার জন্মভূমি টাঙ্গাইলের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকাসহ গোটা জেলায়ই আগের অবস্থায় নেই। রাজনৈতিকভাবে তিনি প্রায় নিঃস্ব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগে ফিরে যাওয়া এবং নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার আকাঙ্খা ছিল তার। বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে অর্থাৎ অধিকসংখ্যক দলের অংশগ্রহণ দেখানোর জন্য কাদের সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগে না নিয়ে তার নিজ দল থেকেই নির্বাচন করতে বলা হয়। নির্বাচনে কোনো রকম দুর্নীতি, অনিয়মের ঘটনা ঘটবে না মর্মে শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। কাদের সিদ্দিকী নিজেও জালিয়াতি, ভোটকেন্দ্র দখল, অনিয়মের অভিযোগ করেননি। নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত হয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হন। নির্বাচনে অভাবনীয় এই ফলাফলে তিনি বিস্মিত ও ব্যথিত হন। রাজনীতিতে, নির্বাচনে কেন জাতীয়ভাবে সম্মানিত এই ব্যক্তির চরম বিপর্যয় ঘটল? কেবল তারই নয়, তার ছোট ভাই শামীম সিদ্দিকী ও বড় ভাই সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর নির্বাচনী ফলও ভালো হয়নি। শামীম সিদ্দিকীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তাদের বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, কাদের সিদ্দিকীর এই অভাবনীয় ভরাডুবির কারণ প্রধানত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক। মুক্তিযুদ্ধকালে ও স্বাধীনতার পরও কাদের সিদ্দিকী যে বিশাল সম্মান ও মর্যাদার আসনে ছিলেন সময়ের বিবর্তনে সেই সুখ্যাতি আর ধরে রাখতে পারেননি।