বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। ডিসেম্বরে কাউন্সিল নির্ধারিত থাকলেও কাউন্সিলের আগেই অধিকাংশ পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। এর মধ্যে যার প্রতিফলন লক্ষণীয়ভাবে পরিদৃষ্ট হচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনির্বাচিত ৪৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া, ছাত্রদলের আড়াই শতাধিক সদস্যের কমিটিসহ আরও কিছু পরিবর্তন, নিয়োগদানের ঘটনা নজিরবিহীন। বিএনপির একাধিক নেতৃস্থানীয় সূত্রে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে, ডিসেম্বরে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা কম। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে ক্ষুদ্র আকারে নামমাত্র নিয়মরক্ষার কাউন্সিল করতেই হবে। এক যুগেরও বেশি সময় বিএনপির কাউন্সিল হচ্ছে না। অথচ তিন বছর অন্তর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ঢাকাসহ অন্যান্য মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনয়ন পর্যায়েও সম্মেলন হচ্ছে না। বছরের পর বছর অনির্বাচিত নেতৃত্ব দ্বারা দল পরিচালিত হচ্ছে। কাউন্সিল না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব আসছে না, দ্বন্দ্ব বিরোধ বেড়েছে। দলীয় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে আছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও নেই। লাগাতার প্রায় ২০ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে, সরকার ও সরকারি দলের চাপ মোকাবিলা করে টিকে থাকলেও নির্জীব, নিস্পৃহ হয়ে পড়েছেন মাঠের কর্মীরা। সরকার উৎখাতের আন্দোলনে শোচনীয় ব্যর্থতার পর বিএনপির নেতারা এখন আর সরকার অপসারণের এক দফার আন্দোলনের কথা মুখেও আনেন না। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের হুংকার দিয়ে যাচ্ছেন। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা করতে পারস্পরিক আলোচনাও প্রায় শেষ করে এনেছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, দলের কর্মীদের নিস্পৃহতা কাটিয়ে সজাগ, সক্রিয় আন্দোলনমুখী করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাঠের নেতাকর্মীদের ধরে রাখা, বিশেষ করে তাদের দলছুট হওয়া থেকে বিরত রাখাই মুখ্য উদ্দেশ্য। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়ে এবং তিন শতাধিক নেতাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরও তাদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি তাদের এই প্রকাশ্য অনাস্থা সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। বিএনপি একসময় রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকলেও সেই সক্ষমতা বিএনপির যে নেই, তা এরই মধ্যে দলটির নেতারা প্রমাণ করেছেন। জনসাধারণের এই ভাবনা, বিশ^াসে পরিবর্তন ঘটাতে হবে বিএনপিকেই। একটি ক্ষমতাপ্রত্যাশী এবং দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা দলের জন্য ওই অবস্থাটা নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক।
এই করুণ অবস্থা থেকে দলকে টেনে তোলার উদ্দেশ্যেই কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হবে। এরই অংশ হিসেবে কাউন্সিলরদের মতামত ছাড়াই লন্ডনে অবস্থানরত শীর্ষ নেতার নির্দেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অগণতান্ত্রিক এই প্রক্রিয়া কোনো গণতান্ত্রিক দলের জন্য নিশ্চয় প্রত্যাশিত নয়। কাউন্সিল না হলেও স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি, জেলা, উপজেলা কমিটি, অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই কমিটি বিলোপ, নতুন অনির্বাচিত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু করা হয়েছে। মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনাকারীদের নানামুখী প্রচেষ্টাও থেমে নেই। আবার বিএনপির অনেক বর্ষীয়ান, অভিজ্ঞ নেতা মনে করেন, দলের প্রয়োজনেই মির্জা ফখরুলের বিকল্প সন্ধান আপাতত আর না-ও করা হতে পারে। প্রশ্ন উঠেছে, ডিসেম্বরে কাউন্সিল অনুষ্ঠান আদৌ সম্ভব কি না। কাউন্সিল আরও পাঁচ থেকে ছয় মাস পিছিয়ে নেওয়া হতে পারে। নামেমাত্র কাউন্সিল হলেও দলকে এর মাধ্যমে শক্তিশালী জনভিত দেওয়া কি আদৌ সম্ভব!




