৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার, যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮তম স্বাধীনতা দিবস। এদিন দেশজুড়ে দেশের জন্য, স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আত্মাহুতি দেয়া লোকজনকে শ্রদ্ধা জানাবেন আমেরিকানরা। মেতে উঠবেন আতশবাজির খেলায়।
প্রতিবছরের মতো এবারও নিউইয়র্কে বিখ্যাত মেসিস ফায়ারওয়ার্ক শো অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য বিশ্বের পর্যটকদের ভিড় থাকে। এবছর ১০ হাজার ফ্রি টিকিট দেয়া হচ্ছে শো দেখার জন্য। এছাড়াও ওয়াশিংটন ডিসি, বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, সান ডিয়েগো, হিউস্টন, ফোর্ট লাওডেরড্যাল, আটলান্টিক সিটি, পোর্টল্যান্ড, সেন্ট লুইসসহ বিভিন্ন স্থানে আতশবাজিতে রঙিন হয়ে উঠবে প্রকৃতি।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ রাজ্য ও নগর প্রধানরা বাণী দেবেন।
১৭৭৬ সালের ২ জুলাই ইংল্যান্ডের শাসন থেকে পৃথক হওয়ার জন্য ভোট দেন আমেরিকার দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস। এর দু’দিন পর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় কংগ্রেস। তাই প্রত্যেক বছর ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়।
ইতিহাসে রয়েছেÑ দিনটির জন্য জীবন দেন ২৫ হাজার বিপ্লবী আমেরিকান এবং ২৭ হাজার ব্রিটিশ ও জার্মান সেনা।
উল্লেখ্য যে, ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর পাঁচজনের একটি কমিটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করে। টমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন এ কমিটির অন্যতম সদস্য। টমাস জেফারসন ছিলেন মূল লেখক। ঘোষণাপত্রটি কংগ্রেসের অনুমোদন পায় ৪ জুলাই ১৭৭৬ সালে। ‘প্রতিটি মানুষই সমান এবং একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি’এ বাণীকে সামনে রেখে থমাস জেফারসন লিখেছিলেন স্বাধীনতার বাণী।
বাকস্বাধীনতা, প্রকাশনার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, আইন পরিবর্তনের জন্যও সরকারের কাছে আবেদন করার স্বাধীনতা সবার, আমেরিকায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের। নিজেকে প্রকাশ করার স্বাধীনতাকে উদযাপন করে আমেরিকানরা। স্বাধীনতা দিবসে দেশের জন্য আত্মত্যাগ করা বীরদের স্মরণ করা হয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে। লম্বা সপ্তাহান্তে এক রাজ্য থেকে অন্যরাজ্যে ছুটে গিয়ে আনন্দ উদযাপনের সময় ফোর্থ জুলাই সপ্তাহান্ত। আতশবাজির ফোয়ারায় রঙ্গিন হয়ে ওঠে নগর জনপদ।
মেসিস ফায়ারওয়ার্ক শো দেখতে ১০ হাজার টিকিট ফ্রি দিচ্ছে নিউইয়র্ক : ফোর্থ জুলাই উপলক্ষে প্রতিবছর নানা আয়োজন করে থাকে নিউইয়র্ক সিটি। এবারও তার ব্যাতিক্রম নয়। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। মেসিস ফায়ারওয়ার্কস, হাডসন আর ইস্ট রিভারের পাড়ের আতশবাজি, আলোর ফোয়ারা প্রদর্শনী, কুচকাওয়াজ, কনসার্ট, কার্নিভাল, সভা, সেমিনারসহ নানা আয়োজন।
এদিকে স্বাধীনতা দিবসের উৎসবের আমেজ আরো বাড়িয়ে দিতে পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত মেসিস ফায়ার ওয়ার্ক বা আতশবাজি দেখার জন্য ১০ হাজার বিনামূল্যের টিকিট দিচ্ছে নিউেইয়র্ক সিটি প্রশাসন।
গত ২৫ জুন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস। ২০১৩ সাল থেকে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম মেসিস ফায়ার ওয়ার্ক হাডসন নদীর ধার থেকে শুরু হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে মেয়র অ্যাডামস বলেন, আমরা জানি নিউইয়র্কবাসী মেসিস ফায়ারওয়ার্কসে অংশ নিতে সক্ষম হবেন। এরপরেও ১০ হাজার ফ্রি টিকিট দেয়া হচ্ছে, যারা সামনের সারিতে বসে শো উপভোগ করতে পারবেন। সবাই যাতে চমৎকার এই আয়োজনে অংশ নিতে পারেন, আমরা সেই ব্যবস্থা করছি।
হাডসন রিভার পার্ক ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও নওরীন ডয়েল বলেন, নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দারা যাতে নিরাপদে এ বছরের মেসিস ফায়ারওয়ার্কস উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য সিটি প্রশাসন সর্বোচ্চ কাজ করেছে।
তিনি বলেন, নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, ফায়ার ডিপার্টমেন্ট এবং অন্যান্য অনেক সংস্থা এ আয়োজনের পরিকল্পনায় সহায়তা করে আসছেন। আমরা হাজার হাজার লোকের সাথে দিনটি উদযাপন করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।
মেয়র অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন সকাল ১০টা থেকে www.nycjuly4.com-এ বিনামূল্যের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। যারা আগে আসবেন, তাদেরই এ টিকিট দেয়া হবে। একজন ব্যক্তি কেবল ২টি টিকিট পাবেন।
টিকিটগুলো ম্যানহাটনের পিয়ার ৪৫ এবং পিয়ার ৮৪-এ দেখার জায়গাগুলোতে প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে। যারা টিকিট পাবেন না, তাদের জন্য পশ্চিম পাশের হাইওয়েজুড়ে আতশবাজি দেখার সুযোগ থাকবে।
অনুষ্ঠানে যা থাকছে : এবারের মেসিস ফায়ার ওয়ার্কের থিম হলো ‘সামারস গ্রেটেস্ট হিটস।’ অনুষ্ঠানে ২৫ মিনিট বিভিন্ন শিল্পীর পরিবেশনা থাকবে। যা সাজিয়োছন গ্র্যামি পুরস্কার বিজয়ী জেসন হাওল্যান্ড। এছাড়া ব্র্যান্ডি ক্লার্ক, মিকি গাইটন এবং অ্যাম্বার ক্লার্কও এ আয়োজনে অংশ নেবেন।
লাইটশো শুরু হওয়ার আগে, ট্যানার অ্যাডেল, লুইস ফনসি, দ্য ওয়ার অ্যান্ড ট্রিটি এবং লাইনি উইলসনের পারফরম্যান্সে দর্শকরা অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন।
সাধারণ জনগণের জন্য প্রবেশের পয়েন্টগুলো হলো : ক্রিস্টোফার স্ট্রিট এবং ওয়াশিংটন স্ট্রিট; পশ্চিম ১১তম স্ট্রিট এবং ওয়াশিংটন স্ট্রিট; পশ্চিম ১২তম স্ট্রিট এবং ওয়াশিংটন স্ট্রিট; পশ্চিম ২৯তম রাস্তা এবং ১১তম অ্যাভিনিউ ও পশ্চিম ৪০তম রাস্তা এবং ১১তম অ্যাভিনিউ।


ঠিকানা রিপোর্ট


